প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের যাত্রীসেবার মান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, আমি বিমানবন্দরের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট নই। অনেক অভিযোগ আসছে। অপ্রয়োজনীয় হয়রানির ঘটনা ঘটছে। প্রধানমন্ত্রী এসবের সমাধান ও সমন্বয়ের কথা বলেছেন। আজকের পরিদর্শনের পর যদি দেখি অভিযোগের হার কমছে না, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একই সঙ্গে বিমানবন্দরে যাত্রী সেবার মান বাড়াতে নতুন অ্যাপ চালু এবং শিগগিরই বিমানবন্দরে ই-গেইট বাস্তবায়ন করা হবে। উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা।
গতকাল শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পরিদর্শন শেষে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
আকস্মিক বিমানবন্দর পরিদর্শনের কারণ জানতে চাইলে সালমান এফ রহমান বলেন, কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বিমানবন্দরে নানা হয়রানি ও অপ্রয়োজনীয় ভোগান্তির খবর প্রকাশ হচ্ছে। সে জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পরিদর্শনে এসেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পরিদর্শন করে দেখে আসো কী কী সমস্যা বিমানবন্দরে। এখানে প্রধানমন্ত্রীর সচিবও রয়েছেন।
শাহজালাল বিমানবন্দর পরিদর্শনে কোন ধরনের সমন্বয়হীনতার ও অভিযোগের সত্যতা পেলেন, জানতে চাইলে সালমান এফ রহমান বলেন, দুই তিন জায়গায় হয়রানির কথা শুনেছিলাম। করোনার সার্টিফিকেট এনেও এখানে দীর্ঘ লাইন হতো। এখানে এখন কিউআর কোড নিয়ে আসায় লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে না। যারা কিউআরকোড আনেন না তারা ভোগান্তিতে পড়ছেন।
অনেকে অভিযোগ করেছেন, যাওয়া ও আসায় ইমিগ্রেশনের সময় টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে পাসপোর্ট সিল করে না। অনেক সময় ইমিগ্রেশনই হয় না বা আননেসেসারি হয়রানি করা হয়। আমরা এসবির চিফকেও নিয়ে আসছি। তিনিও শুনেছেন। এ ধরনের অভিযোগের সত্যতা পেলে ইমিগ্রেশনের সেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, এসব সমস্যা সমাধানে শিগগিরই অ্যাপ উদ্বোধন করা হচ্ছে। ইমিগ্রেশনের সময় ইমিগ্রেশন অফিসার হয়রানি করলে, টাকা চাইলে অভিযোগ করা যাবে অ্যাপসে। অ্যাপস চালু হলে অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন করার প্রবণতাও কমে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা বলেন, এখানে সরকারি যেসব প্রতিষ্ঠান আছে তাদের কর্মকর্তাদের আমি বলেছি, ঢাকায় যারা আসে তারা প্রথম বিমানবন্দরেই নামে। এটাই প্রথম এন্ট্রি। এর বাইরে কী হয় সেটা তো পরে। কিন্তু বিমানবন্দরেই যদি অভিজ্ঞতা খারাপ হয় তাহলে কিন্তু বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক বা ইতিবাচক ভাবমূর্তি বা ধারণা তৈরি হয়। এখানে যদি নেতিবাচক ধারণা হয় তাহলে দেশের ইমেজ নষ্ট হয়। এটা বন্ধ করতে হবে। আমাদের দেশে বিদেশি আসছে তার সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা আমাদের করতে হবে।
কাস্টমস সম্পর্কে সালমান এফ রহমান বলেন, অনেক যাত্রী সোনা আমদানি করেন। কিন্তু সেটা আনলে ট্যাক্স দিতে হবে। এটাই নিয়ম। কিন্তু ডিক্লারেশনে তারা এমাউন্ট দেয় এরপর টাকা দিতে ব্যাংকে যায়। কাস্টমস থেকে ব্যাংক বেশ দূরে। সে জন্য আমরা সময়ক্ষেপণ বন্ধ করতে কাস্টমস ও ব্যাংক পাশাপাশি আনার কথা বলেছি। কাস্টমস আশ্বস্ত করেছে।
আর কাস্টমসে আসা ব্যাগেজ প্রি স্ক্যানিং করা যায় কি না সেটা আমরা পরীক্ষা করতে বলেছি। কারণ প্রিস্ক্যানিং করা গেলে কাস্টমসের বাইরের চাপ কমবে। শুধু সেই ব্যাগেজ চেক করা হবে যেটা আগেই স্ক্যান করে মার্ক করা হয়েছে। যেটা বিদেশে হয়। ওনারা বলছেন, থার্ড টার্মিনালে এসব ব্যবস্থা থাকবে।
ই-গেট এখানে বাস্তবায়ন হয়নি। ওভার অল অনেকগুলো হয়রানি, ভোগান্তির অভিযোগ শুনছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এই পরিদর্শন। সরকার এ ব্যাপারে কঠোর। আশা করছি এসবের সমাধান হবে।
জমজমের পানি আনা প্রসঙ্গে সালমান এফ রহমান বলেন, বিমানে আনা যাবে না, অনলাইনে অর্ডার করলে বাসায় মিলবে জমজমের পানি। সউদী সরকার পরিষ্কার করে দিয়েছে, ব্যক্তিগত লাগেজে জমজমের পানি আনা যাবে না। জমজমের পানি বেচাকেনার কোম্পানি আছে। সেই কোম্পানি থেকে জমজমের পানি কিনতে অনলাইন সেবা আছে। অনলাইনে অর্ডার করলে বাসায় পৌঁছে যাবে জমজমের পানি। এটা ওমরা হজের যাত্রীরা অনেকে জানেন না। লাগেজে জমজমের পানি আনছেন। তখন সউদী এয়ারলাইন্স লাগেজ দুদিন পর পাঠাচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন তারা।
বিমানবন্দর ব্যবস্থাপনায় বর্তমান লোকবল দিয়ে যাত্রী ভোগান্তি কমানো যাচ্ছে না। এটি ঠিক করতে তৃতীয় পক্ষকে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে যুক্ত করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সালমান এফ রহমান বলেন, মোটামুটি একটা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তৃতীয় টার্মিনালে গ্রাউন্ড ও লাগেজ হ্যান্ডলিং এবং স্ক্যানার এসব ব্যবস্থাপনার কাজে আউটসোর্সিং করা হবে। এখনই বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সার্ভিস (মাঠ পরিচালনা সেবা) তৃতীয় পক্ষের কাছে দেয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনই তা করা সম্ভব নয়। কারণ এই প্রক্রিয়া শেষ করতে যে সময় লাগবে ততদিনে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ হয়ে যাবে। এখন যা অবস্থা সেটাকে উন্নত করাই আমাদের লক্ষ্য।
আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, ট্রলি আর কোভিড একসঙ্গে জড়িত। আগে ট্রলিতে লাগেজ রেখে কোভিড টেস্ট করতে যেতেন যাত্রীরা। এখন তো কোডিভ সার্টিফিকেট লাগছে না। তাই ট্রলির ওপর চাপ নেই। আর সব কিছুতে আউট সোর্সিং করা যায় না। যেমনÑকাস্টমস ইমিগ্রেশন কিন্তু সোর্সিং করা সম্ভব নয়। আমরা সেটা এড্রেস করছি।
বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে আধুনিক সব সেবা থাকবে জানিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, এখন তৃতীয় টার্মিনালের আশায় বসে থাকলে হবে না। এখনই সেবা উন্নত করতে হবে।
ব্রিফিংয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জেল হোসেন, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সদস্য (পরিকল্পনা ও পরিচালনা) এয়ার কমোডর সাদিকুর রহমান চৌধুরী, সদস্য (নিরাপত্তা) গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবু সালেহ মাহমুদ মান্নাফী, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম ও পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলাম প্রমুখ।##
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন