বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

ওযুর মহিমা

মুন্সি আব্দুল কাদির | প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০২২, ১২:০৫ এএম

নামাজ আল্লাহ প্রাপ্তির সর্বশ্রেষ্ট মাধ্যম, মুমিনের হৃদয়ের প্রশান্তি। নামাজ বান্দাকে দুনিয়ার সব কিছু থেকে আলাদা করে একমাত্র মাওলার সামনে হাজির করে দেয়। তবে এই নামাজের মাধ্যমে প্রভুর সামনে হাজিরা দিতে হলে তাকে নিদ্ধিষ্ট নিয়মে পবিত্রতা অর্জন করতে হয়। এই পবিত্রতা বা ওযুর মাধ্যমে তাকে বাহ্যিক এবং আভ্যন্তরিন পবিত্রতা অর্জন করতে হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে ইমানদার বান্দাগন, যখন তোমরা নামাজে খাড়া হও, তখন তোমাদের মুখমন্ডল ও কনুই পর্যন্ত তোমাদের হাত ধৌত কর, আর তোমাদের মাথা মাসেহ কর এবং গোড়ালি পর্যন্ত তোমাদের দুই পা ধৌত কর। সুরা মায়েদা আয়াত ৬। আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কোন ব্যক্তি যখন অপবিত্র হয়ে যায়, তখন সে ওযু না করা পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা তার নামাজ কবুল করেন না। বুখারী, মুসলিম। আয়াতে কারীমায় উল্লেখিত চারটি কাজ ওযুর ফরজ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে কিভাবে ওযু করতে হবে তা শিখিয়ে দিয়েছেন।
এই ওয়ুতে আমরা বাহ্যিক পবিত্রতার দিকেই খেয়াল রাখি। কিন্তু এর মধ্যে আভ্যন্তরিন পবিত্রতাও নিহিত রয়েছে। নামাজের প্রস্তুতি হিসাবে ওযুও আল্লাহ প্রাপ্তির, আল্লাহর নির্দেশিত একটি ইবাদত। আমরা নামাজের প্রস্তুতি হিসাবে ওযু করি। ইবাদত হিসাবে মনোযোগের সাথে ওযূ করতে খুব কম দেখা যায়। ওযু আমাদের বাহ্যিক পবিত্রতা আনয়ন করে এবং আভ্যন্তরিত কুলশতা তথা গুনাহ মাফ করে । ওযুতে অনেক ফজিলত রয়েছে।

হযরত ওসমান রাঃ বর্ণনা করেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি উত্তম রূপে ওযু করবে তার শরীরের গোনাহগুলো ধুয়ে যাবে, এমনকি তার আঙ্গুলের নখের নিচে থেকেও । সহিহ মুসলিম।

আবু হুরায়রা রাঃ বলেন, ওযুর পানি ঝরতে ঝরতে যখন নখের শেষ প্রান্তের এক ফোঁটা পানিও ঝরে যায় সেই এক ফোঁটা পানির সাথে গুনাহ সমূহও ঝরে যায়।

আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তায়লা কিসের দ্বারা গুনাহ মাফ করে দেন আর কিসের দ্বারা মর্যাদা বৃদ্ধি করেন, তা কি আমি তোমাদের বলব? লোকেরা জবাব বললো, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলুন। তিনি বললেন, কষ্টকর অবস্থার মধ্যেও ভালভাবে ওযু করা। মসজিদের দিকে বেশী বেশী পা ফেলা এক নামাজের পর আরেক নামাজের জন্য অপেক্ষা করা। এটা হল বিরাত, এটা হল রিবাত, এটা হল বিরাত (রিবাত হল শত্রুকে প্রতিহত করার জন্য সর্বদা সীমান্ত পাহারা দেওয়া)। মুয়াত্তা ইমাম মালেক, মুসলিম, তিরমিজি।

হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মানুষের ভিতরে বিদ্যমান প্রতিটি ভাল গুন দ্বারা আল্লাহ তায়ালা তার যাবতীয় কাজ সংশোধন করে থাকেন। তবে নামাজের জন্য তার পবিত্রতা অর্জন এমন ভাল গুন, যার দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহ মোচন করেন। এরপর তার নামাজটা তার জন্য অতিরিক্ত হিসেবে সংরক্ষিত থাকে। তাবরানি, বাযযার।

নুয়াইম মুজমির রাহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু হুরায়রা রাঃ এর সাথে ছাদে উঠলাম। তারপর তিনি ওযু করে বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন আমার উম্মাতকে এমন অবস্থায় আহবান করা হবে যে, ওযুর প্রভাবে তাদের হাত পা ও মুখ উজ্জ্বল থাকবে। তাই তোমাদের মধ্যে যে এই উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে নিতে পারে, সে যেন তা করে। সহিহ বুখারী, মুসলিম।

আব্দুল্লাহ আস সোনাবিজী রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বান্দা যখন ওযু করে তখন কুলি করা মাত্র তার মুখ দিয়ে গুনাহগুলো বের হয়ে যায়। তারপর যখন সে নাকে পানি দেয় নাক দিয়ে গুনাহগুলো বের হয়ে যায়। তারপর যখন সে মুখ ধৌত করে তখন তার গুনাহগুলো মুখমন্ডল দিয়ে বের হয়ে যায়। এমনকি তা তার চোখের পলকের নীচ থেকেও বের হয়ে যায়। তারপর যখন সে তার দুই হাত ধৌত করে তখন তার গুনাহগুলো হাত দিয়ে বের হয়ে যায়। এমনকি তার হাতের নখ দিয়েও বের হয়ে যায়। তারপর যখন সে মাথা মাসেহ করে, মাথা দিয়ে তার গুনাহগুলো বের হয়ে যায়। এমনকি তার দুই কান থেকেও বের হয়ে যায়। তারপর যখন সে দুই পা ধৌত করে, তখন তার দুই পা থেকে গুনাহগুলো বের হয়ে যায়। এমনকি দুই পায়ের নখের নিচ থেকেও গুনাহগুলো বের হয়ে য়ায়। তারপর তার মসজিদে যাওয়া ও নামাজ আদায় করা একটি অতিরিক্ত ব্যাপার। মুয়াত্তা ইমাম মালেক, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ।

আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরস্থানে এলেন। তারপর বললেন, হে মুমিনদের ঘরে অবস্থান কারী লোকেরা, তোমাদের প্রতি সালাম। আল্লাহ চাহেনতো তোমাদের সাথে শীঘ্রই মিলিত হব। আমার বড়ই ইচ্ছা হয়, যদি আমার ভাইদের দেখতে পেতাম! লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমরা কি আপনার ভাই নই? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা আমার সাথী। আর আমার ভাই হল তারা যারা এখনও দুনিয়াতে আসেনি। লোকেরা বলল হে আল্লাহর রাসুল আপনার উম্মতের যারা এখনও আসেনি তাদের আপনি কিভাবে চিনবেন? তিনি বললেন, তোমরা ভেবে দেখেছ কি এক ঝাক কালো ঘোড়ার মধ্যে যদি এক পাল সাদা ঘোড়া থাকে, তবে কি সে তার ঘোড়গুলোকে চিনতে পারবে না? লোকেরা জবাব দিল হে আল্লাহর রাসুল পারবে। তিনি বললেন, আমার ভাইয়েরা ওযুর কারনে উজ্জ্বল অঙ্গ প্রতঙ্গ নিয়ে আসবে। আমি হাউজে কাউছার তাদের নিকট এগিয়ে নিয়ে আসব। (চলবে)

লেখক : জিবি ইনচার্জ, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ। লালদিঘীরপাড় শাখা, সিলেট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন