বাস ভাড়া ঠকানোর ফাঁদ ওয়েবিল। রাজধানীতে ওয়েবিলের কারণ দেখিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে বেশি ভাড়া। এতে করে যাত্রীরা বাসের চালক ও হেরপারের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। অনেক সময় এমন চালাকির মাধ্যমে ওয়েবিল দেখিয়ে ভাড়া নেয়া হয় যে যাত্রীরা হেলপারদের কিছুই বলতে পারেন না।
আর ওয়েবিল নামক বেশি ভাড়া নেয়ার বিষয়ে কথা বলতে গেলে চালক, হেলপার ও ওয়েবিল চেকারের কাছে অপমানিত হতে হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে গন্তব্যের আগেই বাস থেকে নামিয়ে দেয়া হয় যাত্রীদের। গণপরিবহনগুলো ওয়েবিলের মাধ্যমে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে প্রতিদিনই। ফলে যাত্রী ও বাসের চালকের সহকারীদের মধ্যে হচ্ছে বাগবিতÐা। যাত্রীদের অভিযোগ, সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় চলছে না গাড়ি। জায়গায় জায়গায় ওয়েবিলের মাধ্যমে বেশি ভাড়া আদায় করছেন বাসের চালক ও হেলপার।
সম্প্রতি রাজধানীতে ওয়েবিলের নামে নির্ধারিত হারের চেয়ে দ্বিগুণ, কখনও তার চেয়ে বেশি হারে ভাড়া আদায় বন্ধ করতে না পারা, সব বাসে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া কার্যকর করতে না পারায় সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদারের কক্ষের সামনে অবস্থান করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের (নিসআ) ব্যানারে শিক্ষার্থীরা এই কর্মসূচি পালন করেন। তারা ওয়েবিলের নামে অবৈধ বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধসহ মোট নয়টি দাবি তুলে ধরেন। বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদারের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বৈঠক শেষে দাবি আদায়ের বিষয়ে আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য বিআরটিএ মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। ওয়েবিলের নামে বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ বিআরটিএর কাছে দেয়ার কথা বলেন তিনি। এরপর ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। সড়কে আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে এবং বিভিন্ন ধরনের শাস্তি দেয়া হচ্ছে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, যতটুকু দূরত্বেই যাত্রীরা যাক চেকিং ব্যবস্থার নামে যাত্রীকে পরিবহন মালিকদের নির্ধারিত ভাড়াই দিতে হচ্ছে। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্বল্প দূরত্বে যাতায়াত করলেও যাত্রীকে গুনতে হয় দ্বিগুণ ভাড়া। অধিকাংশ বাসেই ভাড়ার নতুন তালিকা নেই। অনেক বাসে নতুন ভাড়ার তালিকা সাঁটানো হলেও সেগুলোতেও ওয়েবিল অনুযায়ী বাড়তি ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে। রাজধানীতে চলাচলরত রাইদা বাসের বিরুদ্ধে রয়েছে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ। এই পরিবহনটির সাথে শিক্ষার্থী ও যাত্রীদের সবসময়ই সৃষ্টি হয় বাগবিতÐা। বিভিন্ন সময়ে রাইদা বাস থেকে যাত্রীদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়ারও ঘটনা ঘটেছে। এই বাসের কমলাপুর, রামপুরা, বাড্ডাসহ রয়েছে কয়েকটি ওয়েবিল চেকিং পয়েন্ট। এছাড়াও গুলিস্তান এলাকাসহ রাজধানীতে বেশ কয়েকটি এলাকায় রয়েছে অন্যান্য পরিবহনের ওয়েবিল চেকিং পয়েন্ট।
রাজধানীতে চলাচলরত রাইদা পরিবহনের এক হেলপার বলেন, ওয়েবিলের মাধ্যমে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নিতে গেলে প্রায় সময়ই ঝগড়া হয়। আমরাও চাইনা যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নিতে। অনেক সময় অল্প দূরত্বের জায়গায় যেতে হলেও ওয়েবিলের কারণে যাত্রীদের বেশি ভাড়া নিতে হয়। চেকাররা যাত্রী গুনে গুনে ওয়েবিলে সই করেন।
নাসির উদ্দিন নামের এক বাস যাত্রী বলেন, ওয়েবিলের কারণে আমরা ঢাকার প্রায় সব রুটেই বাস কর্তৃপক্ষের কাছে জিম্মি। আমার গন্তব্যে যাওয়া হলো কিনা সে বিষয়ে বাসের চালক ও হেলপারা দেখে না। তারা শুধু তাদের ভাড়াটাই বিবেচনা করে। এতে নিয়মিত আমাদের পকেট কাটছে।
রাজধানীতে ওয়েবিলে বাস চলবে না বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে। সেই সঙ্গে কোনো বাস সিটিং সার্ভিসে না চালানোর কথাও বলা হয়। ওয়েবিলের মাধ্যমে মালিকরা বাসের ট্রিপের হিসাব রাখার সুবিধার্থে এটা করে। তালিকার বাইরে কেউ ভাড়া নিলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানানো হয়। মালিক সমিতি চায় যাত্রীরা যাতে কোন ধরনের ভোগান্তিতে না পড়েন।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, ওয়েবিলের কারণে ইচ্ছেমতো ভাড়া নেয়া হচ্ছে। এটা যাত্রীদের সাথে একটি প্রতারণা। ওয়েবিলের মাধ্যমে ৫ টাকার ভাড়া যাত্রীদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ১৫ টাকা। এই প্রতারণা বন্ধ করার কথা থাকলেও সরকার বার বারই ব্যর্থ হচ্ছে। প্রত্যেকবারই তাদের দেয়া প্রতিশ্রæতি ভঙ্গ হচ্ছে। এ অন্যায়ভাবে ভাড়া বেশি নেয়া বন্ধ করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন