(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
নদীর অবস্থা ভীষণ বেহাল। তীব্র ঝড় উঠেছে এতক্ষণে। আকাশ চৌচির করে ফাটিয়ে দিচ্ছে বিজলি। মেঘের ভয়ঙ্কর হুঙ্কার নদীর পাগলা ঢেউয়ের কাছে তুচ্ছ। কিন্তু বুদ্ধিমান মাঝি তার হাল ছাড়ছিল না। নৌকাটাকে পাড়ের দিকে তীব্র গতিতে ছুটে নিয়ে যাচ্ছিল। পাড়ের প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে। এমন সময় অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাটা ঘটে গেল। নৌকাটা ঢেউয়ের আঘাত সহ্য করতে না পেরে দু’খ- হয়ে গেল আর উল্টো দিকে তলিয়ে গেল যমুনার তলে।
চারদিক অন্ধকার। রাত্রির সময়টা বলা যাচ্ছে না। সামনেই পিরকান্দি বাজার। নৌকাডুবির ঘটনাটা আসলে যেখানে ঘটেছিল তার কাছেই এই বাজারটি। বাজারে মানুষের কমতি নেই। ঝড় কমার সাথে সাথেই সবাই উদ্ধারকাজে নেমেছিল নিঃস্বার্থভাবে। পাড়ের কাছেই একটা ঝোঁপের আড়াল থেকে কয়েকটি লোক লিমনকে জীবন্ত উদ্ধার করে। বাকি আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। লিমনকে ঝোঁপের আড়ালে দেখে চমকে উঠেছিল সবাই। কেননা নদীর প্রবল ধাক্কায় যেখানে পাড় ভেঙে সাগর তৈরি হয় সেখানে এই ছোট্ট ছেলেটা কীভাবে টিকে থাকে। অজানা সব উত্তর। তবুও সবাই আল্লাহ্র কাছে শুকরিয়া জানায় আর ছেলেটার বুদ্ধিমত্তার তারিফ করে। নিশ্চয় ছেলেটা সাঁতারে খুব পাক্কা। কোনোমতে হয়ত সাঁতার কেটে পাড়ের কাছাকাছি পৌঁছাতেই সেখানেই নৌকা বাঁধার কয়েকটা খুঁটির সাথে আটকে ছিল। তারপর শক্ত করে সেই খুঁটিগুলো হাত দিয়ে চেপে ধরেছিল এবং তাতেই সে রক্ষা পেয়েছে।
পরদিন ভোরবেলা গ্রামের মানুষ তাকে তার বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিল। লিমনের অতীতের ইতিহাস বড্ড ভয়ঙ্কর। তার সাথে ঘটে যাওয়া প্রতিটি স্মৃতিই এখন তার একেকটা বড় গল্পের বই। অশান্ত ছেলেটা আজ শান্তর প্রতীক। আর অবাধ্যতা তাকে শিখিয়ে দিয়েছে জীবনটা আসলে খেলার জিনিস নয়। সে বুঝতে শিখেছে গুরুজনের কথা অমান্য করলে তার শাস্তিটা কী হয়! সেই দিনটার পর থেকে আর কোনোদিন সে কারো কথার অবাধ্য হয়নি। (সমাপ্ত)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন