স টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর ৬৩৮, ২০১৩ সালে গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ওই ইনিংসেই দেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন মুশফিকুর রহিম। কাকতালীয়ভাবে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্কোরও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই। ২০০৭ সালে কলম্বো টেস্ট বাংলাদেশ অলআউট হয়েছিল ৬২ রানে।
স দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট রান তামীম ইকবালের (৪৪ ম্যাচে ৩৩৪৯ রান)। সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি (৮) ও সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসও (২০৬, ২০১৫ সালে খুলনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে) তামিমের।
স সবচেয়ে বেশি উইকেট সাকিব আল হাসানের (৪৪ ম্যাচে ১৫৯ উইকেট)। দেশের হয়ে ১০০ বা এর বেশি উইকেট আছে আর মাত্র একজনের, মোহাম্মদ রফিক। ৩৩ টেস্টে রফিকের উইকেট ঠিক ১০০টি।
স দেশকে সবচেয়ে বেশি টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন মুশফিকু রহিম (২৬টি)। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন হাবিবুল বাশার।
স এ পর্যন্ত ৮ জন টেস্টে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছে। বর্তমান অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের (২৬*টি) আগের সাতজন হলেনÑ নাইমুর রহমান দুর্জয় (৭টি), খালেদ মাসুদ পাইলট (১২টি), খালেদ মাহমুদ সুজন (৯টি), হাবিবুল বাসার সুমন (১৮টি), মোহাম্মাদ আশরাফুল (১৩টি), সাকিব আল হাসান (৯টি)।
ইমামুল হাবীব বাপ্পি
১০ নভেম্বর, ২০০০। ক্রিকেটের সবচেয়ে অভিজাত ও প্রাচীন সংস্করণের ক্রিকেটে বাংলাদেশের পা রাখার দিন। ১৬ বছর আগের এই দিনে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ভারত অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলির সাথে বাংলাদেশের পক্ষে টস করতে নামেন নাইমুর রহমান দুর্জয়। টাইগার ক্রিকেটের স্বপ্নযাত্রার শুরুটা সেদিন বিস্ময়জাগানিয়া হলেও বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল পরক্ষনেই। দেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সেই অনবদ্য ১৪৫ রানের ওপর ভর করে চারশ রানের সংগ্রহ দাঁড় করেয়েছিল বাংলাদেশ। টেস্ট ক্রিকেটই যে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় পরীক্ষাক্ষেত্র সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া দলটি বুঝেছিল দ্বিতীয় ইনিংসেই। মাত্র ৯১ রানে অলআউট হয়ে ম্যাচ হেরেছিল ৯ উইকেটে। টেস্ট ক্রিকেটে লাল সবুজের জন্ম হয়েছিল এমনই আশা-নিরাশার মিশ্র অভিজ্ঞতা দিয়ে।
অবশ্য ক্রিকেটে বাংলাদেশের জাগরণের সূচনা হয়েছিল আরো আগেই। ১৯৯৭ সালে মালায়েশিয়ার কুয়ালামপুরে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ই ছিল সেই সূচনালগ্ন। যে জয় জায়গা করে দিয়েছিল ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে। ক্রিকেটের সেই বিশ্বমঞ্চে সেবারের ফাইনালিস্ট পাকিস্তানকে হারিয়ে আরো বড় চমক উপহার দেয় বাংলাদেশ। যার ফলে টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তির দাবিটাও জোরালো হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ২০০০ সালের জুনে দশম দেশ হিসেবে আইসিসির পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের পরের দিনগুলো ছিল ভারতের বিপক্ষে অভিষেকের ওই ম্যাচের মতো। আশা আর হতাশার মিশ্র চিত্র। আশা নিয়েই পার হয়েছে একেকটি দিন, ম্যাচ, সিরিজ। কিন্তু উপহার হিসেবে এসেছে শুধুই পরাজয়। এভাবেই কেটেছে টানা পাঁচ বছর, ৩৪টি ম্যাচ, ১৭টা সিরিজ। কত কঠিনই না ছিল সেই সময়গুলো। কত সমালোচনার তীক্ষè তীরবিদ্ধ করেছে বাংলাদেশকে। টেস্ট স্ট্যাটাস কেড়ে নেয়ার মতো প্রশ্নও উঠেছে অনেকবার। ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২ ম্যাচের সিরিজ ১-০তে জয়ের পর যে সেই প্রশ্ন থেমে গিয়েছিল তা নয়। এরপরও বাংলাদেশকে দিতে হয়েছে কঠিন পরীক্ষা। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২-০তে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ বিদেশের মাটিতে প্রথম সিরিজ জয়ের আনন্দ করে ঠিকই। কিন্তু ক্যারিবীয় সেই দলটি মূল একাদশের না হওয়ায় অনেকেই বাঁকা চোখে দেখেছিল বাংলাদেশের সেই সফলতাকে। বোর্ডের সাথে ঝামেলায় জড়িয়ে তখন জাতীয় দলে ছিলেন না সারোয়ান, চন্দরপলের মত লিজেন্ডরা। কদিন আগেও টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বলতে ছিল অখ্যাত জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানো।
এর মাঝে বাংলাদেশ কোনো প্রতিভাবান ক্রিকেটার যে পায়নি তা নয়। ২০১০ সালে লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নিজেকে নামাঙ্কিত করেন তামিম ইকবাল। এখনো পর্যন্ত সেই তামিমই দেশের সেরা ব্যাটিং তারকা। এই দলেই আছে বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। আছে মাশরাফি বিন মর্তুজার মত লড়াকু লিজেন্ড। সেই ছোট্টটি থাকার সময়ই ‘লিটল মাস্টার’ খেতাব পাওয়া মোহাম্মাদ আশরাফুলকে অবশ্য আমরা সেভাবে পাইনি। এরপর তো দেশের ইতিহাসের কলঙ্কজনক এক অধ্যয়েরই জন্ম দেন একসময়ের দেশসেরা ওই ব্যাটসম্যান।
এর মাঝেই এগিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। ছোট ছোট পদক্ষেপে। তবে সম্প্রতিক সময়ে সাকিব, তামিম, মাশরাফি, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহর মত সিনিয়রদের সাথে একঝাক তরুণ খেলোয়াড় যেন দিয়েছেন বসন্তের আভাস। রঙিন জার্সিতে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালিস্ট দলটি এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেও দেশের মাটিতে পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতের মত ক্রিকেট পরাশক্তিকে নাস্তানাবুধ করে নিজেদের জানান দেয় নতুনরুপে। তারই ধারাবাহিকতায় প্রথমবারের মতো এবার টাইগাররা টেস্টে হারালো ইংল্যান্ডের মত ঐতিহ্যবাহী দলকে।
এই ১৬ বছরের পরিক্রমায় ৯৫টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে ৭২ ম্যাচেই হারের মাল্য পরতে হয়েছে বাংলাদেশকে। ১৫টি হয়েছে ড্র, বাকি ৮টিতে জয়। জয় পাওয়া আটটি টেস্টের পাঁচটি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, দুটি জয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং একটি সদ্য শেষ হওয়া ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
সিরিজ হিসাবে এ পর্যন্ত ৪৮টি টেস্ট সিরিজ খেলে তিনটিতে জয় বাংলাদেশের, আর হার ৪০টিতে, বাকি পাঁচটি ড্র। তবে অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে টেস্টে বাংলাদেশের ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডকে হারানোকে দেখা হচ্ছে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের নতুন যুগের সূচনা হিসেবে।
নিউজিল্যান্ড তাদের ইতিহাসের প্রথম টেস্ট জিতেছিল ১৬তম সিরিজে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩-০ ব্যাধানে হারের পর। সিরিজ জয়ের জন্য অপক্ষোটা ৩৯ বছরের, পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৯৬৯ সালে! পরের সিরিজ জয়ের জন্য ছিল আবার দশ বছরের অপক্ষো। শুধু নিউজিল্যান্ড নয়। অভিষেকের পর একটি জয় পেতে দক্ষিণ আফ্রিকার লেগেছিল দেড় দশক। টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের প্রথম দুটি জয় পাকিস্তান ও নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে। তখন পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড দুই দলই ছিল টেস্টে কোনো পয়েন্ট অর্জন না করা দল। ১৯ বছর পর তারা ইংল্যান্ডকে হরায়। তারও ১০ বছর পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জেতে ভারত।
নবীন দল টেস্ট খেলার সুযোগই পায় কম। বাংলাদেশের বিপক্ষে এখন যেটা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার সাথে এক দশক পর টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা হয় বাংলাদেশের। সদ্য ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট খেলার আগেও মাঝে বিরতি কাটাতে হয় ১৫ মাস। অনেক ইংলিশ ক্রিকেটারের কাছেই ব্যাপারটা ছিল বিস্ময়ের।
ক্রিকেটে বাংলাদেশ ভাগ্যবান একটা দেশও। এত সহজে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া দলের সংখ্যা কিন্তু হাতে গোনা। জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কার ভাগ্যটাও অনেকটা বাংলাদেশের মত। অথচ আপনি যতি কেনিয়ার দিকে তাকান তাহলে দেখবেন ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে তারা হারালো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে, ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে তারা হারালো শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশকে। জিম্বাবুয়েকে সেবার ওয়াকওভারের ভাগ্যে হারিয়ে সেমিফাইনালেও ওঠে কেনিয়া। কিন্তু টেস্ট স্ট্যাটাস মেলেনি। আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানও তেমনি দুটি উদাহরণ।
এরই মধ্যে ক্রিকেট পাগল জাতি হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছে বাংলাদেশ। একটিমাত্র জয়েরর জন্য দীর্ঘ প্রতিক্ষা নিয়ে দিনের পর দিন, ম্যাচের ম্যাচ অপেক্ষা করেছে পাগলা সমর্থকরা। শুরুর সেই দিনগুলোতে অধিকাংশ সয়মই সমর্থকতের হতে হয়েছে হতাশ। কিন্তু সেই হতাশা থেকেই জন্ম নিত নতুন আশা। বর্তমানে তো জয়ের অভ্যাসই বানিয়ে ফেলেছে বাংয়লাদেশ। ব্যর্থতার ক্ষতটাও তাই এখন অনেক বড় হয়ে ধরা দেয়।
প্রথম জয়ের আগে কার কত ম্যাচ
কত টেস্ট পর প্রথম জয়
দল অভিষেক প্রথম জয় ম্যাচ জয় হার ড্র
অস্ট্রেলিয়া ১৮৭৭ ০ ৭৯১ ৩৭২ ২১১ ২০৬
ইংল্যান্ড ১৮৭৭ ১ ৭৯৮ ৩৫১ ২৮৫ ৩৪২
দ.আফ্রিকা ১৮৮৯ ১১ ৪০২ ১৪৬ ১৩৪ ১২২
উইন্ডিজ ১৯২৮ ৬ ৫২০ ১৬৫ ১৮১ ১৭৩
নিউজিল্যান্ড ১৯৩০ ৪৪ ৪১৫ ৮৫ ১৬৯ ১৬১
ভারত ১৯৩২ ২৪ ৫০২ ১৩২ ১৫৭ ২১২
পাকিস্তান ১৯৫২ ১ ৪০২ ১৩০ ১১৪ ১৫৮
শ্রীলঙ্কা ১৯৮২ ১৩ ২৫২ ৭৯ ৯২ ৮১
জিম্বাবুয়ে ১৯৯২ ১০ ১০০ ১১ ৬৩ ২৬
বাংলাদেশ ২০০০ ৩৪ ৯৫ ৮ ৭২ ১৫
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন