যে ছেলেটিকে একটি ভালো স্কুলে পড়ার জন্য কুস্তি করে জয়ী হতে হয়েছিল। এ ছেলেটি বড় হয়ে গবেষণার জন্য পৈতৃক বাড়ি বিক্রি করেছিলেন। এ ছেলেটি বিশ্ববিখ্যাত উদ্ভিদ বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু। জগদীশ চন্দ্রের জন্ম ৩০ নভেম্বর ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে। জগদীশ চন্দ্র বসুর পৈতৃক বাড়ি মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার রাঢ়ীখাল গ্রামে। তার পিতা ভগবান চন্দ্র বসু ছিলেন ফরিদপুরের ম্যাজিস্ট্রেট। ফরিদপুরেই জগদীশ চন্দ্রের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য জগদীশ চন্দ্রকে কলকাতা হেয়ার স্কুলে ভর্তি করা হয়। তাকে আরো উন্নত লেখাপড়ার জন্য ভর্তি করা হয় সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে। এ স্কুলের বেশিরভাগ ছাত্র ইংরেজ হওয়ায় প্রথম প্রথম জগদীশের কথা বলতে বেশ অসুবিধা হতো। সেন্ট জেভিয়ার স্কুলে ভর্তি হওয়ার একটি ঘটনা। জগদীশ চন্দ্র বসু এভাবে বলেছেন, “ক্লাস শেষে বিকেলে সদ্য পরিচিত সহপাঠীর প্রতিনিধি হিসেবে একজন দ্বন্দ্ব যুদ্ধে আহ্বান করে। যুদ্ধে পরাজিত হলে আর স্কুল আসতে পারব না। আর সে দিনের লড়াইটা আমার কাছে ছিল অস্তিত্বের লড়াই। আর ওদের কাছে ছিল খেলার লড়াই। অস্তিত্বের প্রশ্নে আমাকে অনেক মূল্য দিয়ে অসম যুদ্ধে জিততেই হলো।” এ বাঙালি বিজ্ঞানী ১৮৭৫ সালে প্রথম বিভাগে বৃত্তিসহ প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৮৭৭ সালে এফ.এ পাস করেন। ১৮৮০ সালে ডাক্তারি পড়তে লন্ডনে গমন করেন। অসুস্থতার জন্য ডাক্তারি পড়া সম্ভব হয়নি। ১৮৮৩ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রাইস্ট কলেজ হতে রসায়ন, পদার্থ বিজ্ঞান ও উদ্ভিদ বিজ্ঞানে ট্রাইপোসহ অনার্স পাস করেন। ১৮৮৪ সালে জগদীশ চন্দ্র বসু দেশে ফিরে আসেন। তিনি প্রশাসনিক কর্মকর্তা না হয়ে শুরু করেন গবেষণা। গবেষণার জন্য প্রচুর টাকার প্রয়োজন। তাই ১৮৮৬ সালে মুন্সীগঞ্জের বাড়ির সকল জমি বিক্রি করে দেন। জগদীশ চন্দ্র বসু সালোক সংশ্লেষণ কর্মধারার গবেষণা করেন। তিনি আবিষ্কার করলেন গাছের বা উদ্ভিদের প্রাণ আছে। তাদের অনুভূতি শক্তি আছে ও আঘাত করলে ব্যথা পায়। তিনিই প্রথম রেডিও আবিষ্কার করেন। কিন্তু পরাধীন দেশের নাগরিক হওয়ায় রেডিও আবিষ্কারে তার নাম ঘোষণা হয়নি। উদ্ভিদ গবেষণার জন্য জগদীশ চন্দ্র এসকোনো গ্রাফ যন্ত্র আবিষ্কার করেন। জগদীশ চন্দ্র বসুকে পঞ্চম জর্জ সি.আই.ই উপাধি প্রদান করেন। তিনি কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপকও ছিলেন।
জগদীশ চন্দ্র বসু মুন্সীগঞ্জের সকল জমি বিক্রি করলেও তার নামে “জগদীশ চন্দ্র বসু” স্কুল ও কলেজ স্থাপিত হয় এলাকাবাসীর উদ্যোগে। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। মহান এ বাঙালি বিজ্ঞানী ১৯৩৭ সালের ২৩ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন