সাজেদুল গত শনিবার দুপুরে খাতায় সিরিয়াল করে পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ইফতার করেছেন লাইনে বসেই। ভোরে সাহরীও করেছেন। গতকাল সকাল ৮টায় টিকিট বিক্রি শুরু হলে অনেক আশায় বুক বাধেন। ট্রেনের টিকিট পেলে প্রিজনদের নিয়ে রাজশাহীতে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করবেন সবাই একসাথে। কিন্তু রাত দিন এক করেও পাননি কোন টিকিট। টিকিট না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত সাজেদুল গতকাল আরাও পরের দিনের টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়াবেন বলে জানান। সাজেদুল ছাড়াও আরও এমন অনেকেই ১৪ থেকে ১৮ ঘণ্টা কমলাপুরের কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে টিকিট পাননি।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয় শনিবার। প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিন রোববারও টিকিট পেতে কমলাপুর রেলস্টেশনে ভিড় করেছে মানুষ। তবে এদিনও টিকিট নামক সোনার হরিণের দেখা পাননি অনেকে। তাই বাধ্য হয়েই পরের দিনের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন তারা।
ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি প্রথম দিন অর্থাৎ ২৩ এপ্রিল যে পরিমাণ ভিড় ছিল গতকাল রোববার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে, তার চেয়ে দ্বিগুণ ভিড় রয়েছে। ঈদযাত্রার ২৮ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে সকাল আটটা থেকে। কমলাপুরে একযোগে ১৮টি কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রি চলছে। এর মধ্যে দুটি নারী ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য আলাদা কাউন্টার রয়েছে।
কমলাপুর রেলস্টেশন ঘুরে দেখা যায়, হাজার হাজার মানুষ লাইনে দাঁড়িয়েছেন টিকিটের জন্য। কিছু সময় পর পরই দু-একজন করে কাউন্টারের সামনে থেকে টিকিট নিয়ে ফিরছেন। তারা বলছেন দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করলেও টিকিটের দেখা মিলেছে। অনেকে আবার চাহিদা অনুযায়ীও টিকিট পাচ্ছেন না। কাউন্টারে কেউ উঁকিঝুঁকি মারলেই টিকিট প্রত্যাশীরা চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে দিচ্ছেন।
এতো ভোগান্তিতে পড়েও টিকিট কাটতে আসছেন জানতে চাইলে খায়রুল বলেন, পরিবার নিয়ে ভোগান্তি ছাড়া বাড়ি যেতেই ট্রেনের টিকিট কাটতে আসলাম। ঈদে বাসে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। রাস্তায় অনেক জ্যাম থাকে। মহিলাদের নিয়ে ঈদে বাসে করে যাওয়া অনেক ভোগান্তির। ট্রেনের টিকিট নিয়ে রেলের অব্যবস্থাপনাকেই মানুষের এমন দুর্ভোগের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
অনেকে আবার দ্বিতীয় দিনের টিকিট পেতে রাতেই লাইনে দাঁড়িয়েছেন। লাইনে থাকা এসব টিকিটপ্রত্যাশীদের মধ্যে নারীরাও ছিলেন। কমলাপুর রেলস্টেশনে অগ্রিম টিকিট কাটতে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন স্মৃতি আক্তার। তিনি বলেন, রাত ১০টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। সারা রাত লাইনেই ছিলাম। সাহরিও এখানেই করেছি। রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় ছোট বোন জান্নাতুল জুঁইকে নিয়ে থাকেন স্মৃতি আক্তার। ঈদের ছুটিতে বোনকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রাম যাবেন তিনি। দীর্ঘ ১২ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে এখন ক্লান্ত তিনি।
টিকিটপ্রত্যাশী আয়েশা বলেন, রাত ১১টায় মহাখালী থেকে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। রংপুরে যাবো ঈদ করতে। কিন্তু টিকিট কাটতে এসেই এতো ভোগান্তিতে পড়েছি। সেহরি এখানেই করতে হয়েছে। টিকিট দিতেও অনেক দেরি করছে কাউন্টারে, অভিযোগ জানালেন এশা। একই অভিযোগ জানিয়ে লাইনে থাকা আরেক নারী বলেন, স্বামীকে নিয়ে রাতে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। নারীদের লাইনও এতো দীর্ঘ হবে জানতাম না।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, এবারই প্রথম জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে টিকিট দেয়া হচ্ছে। তাই টিকিট দিতে কিছুটা ধীরগতি হচ্ছে। তারপরেও আমরা চেষ্টা করছি যাত্রীরা যেন টিকিটগুলো পান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন