সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে বিস্তীর্ণ ফসলি জমিতে লাইসেন্সবিহীন ইটভাটা গড়ে তুলেছে মালিকরা। এসব ভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের নেই কোন ছাড়পত্র। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এসব ইটভাটায় জ্বালানী হিসেবে দেদারসে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ বা কাঠের গুঁড়ি। এতে উজাড় হচ্ছে সবুজ বৃক্ষ। উপজেলার বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকাধীন বনাঞ্চল থেকে গাছ কিনে এসব অসাধু ভাটা মালিকরা জ্বালানী হিসেবে কাঠের ব্যবহার করছেন। কয়লার পরিবর্তে জ্বালানী হিসেবে কাঠ বা কাঠের গুড়ি পোড়ানোর ফলে ভাটাগুলো থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে চারপাশের পরিবেশ। এতে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে ফসলি জমি ও সামাজিক বনায়ন। বায়োদূষণের ফলে ফুসফুসের প্রদাহ, শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এ এলাকার সাধারণ মানুষ ।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩তে বলা হয়, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নের স্বার্থে আধুনিক প্রযুক্তির ইটভাটা অর্থাৎ জিগজ্যাগ ক্লিন, হাইব্রিড হফম্যান ক্লিন, ভার্টিক্যাল শফট ক্লিন, টানেল ক্লিন বা অনুরোপ উন্নততর কোনো প্রযুক্তির ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। তাছাড়া আবাসিক, জনবসতি, সংরক্ষিত এলাকার বনভূমি ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ইটভাটা করা যাবে না। এছাড়া সরকারি বনাঞ্চলের সীমারেখা থেকে দুই কিলোমিটার দূরত্বে করতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র, জেলা প্রশাসকের অনুমোদন বা লাইসেন্স না নিয়ে ইটভাটা চালু করা যাবে না। আর এ আইন অমান্য করলে ১০ বছরের কারাদন্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।
আর এসব ইটভাটা তদারকি করার জন্য জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বন বিভাগ, স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু তাদের রহস্যজনক নীরবতার কারণে কমলনগরের অধিকাংশ ইটভাটা মালিক এসব আইনের তোয়াক্কা না করে দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের অবৈধ কার্যক্রম। ফলে আশপাশ এলাকার আবাদি জমির উর্বরতা হ্রাসসহ বিভিন্ন প্রজাতিয় ফলদ, বনজ গাছপালাসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা যায়, তাদের অফিসের তালিকাভুক্ত ১৩টি ইটভাটা রয়েছে। এদের মধ্যে জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স আছে ৯টি। এছাড়াও উপজেলা প্রশাসনের তালিকার বাহিরে আরও ৭-৮টি ইটভাটা রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ইটভাটা পরিচালনা করার মত একটিরও কোন বৈধ কাগজপত্র নেই বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
সরেজমিনে উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের লতিফ ব্রিকফিল্ড, চরপাগলা এলাকার মদিনা ব্রিকফিল্ড, হাজিরহাট ইউনিয়নের মা ফাতেমা ব্রিকফিল্ডসহ কয়েকটি ইটভাটায় গিয়ে দেখা যায় লাইসেন্সবিহীন এসব ইটভাটার চারপাশে মজুত করে রাখা হয়েছে কয়েকশ মন লাকড়ি। ভাটাতে লাকড়ি পোড়ানোর ফলে চিমনি দিয়ে প্রচন্ড বেগে ধোঁয়া বের হচ্ছে। আর সেই ধোঁয়া স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ আশপাশের বসতি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
কাঠপোড়ানোর বিষয়ে লতিফ ব্রিকফিল্ডের স্বত্বাধিকারী মো. বাহার মোল্লাহর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে বাংলাভাটা দিয়ে ব্রিকফিল্ড শুরু করতে হয়। এ মুহূর্তে কাঠ পোড়ানো ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই।
সোহাগ ব্রিকস ও মদিনা ব্রিকফিল্ডের মালিক আবুল কাশেম ও আরিফ হোসেনের সাথে মুঠোফোনে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক বরাবর আমাদের আবেদন করা আছে কিন্তু তারাতো লাইসেন্স দিচ্ছে না। এ বিষয়ে আমাদের হাইকোর্টে মামলা আছে। এ ছাড়াও এ উপজেলায় ২০টি ইটভাটা রয়েছে। খোঁজ-খবর নিলে সবগুলোর নেন।
কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু তাহের বলেন‘ ইটভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে বায়োদূষণ হয়। এ বায়োদূষণের ফলে ফুসফুসের প্রদাহ, শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশিসহ মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষতি হয় বেশি।’
পরিবেশ অধিদপ্তর (নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর) সহকারি পরিচালক তানজির তারেক ইবনে সিদ্দিক বলেন, অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটাগুলো বন্ধে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটাগুলো বন্ধে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের অনুমতি নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন