অবশেষে ধরা পড়ল পি কে হালদার। বাংলাদেশে বহুল আলোচিত আর্থিক খাতের শীর্ষ জালিয়াত প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভারতে তার বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি ও অর্থের সন্ধানও মিলেছে। প্রাথমিকভাবে পশ্চিমবঙ্গে তার ২০ থেকে ২২টি অভিজাত বাড়ি থেকে জমির দলিলসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক নথি জব্দ করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় পি কে হালদারের সহযোগী সুকুমার মৃধার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এই অর্থের সন্ধান মেলে। পি কে হালদার গ্রেফতার হয়েছে সে খবর ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়।
গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পি কে হালদারের বিভিন্ন অপকর্মের চিত্র তুলে ধরে পোষ্ট দেয়া হয়। এতোদিন বলা হয়েছিল পি কে হালদার কানাডা পালিয়েছেন। এখন সে ভারত থেকে গ্রেফতার হলো। তবে এখনো অধরাই রয়ে গেছেন পি কে হালদারের ক্ষমতার উৎস আর্থিক কেলেঙ্কারির জাদুর কাঠি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডিপুটি গভর্নর এস কে সুর। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, ভারত আনুষ্ঠানিক ভাবে পি কে হালদারের গ্রেফতারের খবর জানালে তাকে দেশে ফিরে আনার ব্যবস্থা করা হবে। একই ধরনের কথা বলেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আর দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খোরশেদ আলম বলেছেন, পি কে হালদারকে দেশে আনতে ৩ থেকে ৬ মাস লেগে যাবে। এর আগে বঙ্গবন্ধুর খুনি মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ক্যাপ্টেন (অব) আবদুল মাজেদ কলকাতায় যুগের পর যুগ ধরে পালিয়ে ছিলেন।
গতকাল শনিবার সকালে পশ্চিমবঙ্গের কাটোয়ায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (এডি) অভিযানে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, পিপলস লিজিংসহ চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নামে-বেনামে বিভিন্নভাবে ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করে দেশ থেকে পালানো পরিচয় গোপন করে নতুন নাম দেয়া শিবশঙ্কর হালদারসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এডি ধারণা করছে, সুকুমার মৃধা ও পি কে হালদার অশোকনগরে দীর্ঘদিনর প্রতিবেশী ছিলেন। দু’জনের দীর্ঘদিনের যোগসাজশে এনআরবি’র বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। এডি’র অভিযানে পি কে হালদার ছাড়াও আরও পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেনÑ তার ভাই প্রাণেশ হালদার, সুকুমার মৃধার মেয়ের জামাই সঞ্জীব হালদার, পি কে হালদারের আত্মীয় প্রণব কুমার হালদার, উত্তম মিত্র ও স্বপন মিত্র। এদিকে পি কে হালদারের স্ত্রীকেও গ্রেফতারের খবরও পাওয়া গেছে। তবে এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পি কে হালদারের ব্যক্তিগত আয়কর আইনজীবী ও অর্থ দেখভাল করতেন সুকুমার মৃধা। তার মাধ্যমেই পি কে হালদার ভারতসহ বিভিন্ন দেশে টাকা পাচার করে। দুদকের হাতে গ্রেফতার হয়ে সুকুমার মৃধা এখন কারাগারে আছেন। পি কে হালদারের সঙ্গে যোগসাজশে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সুকুমার মৃধাকে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের দুই মামলায় আসামি করেছে। এরপর দুদক তাকে গ্রেফতার করে। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। সুকুমার মৃধা উত্তর চব্বিশ পরগনার অশোকনগরে মাছ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত হলেও সেখানে সুকুমারের বেশ কিছু মাছের ভেড়ি রয়েছে। তবে সুকুমার সেখানে নিজেকে পি কে হালদারের ক্লায়েন্ট হিসেবে পরিচয় দিতেন। ভারতে এডি’র অভিযানে গ্রেফতার করা হয়েছে সুকুমারের মেয়ে অনিন্দিতা মৃধার স্বামী সঞ্জীব হালাদার। তিনিও বাংলাদেশি নাগরিক। পি কে হালদারের ভাই এনআরবি-কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত প্রীতিশ হালদার অশোকনগরে তার নামে একটি বিলাসবহুল বাগানবাড়ি কেনেন। দুই বছর আগে বাড়িটি সুকুমারের নামে আরেক ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর করেন প্রীতিশ। ওই বাড়িতেই থাকতেন সুকুমারের মেয়েজামাই সঞ্জীব।
এডির একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পি কে হালদার সে দেশে (ভারত) শিবশঙ্কর হালদার নাম ধারণ করেছিলেন। এই নামে তিনি পশ্চিমবঙ্গ থেকে রেশন কার্ড (আধার কার্ড) করে নেন। এমনকি ভারতীয় ভোটার কার্ড, প্যান ও আধার কার্ডের মতো বিভিন্ন সরকারি পরিচয় জালিয়াতি করে তিনি নিজেকে শিবশঙ্কর হালদার বানিয়ে নেন। এছাড়া তিনি নিজেকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে জাহির করছিলেন। এডি’র অভিযানে শিবশঙ্কর হালদার নামে গ্রেফতার ব্যক্তিই পি কে হালদার বলে নিশ্চিত করেছেন কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস। জানা গেছে, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ও দুদকের অনুরোধে ভারতে এ অভিযান চালায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (এডি)। এই সংস্থা আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্ত করে থাকে।
এর আগে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের বৈধ সম্পদের খোঁজে গত শুক্রবার দিনভর পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায় ভারতের তদন্তকারী সংস্থা এডি। এ সময় নামে-বেনামে থাকা বেশ কয়েকটি কোম্পানির খোঁজ মিলে। অভিযানে পি কে হালদারের ব্যক্তিগত আইনজীবী সুকুমার রায়ের বাড়ি তল্লাশি করে জব্দ করা হয় গুরুত্বপূর্ণ নথি ও উদ্ধার করা হয় নগদ অর্থও। কলকাতার তদন্তকারি সংস্থা বলছে, তদন্ত শেষেই, জব্দ করা অর্থের উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত করে বলা যাবে। এদিকে পি কে হালদারকে ফেরত আনার সঙ্গে সঙ্গে পাচার হওয়া হাজার টাকা উদ্ধার এবং সহযোগীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে এখনই উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। একইসঙ্গে এভাবেই বিভিন্ন ব্যাক্তি ও গ্রুপকে জালিয়াতিতে সহায়তাকারী বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থেকে অন্যান্য দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনার তাগিদ দিয়েছেন তারা। এছাড়া ভারত-কানাডাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে তার পাচার করা টাকা উদ্ধারে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরুর তাগিদও দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
সূত্র মতে, গত শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের কমপক্ষে ৯টি স্থানে একযোগে অভিযান চালায় এডি। এ সময় আরও অভিযান চলে পি কে হালদারের সহযোগী সুকুমার মৃধা, প্রীতিশ কুমার হালদার, প্রাণেশ কুমার হালদার এবং তাদের সহযোগীদের বাড়িতে। সুকুমার মৃধার বাড়ি থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি জব্দ করা হয়। এছাড়া কয়েকটি অভিজাত বাড়িসহ বিপুল সম্পত্তির খোঁজ মিলে। বাড়িগুলো থেকে জমির দলিলসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক নথি উদ্ধার করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে পি কে হালদারের ২০ থেকে ২২টি বাড়ি আছে বলে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে। যাদের বাসায় অভিযান পরিচালনা করা হয় তারা সবাই বাংলাদেশি নাগরিক। তাদের নামে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে সম্পত্তির খোঁজও মিলেছে। এদিকে কলকাতা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অশোকনগর পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে সুকুমার মৃধার বিশাল বিলাসী বাড়ির সন্ধান পেয়েছে ভারতের এডি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মৃধাকে তারা মাছ ব্যবসায়ী হিসেবে চিনতেন। পি কে হালদার ও সুকুমার মৃধা অশোকনগরে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী। ইডি ধারণা করছে, এই দু’জনের দীর্ঘদিনের যোগসাজশে এনআরবি’র বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।
সুকুমার মৃধা বাংলাদেশে বসবাস করলেও পশ্চিমবঙ্গের তার যাতায়াত ছিল মাছের ব্যবসায়ী হিসেবে। সেই সূত্র ধরেই ভারতে গিয়ে তিনি ভুয়া পরিচয়ে কিছু কোম্পানি খুলে পি কে হালদারের টাকা পাচার করেন ও বিপুল সম্পত্তি কেনেন। জানা গেছে, পরিচয় গোপন করে শিবশঙ্কর হালদার নামে ভারতে নাগরিকত্বও নিয়েছেন পি কে হালদার। সেই পরিচয়ে সেখানে রেশন কার্ডও সংগ্রহ করেছেন এবং বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। সুকুমারের মাধ্যমে পাচার করা টাকা ও সম্পদের মালিকও শিবশঙ্কর ওরফে পি কে হালদার। ভারতী পল্লি এলাকার পাশে নবজীবন পল্লিতে বিলাসবহুল বাগানবাড়ি পাওয়া গেছে পি কে হালদারের আত্মীয় প্রণব কুমার হালদারের। ঠিক তার পাশেই আরেক বিলাসবহুল বাগানবাড়ি সুকুমার মৃধার। এলাকাবাসী সুকুমার মৃধার বিলাসী জীবন দেখে সব সময়ই সন্দেহ করতো।
এই এলাকাতেই একাধিক সম্পত্তি ক্রয় করেছে হালদার-মৃধা জুটি। এর মধ্যে গত শুক্রবার শুধু অশোকনগরেই তিন বাড়িতে তল্লাশি চালায় এডি। যার একটিতে এতদিন একাই থাকতেন সুকুমার মৃধার জামাতা সঞ্জীব হালদার।
পি কে হালদারের আরেক সহযোগী স্বপন মিত্রের বাড়িতেও অভিযান চালানো হয়। অশোকনগরের একই এলাকার বাসিন্দা স্বপন মিত্র অর্থ পাচারের কাজে অন্যতম অভিযুক্ত। তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে একাধিক নথি পাওয়া গেছে। এরপর দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে আটক করে এডি।
অশোকনগরের গণ্ডি ছাড়িয়ে কলকাতার বাইপাস সংলগ্ন এলাকা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার অভিজাত এলাকায় পি কে হালদার চক্রের একাধিক বাড়ি ও অফিস রয়েছে। সেখানেও তল্লাশি চালিয়েছে ভারতের অর্থ-সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট (এডি)।
সূত্র মতে, আমির খান অভিনীত আলোচিত হিন্দি সিনেমা পি কের মতোই বাংলাদেশে আর্থিক খাতের শীর্ষ জালিয়াত পি কে হালদার নামটা আলোচিত এবং একই সঙ্গে সমালোচিত। ২০১৪ সাল থেকে একে একে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, পিপলস লিজিং, এফএএস ফাইন্যান্স ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি দখলে নেন পি কে হালদার। এই চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে থেকে ঋণের নামে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেন এনআরবি গ্লোবালের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদার। আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবসহ ঘনিষ্টজনদের নামে-বেনামে কোম্পানি খুলে কানাডা সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত ও ভারতে বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার করেন পি কে। গ্রাহকের সাড়ে ৩ হাজার টাকা হাতিয়ে নিতে নাম সর্বস্ব ৩০টির বেশি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন পি কে হালদার। যেগুলোতে নিজের নাম না থাকলেও মা, ভাইসহ আত্মীয়দের নাম রয়েছে। ১৭৮টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে পিপলস লিজিং অবসায়িত করেছে সরকার।
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকা অর্থ আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এরই মধ্যে ৩৪টি মামলা করেছে দুদক। তাকে ধরতে এরই মধ্যে ইন্টারপোলের সহায়তাও চেয়েছিল দুদক। পি কে হালদার দীর্ঘদিন ধরে ভারতে লুকিয়ে ছিলেন। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডায় আত্মগোপনে ছিলেন তিনি।
এদিকে পি কে হালদারের গ্রেফতারের সংবাদে আতঙ্কে আছেন ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি আত্মসাতে সহায়তাকারী দেড় ডজন বান্ধবীসহ শতাধিক সহযোগী। এদের মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম। এ দু’জনই পি কে হালদারের আর্থিক কেলেঙ্কারির অন্যতম ক্ষমতার উৎস। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থেকে এভাবে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সাহায্য করতেন এস কে সুর চৌধুরী ও শাহ আলম। এছাড়া পি কে হালদারের ১৫ বান্ধবী ও ঘনিষ্ট নারীদের ব্যাংক হিসাবে অন্তত ৮৬৭ কোটি টাকার সন্ধান পেয়েছে দুদুক।
এরই মধ্যে অর্থ আত্মসাতে জড়িত ৮৩ জন নিয়ে তদন্ত করছে দুদক। অন্তত ৩ হাজার কোটি টাকার সম্পদ আদালতের নির্দেশনা নিয়ে জব্দও করেছে দুদক। বিভিন্ন মামলায় এক ডজনেরও বেশি ব্যক্তিকে গ্রেফতারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে ১১ জন দোষ স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। একই সঙ্গে ৫২ আসামি ও অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে দুদক।
এছাড়া জালিয়াতিতে সহায়তাকারী অবন্তিকা, শিমু রয়, পূর্ণিমা রানী, সুপ্তি চৌধুরী, শাহনাজ, সুষ্মিতা নামীয় পি কে হালদারের বান্ধবীদের নিয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুদক ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এদিকে পি কে হালদারের আরেক সহযোগী এ কে এম সাহিদ রেজাকে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক ‘মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালক’ থেকে গত বছর অপসারণ করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থেকে এভাবেই বিভিন্ন ব্যাক্তি ও গ্রুপকে সহায়তাকারী অন্যান্য দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের খুঁজে বের করা না হলে আর্থিক খাতের দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ হবে না বলে মনে করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, এ ধরনের দুর্নীতি বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরেই শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করা দরকার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. রুমানা হক এবং ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক আলী আহমেদ বলেছেন, এখনই সময় উদ্যেগ নেয়ার। একই সঙ্গে গ্রাহকদের টাকা উদ্ধারে ভারত-কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের সাথে কূটনৈতিক তৎপরতার শুরুর তাগিদও দিয়েছেন তারা।
পি কে’র জাদুর কাঠি এস কে সুর
প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) কাছ থেকে প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা নিতেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম। আর পি কের ক্ষমতার উৎস ছিলেন তৎকালীন ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিয়ানে পি কে কেলেঙ্কারিতে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে সেসব আসামিদের দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ঘুরে ফিরে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক এই দুই কর্মকর্তার কথাই। এ ছাড়া পি কের বান্ধবী অবন্তিকা বড়াল ও নাহিদা রুনাইকে ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা লোপাটের তথ্য পেয়েছে দুদক। পিপলস লিজিংয়ের রাশেদুল হক তার জবানবন্দি বলেছেন, প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা নিতো শাহ আলম। আর এসকে সুর ছিলেন পি কের জাদুর কাঠি। দুদক আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম আদালতে জানিয়েছেন, এ দুজনকে (অবন্তিকা বড়াল- নাহিদা রুনাই) ব্যবহার করে ভুয়া ঋণ নেয়া এবং উপর মহলে অনৈতিক সুবিধা আদায় করতেন পি কে। মূলত তাদের ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন কাজে।
সূত্র মতে, ক্যাসিনো অভিযানের ধারাবাহিকতায় পি কে হালদারের বিরুদ্ধে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ রয়েছে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এসব অর্থ লোপাটের তথ্য চাপা দিতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন টিম। এসব অনিয়মে সহায়তা করতেন সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম। এদিকে অভিযোগ রয়েছে এস কে সুর বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর থাকাকালীন দেশের বড় একটি শিল্পগোষ্ঠী থেকে মাসে ২৫ লাখ টাকা নিতেন। পাশাপাশি ওই গ্রুপটিই নানান সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে এস কে সুরের অনিয়মে সাহায্য করতেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন