দেশের প্রথিতযশা হাফেজরা বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করে বাংলাদেশের সুনাম ও সুখ্যাতি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিচ্ছেন। আন্তর্জাতিকভাবে কৃতৃত্ব অর্জনকারী হাফেজদের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হলে দেশে-বিদেশে ইসলাম মুসলমান ও দেশের জন্য আরও কল্যাণ বয়ে আনবেন। খ্যাতিমান আলেম ও প্রখ্যাত হাফেজদের যথযথ পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। দেশের শীর্ষ পর্যায়ের ওলামায়ে কেরাম ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে এসব কথা বলেন।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব শায়খুল হাদিস হাফেজ মাওলানা ড. গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম বহির্বিশ্বে সুখ্যাতি অর্জনকারী হাফেজ ও বিজ্ঞ আলেমদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে গতকাল বলেন, যুগে যুগে যারাই কোরআনুল কারিমের পূর্ণ মর্যাদা প্রদান করেছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদেরকে সম্মান ও মর্যাদা উচ্চতার শিখরে পৌঁছে দিয়েছেন। কোরআনের যথাযোগ্য মর্যাদায় না দিয়ে কোন মুসলমান সম্মানিত হতে পারবে না। এটাই বাস্তবতা ও এটাই চরম সত্য।
তিনি বলেন, আল্লাহর অশেষ দয়ায় আমাদের এ ক্ষুদ্র বাংলাদেশে হাজার হাজার দক্ষ হাফেজে কোরআন তৈরি হচ্ছেন। প্রতিদিন রাতের শেষ প্রহরে তাদের তেলাওয়াতের বরকতের ফলে আমরা আল্লাহপাকের অসংখ্য রহমত ও নেয়ামত উপভোগ করছি। সরকারের যথযথা ব্যবস্থা গ্রহণ এবং হাফেজদের মুখে পবিত্র কোরআনের তেলাওয়াত ও হক্কানী আলেম ওলামাগণের চোখের পানির বদৌলতে আল্লাহপাক করোনা মহামারির সংক্রমণ থেকে আমাদের দেশকে রক্ষা করছেন। তিনি বলেন, কোরআনের হাফেজদের যেভাবে মূল্যায়ন করা দরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে হোক বা সামাজিকভাবে হোক, কোনোভাবেই আমরা করছি না।
তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশের হাফেজরা বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করে বাংলাদেশের সুনাম ও সুখ্যাতি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছেন। আমরা বিশ্বাস করি, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে তাদের পূর্ণ পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হলে হাফেজগণ দেশে-বিদেশে ইসলাম, মুসলমান ও দেশের জন্য আরও কল্যাণ বয়ে আনবেন।
জাতীয় ইমাম সমাজ বাংলাদেশ এর সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সেগুনবাগিচা জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুল কাইয়ূম সুবহানী ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে বলেন, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা আজ স্বীকৃত সত্য। লাল সবুজের এই উজ্জ্বল্য দ্যুতি ছড়ানোয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য অবদানকে সাধুবাদ জানাই। তার নিরন্তর প্রচেষ্টায় বিশ্বমানচিত্রে বাংলাদেশ আজ স্বদর্পে দ্যোদীপ্যমান। তার মরহুম পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন কোরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে বিগত কয়েক বছর যাবৎ হাফেজরা অংশগ্রহণ করে কৃতৃত্বের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ ফেব্রæয়ারি ইরানে অনুষ্ঠিত ৩৮তম আন্তর্জাতিক হেফজ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের ক্ষুদে প্রতিযোগী সালেহ আহমদ তাকরিম প্রথম স্থান অর্জন করে দেশের সম্মান ঈর্ষণীয় উচ্চতায় নিয়ে গেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আল্লাহর কালাম পবিত্র কোরআনুল কারিম বক্ষে ধারণ করা সাধারণ কোনো বিষয় নয়। আল্লাহ তায়ালার রহমত এবং তৌফিক ছাড়া কেউ কোরআন হেফজ করতে পারে না।
আমরা প্রত্যক্ষ করি, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় খেলাধুলাসহ বিভিন্ন পর্যায়ে কোটি কোটি অর্থ ব্যয় করেও বিশ্ব দরবারে দেশের আশানুরূপ সুনাম অর্জন হয় না। অথচ চরম অবহেলিত মাদরাসার ছাত্রদের এ অসামান্য অর্জনকে সরকারি-বেসরকারি পর্যায় কোনোভাবেই মূল্যায়ন করা হয় না। নব্বই ভাগ মুসলমান অলি আল্লাহ্ আলেম ওলামা, মসজিদ, মাদরাসার এই দেশে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কি হতে পারে! আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাই যে, মাদরাসার ছাত্রদের এই অর্জনকে আপনার এবং ১৬ কোটি মানুষ তথা দেশের অর্জন মনে করে ইহ ও পরকালীন জীবনে সফলতা লাভের আশায় এই অবহেলিত মাদরাসার ছাত্রদের মূল্যায়ন করুন। আল্লাহ আপনার উভয় জগৎকে সুন্দর করবেন। আমিন।
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির নির্বাহী সভাপতি ও জাতীয় সংহতি মঞ্চের প্রধান সমন্বয়কারী মাওলানা একে এম আশরাফুল হক দেশের সাধারণ জনগণকে সুস্থধারার জীবন যাপন ও নীতি নৈতিকতার প্রতি উৎসাহিত করে একটি অন্যায় অপরাধমুক্ত সুসভ্য ও উন্নত সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিকভাবে পুরষ্কৃত হাফেজে কোরআন এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভ‚মিকা রাখছেন এমন আলেমদের রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করার দাবি জানান।
রোববার এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, দেশে গান-বাজনা, নাটক সিনেমাসহ অপসংস্কৃতি ও অশ্লীলতার পেছনে যে পরিমাণ পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়, এর সামান্যতমও যদি হাফেজে কোরআন ও আলেমদের পৃষ্ঠপোষকতা করা হতো তাহলে দেশ অন্যায় অপরাধ কমে যেতো। বাংলাদেশ একটি আদর্শ ও কল্যাণ সমাজ ও রাষ্ট্রে পরিণত হতো। তিনি দেশ-বিদেশে সুনাম অর্জনকারী হাফেজ ও প্রখ্যাত আলেমদের আরো দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাস্তবমুখী পরিকল্পনা হাতে নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামান করেন।
রাজধানীর গুলিস্তান পীর ইয়ামেনী জামে মসজিদের খতিব মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী বলেন, মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হাফেজ ফয়জুর রহমান (রহ.), হাফেজ তাজুল ইসলাম (রহ.) ও হাফেজ নুরুজ্জামানের ঐকান্তিক চেষ্টা সাধনার ফলে বাংলাদেশ আজ লাখ লাখ হাফেজে কোরআন তৈরি হচ্ছে। যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের সঠিক মূল্যায়ন করা হয়, তাহলে এর উত্তম ফলাফল দেশে-বিদেশে সব জায়গায় বয়ে আনবে। ইনশাআল্লাহ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন