বর্তমানে প্রেক্ষাপটে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি সরকারের জন্য আত্মঘাতী পদক্ষেপ হবে বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্যা ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার্স অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।
সংগঠনটি বলছে, কোভিড এবং ইউক্রেন পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি, শিপিং ও পরিবহন ব্যয় অত্যাধিক বেড়ে যাওয়ার প্রভাব আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে পড়েছে। উৎপাদন ব্যয় অত্যাধিক বেড়ে যাওয়ায় আমাদের রফতানি খাতের পক্ষে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
শনিবার (২১ মে) বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর এফবিসিসিআই আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।
লিখিত বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, চলমান এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হলে কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস আরও বেড়ে যাবে। ফলে আমাদের উৎপাদন ও রফতানি খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখা সম্ভব হবে না। মূল্যস্ফীতির কারণে জনজীবনে অস্থিরতার সৃষ্টি হবে। এছাড়াও জাতীয় ভিশন-২০৪১, এসডিজি-২০০০ অর্জন ও এসডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার ক্ষেত্রেও বাধার সৃষ্টি হবে।
তিনি বলেন, এমতাবস্থায় জ্বালানী ও বিদ্যুৎ খাতের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবটি আপাতত স্থগিত করে কোভিড এবং ইউক্রেন সংকটের কারণে বিশ্বব্যাপী বিরাজমান সংকটময় পরিস্থিতি প্রশমিত হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। এতে সাধারণ জনগণকে স্বস্তি দেওয়ার পাশাপাশি শিল্পখাতের সক্ষমতা বজায় থাকবে। সার্বিক অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সেসাথে আমরা জাতীয় ভিশন-২০৪১, এসডিজি ২০০০ অর্জন ও এলডিসি এ্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম হবো।
জ্বালানি ও বিদ্যুত খাতের উন্নয়নে কয়েকটি সুপারিশ করেছে এফবিসিসিআই। সুপারিশগুলো হলো, বার্ক আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে জ্বালানী ও বিদ্যুৎ খাতের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা আমূল সংস্কার করা যেতে পারে। সকল প্রকার অনিয়ম, অপচয়, অবৈধ সংযোগসহ যাবতীয় অপব্যবস্থা জরুরি ভিত্তিতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে নিরসন করা। অদক্ষ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ করা। ব্যবহৃত বিদ্যুতের চেয়ে অতিরিক্ত ৩০ শতাংশ রিজার্ভ বিদ্যুতের সংস্থান করে অতিরিক্ত উৎপাদন বন্ধ করে অহেতুক খরচ কমিয়ে আনা। বিদ্যুৎ ক্যাপাসিটি চার্জ বাতিল করে অলস উৎপাদনকারীকে অর্থ পরিশোধ বন্ধ করা। ভর্তুকি প্রাপ্ত জ্বালানী খাতের উপর শুল্ক মূসক প্রত্যাহার করা। তবে প্রয়োজনে পরিমাণ ভিত্তিক ন্যূনতম শুল্ক আরোপ করা যেতে পারে। গ্যাসের মূল্য সকল খাতের জন্য সাধারণ হারে নির্ধারণ করা এবং এই উদ্দেশ্যে বার্ক আইনের প্রবিধান অনুযায়ী গ্যাসের উৎপাদন ও বিতরণ খরচসহ অন্যান্য বিধিবদ্ধ খাত পর্যালোচনা করে গ্যাসের সরবরাহ মূল্য নির্ধারণ করা। সরবরাহ মূল্য বিদ্যমান হারে বজায় রেখে বাড়তি ব্যয় সরকারি ভর্তুকির মাধ্যমে সমন্বয় করা যেতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন— বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ারুল আলম পারভেজ, বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিমসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন