একসময় ভালো ব্যবসা করলেও প্রশান্ত কুমার হালদার বা পি কে হালদারের ব্যাপক লুটপাটের কারণে এখন নানা সমস্যায় পতিত হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (আইএলএফএসএল)।
পি কে তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে আইএলএফএসএল থেকে মোটা অঙ্কের টাকা ঋণ হিসেবে নিয়ে গেছে। এর মধ্যে রেপ্টাইলস ফার্ম লিমিটেড, আনান কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, রহমান কেমিক্যালস এবং নর্দান জুটের কাছে বর্তমানে আইএলএফএসএল’র পাওনা ২৬০ কোটি টাকা। তবে এই চার প্রতিষ্ঠানের বন্ধকি সম্পত্তির মূল্য মাত্র ৩৬ কোটি টাকা। এজন্য আটকে যাওয়া ঋণের টাকা আদায় করতে পি কে হালদারের এই চার প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে আইএলএফএসএল। গতকাল বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির ২৬তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) শেষে সংবাদ সম্মেলনে আইএলএফএসএল’র চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম খান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. মশিউর রহমান এসব কথা বলেন।
এ উদ্যোগের বিষয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, পি কে হালদারের অনেকগুলো কোম্পানি ছিল। আমরা প্রথম চেষ্টা করি হালদারকে যদি আনতে পারি, তাহলে তার কাছে থেকে এগুলো নেওয়া সোজা হবে। কিন্তু প্রক্রিয়ায় গেলে বিক্রি করতে অনেক বছর লাগে। আবার এমন প্রক্রিয়ায় করেছে তাকে সরাসরি ধরা যায় না। আমরা চেয়েছিলাম হারদারকে আনতে, সেজন্য কোর্টে আবেদন করেছিলাম। কোর্টও বলেছিলেন, কিন্তু তিনি আর আসেননি। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বলেছিল রেড অ্যালার্ট দিয়ে তাকে নিয়ে আসবে, কিন্তু খবর নেই। আগামীতে আসবেন কি না জানি না।
নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, সে কারণে আমরা তার কোম্পানি রেপ্টাইলস ফার্ম লিমিটেড পুনর্গঠন করে চিন্তা করছি কিছু আয় করা যায় কি না। কেন করেছি? ওখানে প্রায় দেড় হাজার কুমির মারা গেছে। দুই বছর খেতে পায়নি। অনেক জিনিসপত্র লোকজন নিয়ে গেছে। সেটা এখন পুনর্গঠন করা দরকার। আমরা দেখছি কুমিরের ওখানে লোকজন বেশি গেলে আর ডিম পাড়ে না, প্রজনন হয় না। সেজন্য আমরা ভাবছি সব জায়গায় ডিস্টার্ব না করে, একটা জায়গায় দিলে লোকে যাবে, এজন্য টিকিট কাটবে। আর একটা আমাদের চিন্তায় আছে, ওখানে রিসোর্ট থাকবে। লোকজন ইনভেস্ট করবে, আমরা ইনভেস্টর খুঁজছি। তারা ঘর বানাবে, তার পাশে ওখান থেকে আমরা কুমির দেব। তাদের সঙ্গে আমাদের একটা জয়েন্ট ভেঞ্চার হবে, প্রফিট শেয়ারিং হবে।
তিনি বলেন, আর একটা কোম্পানি আনান কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ। এটা খুবই ভালো মুনাফার কোম্পানি। ফিটকিরি তৈরির কোম্পানি, তার-টার চুরি করে নিয়ে গেছে লোকজন। সেটা কোর্টের অনুমোদন নিয়ে পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন হয়েছে। এখন আমরা হাত দিয়েছি। চেয়ারম্যান আছেন, পরিচালক আছেন। তারা চেষ্টা করছেন এটা চালু করতে পারেন কি না। এটা যদি চালু করতে পারেন, তাহলে প্রফিট হবে।
তিনি আরও বলেন, তৃতীয় কোম্পানি হলো রহমান কেমিক্যালস, এটা গøুকোজ তৈরি করে। সেটা আমরা অনুমতি পেয়েছি, কিন্তু বোর্ড এখনো পুনর্গঠন করিনি। আমরা দেখছি কী কী অসুবিধা আছে, কতদূর এগোতে পারব। আর একটা নর্দান জুট। আমরা লোকজন খুঁজছি, পুরোনো ঋণ থাকল, এর ওপর তাদের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হবে, এটা চালাবে এবং আমাদের কিছু টাকা দেবে। আমরা এটা করছি, কারণ আমরা হিসাব করে দেখেছি মোট ঋণ ২৬০ কোটি টাকা, কিন্তু আমরা বিক্রি করলে ৩৬ কোটি টাকার মতো পাবো। তাহলে বিক্রি করে তো আমাদের কোনো লাভ নেই। সে কারণে আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আইএলএফএসএল’র স্বতন্ত্র পরিচালক সেয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ (অব.) মো. সফিকুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. মেফতাউল করিম, ব্যারিস্টার মুহাম্মদ আশরাফ আলী এবং মো. এনামুল হাসান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন