পূর্বে প্রকাশিতের পর : সাবধান বহু লোককে আমার হাউস থেকে হটিয়ে দেওয়া হবে, যেমন ভাবে পথহারা উটকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। আমি তাদেরকে ডেকে বলব, ওহে তোমরা এস। আমাকে বলা হবে, ওরা আপনার পরে আপনার নীতি বিকৃত করে ফেলেছে। তখন আমি বলব দুর হয়ে যাও, দুর হয়ে যাও। মুসলিম।
নামাজ ওযুকে অবধারিত করে। ওযু ছাড়া নামাজ হয় না। বান্দা নামাজে আল্লাহর সামনে দাড়াবে। মহান আল্লাহ তায়ালা চান যে বান্দা বাহ্যিক এবং আভ্যন্তরিন সব ধরনের আবর্জনা থেকে পরিস্কার হয়ে মাওলার সামনে দাড়াবে। যখন সে মাওলার সামনে দাড়াবে তার হাতে, পায়ে, গায়ে কোন ময়লা থাকবে না। এমনকি তার মুখেও কোন দুর্গন্ধ থাকবে না। (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর মনে না করতাম তবে প্রত্যেক ওযুর সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম। সহিহ মুসলিম।) তার কানের বেড়ীর ভিতর, নাকের ছিদ্র সব কিছু হবে পরিস্কার। এই হল বাহ্যিক পরিস্কার। আল্লাহ তায়ালা চান বান্দা এই বাহ্যিক পরিস্কারের সাথে সাথে তার ভিতরের যত ময়লা আর দুর্গন্ধ আছে এগুলোও পরিস্কার হয়ে যাবে। বান্দা যখন ওযু করে, তখন ওযুর প্রত্যেকটি কাজের সাথে তার গুনাহ গুলো ঝরতে থাকে। গুনাহের চেয়ে দুগন্ধ আর ময়লা আর কিছুই হতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা চান না বান্দা সবচেয়ে দুগন্ধময় আর ময়লা গুনাহ নিয়ে তাঁর সামনে হাজির হোক। তাই আল্লাহ তায়ালা নামাজের পূর্বে ওযুর ব্যবস্থা রেখে দিয়েছেন। যে বান্দা ওযুর মাধ্যমে সব ধরনের নাপাকি আর ময়লা থেকে পরিস্কার হয়ে যাবে। সে নিস্পাপ অবস্থায় মাওলার সামনে হাজির হবে। ওযু বাহ্যিক পবিত্রতা আনয়ন করে। আভ্যন্তরিন গুনাহ মাফ করে বান্দাকে একেবারে পরিস্কার করে দেয়। আমাদের মনে এই জযবা, এই চিন্তা, এই কামনা কতটুকুন আছে?
মালেকী মাজহাবের শাইখ মুরাবিত আল হাজ্জ ওযু করতে ১০ মিনিট সময় লাগাতেন। কারন ওযুও একটি ইবাদাত। ওযু শুধু নামাজের পূর্ব প্রস্ততি নয়। ওযু একক ভাবেও একটি ইবাদাত। আমরা নামাজে যেমন তাড়াহুড়ো করি, ওযুর সময় আরো একটু বেশী করি। আমরা জানি কোন কাজের প্রস্তুতি যত সুন্দর ও সুনিপুন হয়, ঐ কাজটিও তত সুন্দর হয়। ইমাম ইবনুল কায়্যিম রাহ বলেন, ওযুর মধ্যে তিনটি ধাপ রয়েছে। ১. পানি দ্বারা নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জন ২. কালেমা শাহাদাত দ্বারা শিরক থেকে মুক্তি ৩. তাওবাহর দ্বারা সকল গুনাহর ক্ষমা।
আমরা শুধু পানি দিয়ে হাত পা, মুখ ধৌত করে নাপাকী থেকে মুক্ত হই। তারপর আর এই নিয়ে চিন্তা খুব একটা করি না। অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কোন ব্যক্তি ওযু শেষ করবে তখন সে যেন কালেমাতুশ শাহাদাত পড়ে তারপর সে যেন পড়ে, হে আল্লাহ আপনি আমাকে তওবাকারীদের অন্তুর্ভুক্ত করুন, আপনি আমাকে পবিত্রদের অন্তুর্ভুক্ত করুন। কত আশ্চর্য আর চিন্তার বিষয়। আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়ার বিষয়। এই ওযুর মধ্যে আমার মুক্তি রেখে দিয়েছেন। ওযুর মাধ্যমে আমার সব গুনাহ মাফ হয়ে আমি একেবারে সাফ হয়ে যেতে পারি, তাইতো হাদিসে বলা হয়েছে ওযুর দ্বারা সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়। নামাজ হল বান্দার জন্য বোনাস প্রাপ্তি, আল্লাহর দিদার।
ওযু শুধু গুনাহ মাফই নয়, গুনাহ মাফের সাথে সাথে আল্লাহর নিকট ওযুকারী বান্দার মর্যাদাও বেড়ে যেতে থাকে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন বিলাল রাঃ জিজ্ঞাসা করলেন, হে বিলাল এটা কিভাবে সম্ভব যে আমি জান্নাতে তোমার পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলাম? ্উত্তরে বিলাল রাঃ বলেন, হে আল্লাহর রাসুল আমি (ভুলে যদি) শয়তানের প্ররোচনায় কোন গুনাহ করে ফেললে সাথে সাথে দুই রাকাত নামাজ পড়ে নিতাম, আর যখনই আমার ওযু ভেঙ্গে যায় আমি আবার নতুন করে ওযু করে নিতাম (এভাবে সব সময় পবিত্র থাকার চেষ্টা করতাম।
এখন আমার চিন্তা করার প্রয়োজন, আমি কী চাই? আমার চিন্তা কি? আমি কি চাই, আমার সকল গুনাহ মাফ হয়ে একেবারে সাফ হয়ে যাই। আমি কি চাই, জান্নাতের সবগুলো দরজা আমাকে সম্ভাষন জানানোর জন্য খুলে দেওয়া হোক। আমার পদ ধ্বনিতে জান্নাতে মধুর গুঞ্জরন উঠুক। তাহলে আমাকে হাদিস গুলোর দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। হযরত ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সুন্দর ভাবে ওযু করার পর বলে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ তায়ালা ব্যতিত কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসুল। হে আল্লাহ তুমি আমাকে তওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত কর, আমাকে পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তুভর্’ক্ত কর। তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেওয়া হবে। সে নিজ ইচ্ছামত যে কোন দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। মুসলিম।
এখানে আমাদের খেয়াল রাখা উচিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিভাবে ওযু করেছেন? তিনি কতটুকুন পানি ব্যবহার করেছেন? কি তারতীব পালন করেছেন? ভালভাবে ওযুর সাথে সাথে পানি ব্যবহারেও সংযমী হওয়ার প্রয়োজন। আসুন আমরা সবাই প্রত্যেকটি ইবাদত একটু চিন্তা করে করি। ফলে প্রত্যেকটি ইবাদতই হবে জীবন্ত। এই ইবাদাতগুলোর ফলাফল দুনিয়াতে শান্তি এনে দেবে আর পরকালে আল্লাহর দিদার করবে অবধারিত। হে রাব্বুল আ’লামীন, তুমি আমাদেকে তওফিক দাও। আমীন।
লেখক : জিবি ইনচার্জ, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ। লালদিঘীরপাড় শাখা, সিলেট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন