আজ ১৯ মার্চ, প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে ঢাকার উত্তরে জয়দেবপুরে (বর্তমান গাজীপুর) অকুতোভয় মুক্তিকামী বাঙালিরা পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। এই উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এরমধ্যে শহীদদের কবর জিয়ারত ও আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। -বাসস
সকালে গাজীপুর জেলা প্রশাসন আলোচনা সভা এবং বিকেলে জয়দেবপুর চৌরাস্তায় আলোচন সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চে দেওয়া ভাষণে ‘তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে,’ এই মন্ত্রবলে বলিয়ান হয়ে ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগেই ঢাকার অদূরে জয়দেবপুরে অকুতোভয় মুক্তিকামী বাঙালিরা সশস্ত্র সেনাবাহিনীর সামনে প্রথমবার রুখে দাঁড়িয়েছিল। হাজার-হাজার জনগণ অবতীর্ণ হয়েছিল সেই সম্মুখযুদ্ধে।
১৯৭১ সালের ১৯ মার্চে ঢাকা ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার থেকে আকস্মিকভাবে পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার জাহান জেবের নেতৃত্বে পাকিস্তানি রেজিমেন্ট জয়দেবপুরের (গাজীপুর) দ্বিতীয় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টকে নিরস্ত্র করার জন্য পৌঁছে যায়। এ খবর জানা-জানি হতেই বিক্ষুদ্ধ জনতা জয়দেবপুরে এক প্রতিরোধ সৃষ্টি করে। সশস্ত্র পাকিস্তানি সেনাবাহিনী জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করলে অকুস্থলেই শহীদ হন অনেকে। এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ।জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ জয়দেবপুরের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে নিজ হাতে লিখে একটি বাণী দিয়েছিলেন। মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এই বাণী বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
ওই সময় বাণীতে বঙ্গবন্ধু বলেন, ১৯৭১ সালের ১৯ শে মার্চ বাংলাদেশের ইতিহাসে আরো একটি স্মরণীয় দিন। ওইদিন পাক মিলিটারি বাহিনী জয়দেবপুরে ক্যান্টনমেন্টে অবস্থিত দ্বিতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্টের জওয়ানদের নিরস্ত্র করার প্রয়াস পেলে জয়দেবপুর থানা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের যৌথ নেতৃত্বে কৃষক, ছাত্র, জনতা সবাই বিরাট প্রতিরোধের সৃষ্টি করে। ফলে, মিলিটারির গুলিতে তিনটি অমূল্য প্রাণ নষ্ট হয় এবং বহু লোক আহত হয়। বাণীতে তিনি বলেন, আমি তার কয়েকদিন মাত্র পূর্বে ৭ই মার্চ তারিখে ডাক দিয়েছিলাম, যার কাছে যা আছে, তাই দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোল। জয়দেবপুরবাসীরা তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। আমি তাদের মোবারকবাদ জানাই।’
তিনি বলেন, ‘কোন মহৎ কাজই ত্যাগ ব্যতিত হয় না। জয়দেপুরের নিয়ামত, মনু, খলিফা ও চান্দনা চৌরাস্তায় হুরমতের আত্মত্যাগও বৃথা যায় নাই। শহীদদের রক্ত কখনো বৃথা যায় না। তাই আজ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের ফলে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।বঙ্গবন্ধু বলেন, দেশকে স্বাধীন করার সংগ্রাম শেষ হয়েছে। আসুন আজ আমরা সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশ গড়ার সংগ্রামে লিপ্ত হই। তিনি জয় বাংলা বলে বাণীটি শেষ করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন