বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সোনালি আসর

রুমার আক্ষেপ

রে দ্ব ও য়া ন মা হ মু দ | প্রকাশের সময় : ২০ নভেম্বর, ২০১৬, ৯:৪৪ পিএম

‘বাবা, শুটকি দিয়ে আর পারছি না। বাজার থেকে মাছ আনতে পারো না তুমি’? দুপুরের খাবার খেতে বসে ৯বছর বয়সী রুমা বাবাকে এমন হৃদয়বিদারক প্রশ্ন করেছিল!
গ্রামের সহজ-সরল পরিবেশে বেড়ে উঠা রুমার পরিবারের সব সদস্যরা খুব সাদা-মাটা এবং সহজ-সরল। কখনো অর্ধাহারে, কখনো অনাহারে কোনমতে দিনগুলো কেটে যায় রুমাদের। তিনবোনের মধ্যে রুমা সবার ছোট। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে শহরের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। তার দিনও তেমন সুখে কাটছে না। গরীব ঘরের মেয়ে হওয়ায় সবসময়ই নাকি শ্বশুর-শ্বাশুড়ির জ্বালাতন সহ্য করতে হয়। এসব জেনে-শুনেও রুমার মা-বাবা নিজেদেরকে সান্ত¦Íনা দেন, মেয়ে তো তিনবেলা খেতে পারছে!
গ্রামের একেবারে সীমান্তে রুমাদের বসবাস। এক জীর্ণ কুটিরে জড়োসড়ো হয়ে রাত কাটায় তারা। সকাল হলেই বাবা কাজের সন্ধানে বের হন, আর মা ও ছোট বোন মেম্বার চাচার বাড়িতে কাজ করেন। যা বেতন পান, সেগুলো যায় বাবার হাতে, আর বাবা তা থেকে খরচ করেন।
সবসময়ই নিজেদের জন্যে ভালো কিছু কেনার ইচ্ছে করেন বাবা। কিন্তু সামর্থ্য তার ইচ্ছের কাছে হার মানে!
এই অর্ধাহার, অনাহার কিংবা বাজে খাবার খেতে খেতে আর সহ্য হচ্ছিল না রুমার। তাই সব জেনে-শুনেও বাবার প্রতি এমন অভিমান দেখিয়েছিল রুমা। রুমাদের পাশের বাড়ির লোকেরা কত সুখে দিন কাটাচ্ছে। কত্ত রকম খাবার খাচ্ছে তারা। এদের দিকে কেবল তাকিয়ে থাকে রুমারা।
কজন খেটে খাওয়া দিনমজুর নিজের ছোট্ট মেয়েটির এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারে?
ছোট্ট মেয়েটির এই প্রশ্ন নির্বাক করে দিলো রুমার বাবাকে। আর জবাব দিতে পারেননি তিনিও। চোখের কোণে টলটল করছিলো তার চোখ দুটো। মাও কান্না থামাতে পারেননি, শাড়ীর আঁচলে মুখ ঢেকে কাঁদছিলেন তিনিও। হঠাৎ যেন নিভে থাকা বেদনারা জ্বলে উঠল, চোখের জল গড়িয়ে পড়লো গাল বেয়ে। বাবা খাবারের অর্ধেক ফেলেই জাল হাতে ছুটলেন পাশের গ্রামের বিলে। নিজে নিজে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলেন, মেয়ের এই প্রশ্নের জবাব দিতেই হবে। মেয়ের  মাছের চাহিদা পূরণ করতেই হবে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তাকে আর ঘরে ফিরতে দেয়নি, মেয়ের মুখে মাছ তুলে দেয়ার আনন্দটা উপভোগ করা হয়নি তার। সন্ধ্যার পর পাশের গ্রামের বিলেই ভেসে উঠে তার লাশ।
পিতার লাশ দেখতেই রুমার হাহাকার আর আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠে। রুমা নিজেকে বলে, আহ! বাবাকে যদি ওসব বলতাম না, তবে হয়তো বাবা বেঁচে থাকতেন আরো কটা দিন। চিরকালের জন্যে রুমার মনে এই আক্ষেপটাই থেকে যায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন