ইউক্রেনীয় মহিলাদের ধর্ষণে স্বামীকে ছাড়পত্র দিচ্ছেন রাশিয়ার এক সেনানির স্ত্রী। এই অভিযোগ ইউক্রেনের নিরাপত্তা বাহিনী (এসবিইউ)-র। এ সংক্রান্ত একটি অডিও ক্লিপও শেয়ার করেছে তারা। তাতে বড় বড় করে শিরোনাম— ‘সিকিউরিটি সার্ভিসে ধরা পড়ল: ইউক্রেনীয় মহিলাদের ধর্ষণের জন্য তাদের স্বামীদের ছাড়পত্র দিয়েছে রাশিয়ান আক্রমণকারীদের স্ত্রীরা।’ যদিও ৩০ সেকেন্ডের ওই অডিও ক্লিপের সত্যতা যাচাই করো যায়নি।
১২ এপ্রিল একটি অডিও ক্লিপ ফাঁস করে রেডিয়ো লিবার্টি নামে এক সংস্থা। প্রসঙ্গত, আমেরিকার জো বাইডেন সরকারের সাহায্যপ্রাপ্ত ওই সংস্থা নানা তথ্য এবং খবরাখবর সম্প্রচার করে। রেডিও লিবার্টির দাবি, ইউক্রেনে যুদ্ধরত রাশিয়ার সেনা রোমান বাইকোভস্কিকে সে দেশের মহিলাদের ধর্ষণ করার নির্দেশ দিচ্ছেন তার স্ত্রী ওলগা বাইকোভস্কায়া। এই অডিও ক্লিপটিই শেয়ার করেছে এসবিইউ।
স্বাভাবিক ভাবেই এই অডিও ক্লিপ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। কী শোনা গিয়েছে তাতে? ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের দাবি, তাতে শোনা গিয়েছে নারীকণ্ঠ বলছে, ‘‘হ্যাঁ! ইউক্রেনীয় মহিলাদের ধর্ষণ করো।’’ এর পর তিনি হেসে বলেন, ‘‘তবে এর বেশি (আমাকে) কিছু বলতে হবে না। বুঝেছ।’’
কথোপকথনে আরও শোনা যায় পুরুষকণ্ঠ: ‘‘তা হলে আমি ধর্ষণ করে তোমাকে কিছু বলব না।’’ তাকে ধর্ষণের ছাড়পত্র দেওয়া হল কি না, তা-ও জানতে চায় পুরুষকণ্ঠটি। নারীকণ্ঠের জবাব: ‘‘হ্যাঁ। যেন আমি কিছু জানতে না পারি।’’ এর পর দু’জনেই হাসতে থাকেন। এর পর নারীকণ্ঠের প্রশ্ন, ‘‘তুমি এ কথা জানতে চাইছ কেন?’’ এর পর পুরুষকণ্ঠে পাল্টা জিজ্ঞাসা, ‘‘আমি কি সত্যিই (ধর্ষণ) করতে পারি?’’ নারীকণ্ঠ: ‘‘হ্যাঁ! তোমাকে অনুমতি দিলাম। (হেসে) তবে গর্ভনিরোধক ব্যবহার কোরো।’’ পুরুষকণ্ঠ: ‘‘ঠিক আছে।’’
এই অডিও ক্লিপটি ফাঁস হওয়ার পরই রেডিও লিবার্টির সঙ্গে মিলে ওই নারী-পুরুষের নাম—পরিচয় জানার চেষ্টা শুরু করেন ইউক্রেনীয় গোয়েন্দারা। তাদের দাবি, ওই ফোন কলের একটি ইউক্রেনের খেরসন এলাকা থেকে করা হয়েছে। ইউক্রেনীয় গোয়েন্দাদের আরও দাবি, ওই দু’টি মোবাইল নম্বরই রাশিয়ার নেটওয়ার্কের। সেগুলি ২৭ বছর বয়সি রাশিয়ার সেনা রোমান এবং তার স্ত্রী ওলগার। দু’জনেই রাশিয়ার ওরেলের বাসিন্দা।
সামাজিকমাধ্যমে রোমানের অ্যাকাউন্টটি ‘প্রাইভেট’ করা রয়েছে। তবে অ্যালেক্সি জাভরুশভ নামে তার এক বন্ধুর সঙ্গে রোমানের ছবি খুঁজে পেয়েছেন বলে দাবি সাংবাদিকদের। ওই দু’জনই ২০১৬ সালের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন বলেও দাবি। রাশিয়ার সামরিক পোশাকে দু’জনেরই ছবি পাওয়া গিয়েছে বলেও সাংবাদিকেরা দাবি করেছেন। তারা রাশিয়ার ১০৮তম গার্ডস এয়ারবোর্ন অ্যাসল্ট রেজিমেন্টের সদস্য বলেও দাবি উঠছে। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে ক্রাইমিয়ার যুদ্ধে রাশিয়ার ওই রেজিমেন্টও ময়দানে নেমেছিল।
গোয়েন্দাদের দাবি, ২০১৮ সাল নাগাদ রোমান এবং ওলগা রাশিয়ার দখলে থাকা ক্রাইমিয়া উপদ্বীপে বসবাস করতে থাকেন। সামাজিকমাধ্যমে ওলগার অ্যাকাউন্টটি যে কেউ দেখতে পারতেন। তবে ১৩ এপ্রিল তা সরিয়ে দেওয়া হয় বলে দাবি। তার আগে সেখানে রোমানের সঙ্গে ওলগার ছবি দেখা গিয়েছে। সেখানকার ছবিতে আরও দেখা গিয়েছে, তাদের একটি চার বছরের সন্তান রয়েছে।
এই অডিও ক্লিপ ফাঁস করার পর ওলগার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় বলে দাবি রেডিও লিবার্টির। তবে ফোন তুললেও রোমান যে খেরসনে রয়েছেন, তা নাকি অস্বীকার করেন ওলগা। রোমানের সঙ্গেও সাংবাদিকরা যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন। তা জানার পর নাকি ওলগা অস্বীকার করেন যে ওই পুরুষকণ্ঠটি তার স্বামী রোমানের। তবে রেডিও লিবার্টির দাবি, অডিও ক্লিপের পুরুষকণ্ঠের সঙ্গে রোমানের কণ্ঠস্বরের মিল পাওয়া গিয়েছে।
রেডিও লিবার্টির কাছে ওলগার দাবি, ক্রাইমিয়ার সেভাস্তোপোলের আহত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন তারা স্বামী রোমান। এর পর তড়িঘড়ি ফোন কেটে দেন তিনি। রেডিও লিবার্টির দাবি, তার পর থেকেই সামাজিকমাধ্যমে যাবতীয় অ্যাকাউন্ট সরিয়ে দেন ওলগা। সূত্র: টাইমস নাউ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন