দুই বাংলার সাবেক অ্যাথলেটদের মিলনমেলা খ্যাত পশ্চিমবঙ্গ মাস্টার্স অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতা। এ আসরে ভারত ও বাংলাদেশের এক সময়ের ঝড় তোলা সাবেক অ্যাথলেটরা অংশ নেন। যারা বয়সের ভারে এখন অনেকটাই ন্যুব্জ। অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাকে দৌড়ানো তো দূরের কথা, স্বাভাবিক চলাফেরা করাটাও মাঝে মধ্যে তাদের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। অথচ তারাই কিনা লংজাম্প, হাইজাম্প, ডিসকাস থ্রো, শটপুট কিংবা ১০০ মিটার, ২০০ মিটার স্প্রিন্ট ও ৫০০০, ১০০০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। ৩৫ উর্ধ্ব থেকে ৮০ উর্ধ্ব পর্যন্ত বয়সী অ্যাথলেটরা খেলে থাকেন মাস্টার্স অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায়। নতুন প্রজন্মকে অ্যাথলেটিক্সের প্রতি উৎসাহিত করতে সাবেকদের এ অংশগ্রহণ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। প্রায় বৃদ্ধ বয়সে অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাকে নেমে সাবেকরা শুধু অ্যাথলেটিক্সের প্রতি ভালোবাসাই প্রকাশ করেন না, শারীরিকভাবে নিজেদের সুস্থ রাখার উপায় খুঁজে পান। ভারতের কোলকাতায় এমনই এক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সাবেক কৃতি অ্যাথলেটরা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে দেশের জন্য বয়ে আনলেন অনন্য এক সাফল্য। ১২ ও ১৩ নভেম্বর কোলকাতার সল্টলেক স্টেডিয়ামের সাঁই অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাকে অনুষ্ঠিত হলো ৩২তম পশ্চিমবঙ্গ মাস্টার্স অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতা। এ আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়ে লাল-সবুজের সাবেক অ্যাথলেটরা প্রমাণ করলেন, প্রায় বৃদ্ধ বয়সেও তারা ফুরিয়ে যাননি। এখনো জ্বলে উঠতে পারেন।
সল্টলেক স্টেডিয়ামের সাই অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাকে দু’দিন ব্যাপী ৩২তম পশ্চিমবঙ্গ মাস্টার্স অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও অ্যাথলেটিক্স অ্যাসোসিয়েশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গলের সহ-সভাপতি কমলেশ চ্যাটার্জী। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাথলেটিক্স অ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক স্বপন রাহা, বাংলাদেশ মাস্টার্স অ্যাথলেটিক্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ইব্রাহিম চেঙ্গিস, বাংলাদেশ মাস্টার্স অ্যাথলেটিক্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ইকবাল হোসেন ও পশ্চিমবঙ্গ মাস্টার্স অ্যাথলেটিক্স অ্যাসেসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক স্বপন দাস।
প্রতিযোগিতায় ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের ৩৫ উর্ধ্ব থেকে ৮০ উর্ধ্ব বয়সীর প্রায় সাড়ে ছয়শ’ এবং বাংলাদেশের ৩৫ উর্ধ্ব থেকে ৬৫ উর্ধ্ব বয়সীর ৩৮ জন সাবেক অ্যাথলেটরা অংশ নেন। প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ পুরুষ ও মহিলা বিভাগের অ্যাথলেটরা ১৯ স্বর্ণ, ২৭ রৌপ্য ও ৫টি ব্রোঞ্জসহ ৫১টি পদক জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়। এর মধ্যে পুরুষরা ১৫ স্বর্ণ, ২১ রূপা ও পাঁচটি ব্রোঞ্জ এবং মহিলারা ৪ স্বর্ণ ও ছয়টি রৌপ্যপদক জয় করেন। বাংলাদেশ দলের দলনেতা ছিলেন মো. ইব্রাহিম চেঙ্গিস। ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মো.ইকবাল হোসেন ও দলের অধিনায়ক ছিলেন মহিউদ্দিন আহমেদ মোস্তাক।
কোলকাতায় বাংলাদেশ মাস্টার্স অ্যাথলেটিক্স দলের সাফল্যে উৎফুল্ল দলনেতা ইব্রাহিম চেঙ্গিস। তিনি বলেন, ‘দুই বাংলার সাবেক অ্যাথলেটদের মিলনমেলা খ্যাত এ আসরে আমাদের অ্যাথলেটরা প্রত্যাশার চেয়েও ভালো ফল করেছেন। এ জন্য আমি তাদেরকে জানায় অভিনন্দন। এমন প্রতিযোগিতার ধারাবাহিকতা থাকলে আমাদের সাবেক অ্যাথলেটরা সুস্থভাবে বেঁচে থেকে ভবিষ্যত প্রজন্মকে উৎসাহিত করতে পারবেন।’
ম্যানোজর ইকবাল হোসেন বলেন, ‘এই সাফল্য এবারই শুধু ধরা দেয়নি। এর আগেও আমরা মাস্টার্স মিট থেকে সাফল্য বয়ে এনেছি। যার শুরু প্রায় আড়াই বছর আগে। এর আগে ২০১৪ সালে ভারতের মুর্শিদাবাদে ৩০তম পশ্চিমবঙ্গ মাস্টার্স অ্যাথলেটিক্সে প্রথম অংশ নিয়ে ১২টি স্বর্ণপদক জয় করে আমরা এই প্রতিযোগিতায় শুভসূচনা করি। ২০১৫ সালের মে মাসে ভারতের গোয়ায় অনুষ্ঠিত হয় অল ইন্ডিয়া মাস্টার্স অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতা। এখান থেকে বাংলাদেশ দল সাতটি সোনা, চারটি রূপা ও তিনটি ব্রোঞ্জ জিতে নেয়। ওই বছরের নভেম্বরে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড মাস্টার্স অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে আমরা অংশ নিলেও কোন পদক জিততে পারিনি। তবে পরের মাসেই ঢাকায় প্রথম জাতীয় মাস্টার্স ও আমন্ত্রণমূলক অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ দল অংশ নেয়। সেখানে আমাদের অর্জন ছিল ৬২ স্বর্ন, ৩০ রূপা ও সাতটি ব্রোঞ্জপদক। বিপরীতে পশ্চিমবঙ্গ দল ২১ স্বর্ণ, ১৩ রৌপ্য ও ৪ ব্রোঞ্জপদক জিতে।’
তিনি আরও বলেন,‘চলতি বছরের মার্চ মাসের শুরুতে ভারতের মহিশুরে অল ইন্ডিয়া মাস্টার্স অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের চার সদস্যের দল একটি স্বর্ণ, দু’টি রূপা ও একটি ব্রোঞ্জপদক জিতে ভারতে পদক জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখে।
আর মার্চের শেষ সপ্তাহে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত এশিয়ান মাস্টার্স অ্যাথলেটিক্সের শর্টপুটে রুপা জিতে বাংলাদেশের সাবেক কৃতি মহিলা অ্যাথলেট নেলী জেসমিন নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেন। শুধু তাই নয়, এ বছরের ২৬ অক্টোবর থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার পার্থে ওয়ার্ল্ড মাস্টার্স অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতাও অংশ নেয় বাংলাদেশ মাস্টার্স অ্যাথলেটিক্স দল। তবে পার্থ থেকে কোন সাফল্য না আসলেও কোলকাতায় ঠিকই সফলতার মুখ দেখেন লাল-সবুজের সাবেক অ্যাথলেটরা। ১২ ও ১৩ নভেম্বর কোলকাতার সল্টলেক স্টেডিয়ামের সাই অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাকে শেষ হওয়া ৩২তম পশ্চিমবঙ্গ মাস্টার্স অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে সক্ষম হই আমরা।’
বাংলাদেশ মাস্টার্স অ্যাথলেটিক্স দলের অধিনায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ মোস্তাক বলেন, ‘দলের সাফল্যে আমি খুশী। ধারাবাহিকভাবে আমাদের অ্যাথলেটরা যদি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেন, তাহলে তারা আরও ভালো সাফল্য বয়ে আনবেন দেশের জন্য। সাবেক অ্যাথলেটদের সাফল্যে উজ্জীবিত হয়ে বর্তমান প্রজন্মের অ্যাথলেটরা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ভালো ফল করতে উৎসাহীত হবেন।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন