মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দেশে প্রকট হচ্ছে আবহাওয়ার বৈরিতা

ঝড়-বৃষ্টির সঙ্গে বইছে তাপপ্রবাহ অস্বাভাবিক তাপপ্রবাহের ফলে রাজশাহী ও দিনাজপুরে ঝড়ে পড়ছে আম-লিচুর কুঁড়ি

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ১৮ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৪ এএম

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব দিনদিনই প্রকট হয়ে দেখা দিচ্ছে। বলা যায় আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবের ফলে কৃষি সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে, কোথাও অকাল বন্যা, কোথাও খরা, কোথাও বা দাবানলে পুড়ছে প্রকৃতি। বাংলাদেশেও আবহাওয়ার এই বৈরিতা সুস্পষ্ট ভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে।

বাংলা দিনপঞ্জির হিসাবে নববর্ষের শুরু। অর্থাৎ বৈশাখ মাস সবে শুরু হয়েছে। গ্রীষ্মের দাবদাহ প্রকৃতিতে বিরাজ করবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই তাপপ্রবাহ এবার দেশের কিছু অঞ্চলে অস্বাভাবিক হয়ে বইছে। দিনাজপুর, টাঙ্গাইল ও ফরিদপুর অঞ্চলসহ রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার হয়েছে। গতকাল রাজশাহীতে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এই অস্বাভাবিক তাপমাত্রার কারণে রাজশাহী ও দিনাজপুরে আম এবং লিচুর অনেক ক্ষতি হচ্ছে। অস্বাভাবিক তাপমাত্রার ফলে আমের কুঁড়ি ঝড়ে পড়ছে, লিচুও ঝড়ে পড়ছে। এ অবস্থায় অনেক কৃষক আম ও লিচুর কুঁড়ি ঝড়ে পড়া রোধ করতে বাগানে পানি সেচ দিচ্ছে। এ ছাড়া বৃষ্টি না হলে এ ধরনের তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকলে আম ও লিচু বাগানে নানা রোগ দেখা দেবে এবং পোকার আক্রমণও বেড়ে যেতে পারে বলে কৃষকদের আশঙ্কা।

অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে বৃষ্টিও হচ্ছে। গত শুক্রবারও দেশের ছয় বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে। সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জসহ অন্যান্য এলাকাতে কালবৈশাখী ঝড়সহ বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া দু’তিন দিন আগে রংপুর, কুঁড়িগ্রাম এসব এলাকায় ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হয়েছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল তথা হাওরাঞ্চলে দেখা দিয়েছে অকাল বন্যা। অসময়ে হঠাৎ করে বাড়ছে হাওর অঞ্চলে নদ-নদীর পানি। ফলে আকস্মিক বন্যার কবলে পড়েছে হাওরের একমাত্র বোরো ফসল। ভারতের নির্মিত ফারাক্কা বাঁধের ভয়াল ছোবলে দেশের উত্তর জনপদের মরুকরণ প্রক্রিয়া যেমন ত্বরান্বিত হচ্ছে। তেমনি দক্ষিণাঞ্চলে বাড়ছে লবণাক্ততা। একই সাথে ভারত ইচ্ছেমতো ফারাক্কাসহ অন্যান্য বাঁধ খুলে দিয়ে অসময়ে এদেশের হাওর অঞ্চলের ফসল তলিয়ে দিচ্ছে। সম্প্রতি ভারতের আসাম, মেঘালয় ও অরুণাচল প্রদেশে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ভারত ফারাক্কা ও গজলডোবা বাঁধ খুলে দেওয়ায় এদেশের হাওরের কাঁচাপাকা বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। শুধু হাওর অঞ্চল নয় বাঁধ খুলে দিয়ে তিস্তা অববাহিকার কৃষকদেরও সর্বনাশ করা হয়েছে। ফারাক্কার কারণে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে মরুকরণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নৌ-চলাচলে প্রতিবন্ধকতা, মৎস্য সম্পদের বিনাশসহ পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনভূমি সুন্দরবনের অস্তিত্বও হুমকিতে পড়েছে। এছাড়া এ বাঁধ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, সর্বোপরি বাংলাদেশের অর্থনীতির অপূরণীয় ক্ষতি করছে।

আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব বাংলাদেশে এখন বহুমাত্রিকতায় দৃশ্যমান হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, নদীভাঙন এসব প্রকৃতিক দুর্যোগ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। গত কয়েক বছর ঘূর্ণিঝড় আম্ফান, দীর্ঘস্থায়ী বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আঘাতের পর উপকূলীয় অঞ্চল অস্বাভাবিক জোয়ার ও অতিবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবের পাশাপাশি ভারতের নির্মিত ফারাক্কা বাঁধের ভয়াল ছোবলে দেশের উত্তর জনপদের মরুকরণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলে বাড়ছে লবণাক্ততা। স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত না হওয়ার পাশাপাশি ফারাক্কা বাঁধের প্রভাবে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ১২-১৪ মিটার নিচে নেমে যাওয়ায় উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলায় অগভীর নলকূপগুলোতে সেচের পানির অভাব দেখা দিয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে হস্তচালিত হাজার হাজার নলকূপ অকেজো হয়ে পড়ায় খাবার পানির সঙ্কট দেখা দিচ্ছে।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, প্রিয়জনের কষ্ট ও শোকে আমরা ব্যথিত হই। কিন্তু যে পৃথিবী আমাদের প্রতিনিয়ত আলো, বাতাস, পানি, খাদ্যের জোগান ও আশ্রয় দিচ্ছে, আমাদের বাঁচিয়ে রাখছে। এমন আপনজনকে আমরা প্রতিদিনের কর্মকাণ্ডে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছি। বিগত বছরে বিশ্বজুড়ে বন্যা, খরা ও দাবানলের মতো একের পর এক বিপর্যয় জানান দিয়েছে, পৃথিবী কতটা মহাসঙ্কটে। মাত্রাতিরিক্ত জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে আমরা নিজেরাই নিজেদের চূড়ান্ত বিলুপ্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছি। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, সুপেয় পানির সঙ্কট, খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় হুমকির মধ্যে পড়ছে প্রাণ-প্রকৃতি। পরিবেশকে কেন্দ্র করেই উন্নয়ন হবে। উন্নয়নকে কেন্দ্র করে পরিবেশ সাজানো যাবে না। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে হবে।

বিশিষ্ট পরিবেশবিদ ও পানি বিশেষজ্ঞ ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ইমেরিটাস ড. আইনুন নিশাত ইনকিলাবকে বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা বাড়ছে। অন্যদিকে উত্তরাঞ্চল মরুকরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ফারাক্কার প্রভাব ও প্রকৃতির বিরূপতা থেকে রক্ষা পেতে হলে উজান স্রোতে ফারাক্কার ন্যায় বাঁধ নির্মাণ করে পানি সংরক্ষণ ও সøুইস গেট দিয়ে পরিমিত পানির ব্যবস্থা করতে হবে। উত্তারাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় কৃত্রিম জলাশয় নির্মাণ করে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমাতে হবে। খাল খনন ও পুনঃখনন কার্যক্রমকে জোরাল করতে হবে। নদীদূষণ ও দখলমুক্ত করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Yousman Ali ১৭ এপ্রিল, ২০২২, ৯:৪০ এএম says : 0
বাঁচার জন্য চাই
Total Reply(0)
মমতাজ আহমেদ ১৭ এপ্রিল, ২০২২, ৭:৫৫ এএম says : 0
খুবই উদ্বেগের বিষয়
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন