শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বিরোধী দল দমনে সরকার নতুন খেলা শুরু করেছে: মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ এপ্রিল, ২০২২, ৩:৫৯ পিএম

নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার বিরোধী দল দমনের ‘নতুন খেলা’ শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার (০৯ এপ্রিল) সকালে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতির প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।

তিনি বলেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে আবার শুরু করেছে সরকার নতুন খেলা। সামনে নির্বাচনের ঢোল বাজছে। নির্বাচনের আবার সেই ঢোল। নির্বাচন নির্বাচন খেলা করে তারা নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চায়, সমস্ত বিরোধী দলকে আটক করে মিথ্যা মামলা দিয়ে তারা একতরফা ভাবে নির্বাচন করে নিতে চায়। দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতির জন্য সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, আজকে প্রত্যেকটি জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। প্রত্যেকটি অর্থনৈতিক খাতে চরম দুর্নীতি চলছে। এরা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ এবং শুধু ব্যর্থ নয়। এরা দেশের ক্ষতি করছে। তাই আর একদিন/দুইদিন যদি এদেরকে রাখা যায় এদেশের অস্তিত্ব থাকবে না। আসুন যত দ্রæত সম্ভব নিজেদেরকে সংগঠিত করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই যে ডায়েরিয়া হচ্ছে। ৬২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডায়রিয়া এখন হচ্ছে। আইসিডিডিআর‘বি কালকে বলেছে যে, ৬২ বছরে এতো রোগী কখনো আসে নাই। কেনো এতো রোগী? কারণ এই ঢাকা শহরে প্রত্যেকটি টেপের পানি দুষিত পানি। আপনি গিয়ে দেখেন লাইনের যে পানি সেগুলোতে দুর্গন্ধ ও ব্যাক্টেরিয়াতে বোঝাই। তার ফলে আজকে প্রতিদিন প্রায় ১৪শ/১৫শ লোকের ডায়রিয়া হচ্ছে। ওয়াসার যে এমডি তিনি কত বছর ধরে আছেন জানেন? ১০ বছরের বেশি সময় আছেন। তাকে বেতন দেয়া হয় বাংলাদেশে সমস্ত কর্মকর্তাদের চাইতে সবচেয়ে বেশি বেতন দেয়া হয়, ৫ লক্ষ টাকার উপরে বেতন পায়। তাকে অনেকবার সরানোর চেষ্টা করা হয়েছে, সরাতে পারেনি। কারণ তিনি অত্যন্ত প্রিয় মানুষ আমাদের সরকার প্রধানের।

তিনি বলেন, এভাবে সমস্ত জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সালরদের দেখুন তাদেরকে বসানো হয়েছে তারা কী করে এখন? চুরি করে। চিন্তা করতে পারেন। আবার তারা নিজেরাই বলে যে, এখন ভালো লোককে ভিসি হিসেবে পাওয়া যায় না। কী লজ্জ্বার কথা। আরে আপনারা ভালো না বলেই তো ভালো লোককে পান না। ভালো লোক হলেই তো ভালো লোক পাওয়া যাবে। আপনারা বিভক্ত করে রেখেছেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ভাগ করে রেখেছেন। আওয়ামী লীগ ছাড়া কোনো কিছু দেখেন না। যার ফলে গোটা দেশকে আজকে আপনারা দলীয়করণ করে ফেলেছেন।

প্রধানমন্ত্রী রান্নার নতুন রেসিপি দিচ্ছেন মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই রোজার মাস আমরা একটা শশা কিনতে পারি না, এই রোজার মাসে আমরা একটি বেগুন কিনতে পারি না। দুঃখ হয় যখন প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে রান্নার নতুন রেসিপি দেন। সেই রেসিপিপা কী? তিনি বলেছেন যে, মিষ্টি কোমড়া দিয়ে বেগুনি বানাও। তখন তারা পারছে না বেগুন দিতে, যখন তারা পারছে না শশা দিতে, যখন তারা পারছে না চাল-ডাল দিতে তখন তারা সমস্ত তারা কথা বলছে।

তিনি বলেন, গতকাল তথ্য মন্ত্রী বলেছেন, এই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে বিএনপির কারসাজি আছে। সব সময় তিনি এটা বলে এবং বলে যে, যা কিছু ঘটে তার পেছনে নাকী বিএনপি আছে। আরে ভাই বিএনপি যদি সব কিছু ঘটাতে পারে তাহলে তোমরা ক্ষমতায় আছো কেনো? ক্ষমতা ছেড়ে দাও, বিএনপির হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দাও দেখো আমরা দেশ চালাতে পারি কিনা।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার হচ্ছে শুধুমাত্র সেই সব লোকের সরকার, মুষ্টিমেয় কয়েকটা লোককে বড়লোক করার জন্য গোটা রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে তারা ব্যবহার করছে। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে কি করছে, যারা প্রতিবাদ করছে তাদেরকে তারা গ্রেফতার করছে, সাজা দিচ্ছে, মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। এই দেখেন মতঝিলে শ্রমিক দলের একটা প্রোগ্রাম থেকে ইশরাক হোসেনকে গ্রেফতার করেছে, শ্রমিক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। কেনো ইশরাককে গ্রেফতার করলেন? কারণ সে প্রতিবাদ করেছিলো, শ্রমিক দলের নেতা-কর্মীদের কেনো মামলা দিলেন? তারা প্রতিবাদ করেছিলো। তারা মিথ্যা মামলা দিয়ে নতুন খেলা শুরু করেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ গত পরশু বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস গেছে। আমাদের সংবিধানে যে পাঁচটি মূল বিষয় অন্ন,বস্ত্র, চিকিতসা, বাসস্থান, স্বাস্থ্য। সেই স্বাস্থ্য সুবিধা তো আমাদের শ্রমিক শ্রেনী পায় না। হাসপাতালে কোনো সুবিধা শ্রমিকদের দেয়া হয় না। লক্ষ্ লক্ষ টাকা ব্যয় করে যারা বড় বড় হাসপাতালে যেতে পারে তারাই চিকিতসা পায়। আপনারা পিজিতে যান, মেডিকেলে যান, সরকারি হাসপাতালে যান সেখানে কোনো চিকিতসা আপনি পাবেন না।

আপনাকে ফ্লোরের মধ্যে পড়ে থাকতে হবে, ঔষধ লিখে দেবে সেই ঔষধ বাইরে থেকে কিনে আনতে হবে। আপনাকে টেস্ট লিখে দেবে সেই টেস্ট বাইরের থেকে করে আনতে হবে। এই সরকার বার বার চিতকার করে বলে আমরা অনেক কাজ করছি, স্বাস্থ্যের জন্য সব কাজ করছি। একজন মেহনতি মানুষও কিন্তু এই সেবাটুকু পায় না।

শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম মঞ্জুর সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, কেন্দ্রীয় নেতা হুমায়ুন কবির খান, ফিরোজ-উজ-জামান মোল্লা, শ্রমিক দলের আবুল খায়ের খাজা, আবুল কালাম আজাদ, মেহেদি আলী খান, জাহাঙ্গীর আলম, আসাদুজ্জামান বাবুল, মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, জুলফিকার মতিন, কাজী আমীর খসরু, খোরশেদ আলমসহ নেতবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন