শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

অ্যান্টিগা দুঃস্বপ্ন কাটানোর মিশন

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ জুন, ২০২২, ১১:৫৫ পিএম

ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা বরাবরই আমুদে। সমুদ্রঘেরা দ্বীপ দেশটির ক্রিকেটাররাও এর বিশালতা বয়ে বেড়ান যেখানে যান সেখানেই। ক্যারিবিয়ান তারকা ক্রিস গেইল, ডিজে ব্রাভোরা যার জ্বলন্ত প্রমাণ। আর তাদের সেই বিনোদনের সবচাইতে বড় আয়োজনটি হতো অ্যান্টিগায়। এখানে টেস্ট ক্রিকেটও হতো অ্যান্টিগা রিক্রিয়েশন গ্রাউন্ডে (এআরজি)। ১৯৮০-৮১ সালে এআরজিতে প্রথম ম্যাচেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দারুণ এক শতক পেয়েছেন অ্যান্টিগার ঘরের ছেলে ভিভ রিচার্ডস। এই ভেন্যুতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মানেই ছিল অন্য রকম এক দ্যোতনা। ক্যালিপসোর সুরমূর্ছনা এই মাঠে ঢেউ তুলত ক্রিকেট দেখতে আসা দর্শকদের মনে। এই মাঠে খেলাটা আনন্দ-উৎসবের উপলক্ষ হয়ে উঠত অ্যান্টিগার ক্রিকেটপ্রেমী মানুষের জন্য।
কিন্তু সেই দিন এখন আর নেই। অ্যান্টিগার সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রীড়াবিদের নামে তৈরি হয়েছে স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়াম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেখানেই। ২০০৭ সালে তৈরি স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস ক্রিকেট স্টেডিয়াম কিন্তু অ্যান্টিগার মানুষের কাছে এআরজির মতো জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি। এর সবচেয়ে বড় কারণ, ভেন্যুটির দূরত্ব। ধারেকাছের এআরজি ছেড়ে অ্যান্টিগাবাসীর তাদের প্রিয় ভিভের নামে তৈরি স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখায় যে বড় অনীহা।
আজ থেকে স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামেই শুরু হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায়। এ ভেন্যু যেমন অ্যান্টিগাবাসীর ক্রিকেট উপভোগের প্রিয় ভেন্যু হতে পারেনি; ঠিক তেমনি এই মাঠ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কাছে খুব একটা পয়া বলা যাবে না। এ মাঠেই যে ২০১৮ সালের সফরে প্রথম টেস্টটি খেলেছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ৪৩ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল সফরকারীরা, যেটা বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসেই সর্বনিম্ন দলীয় স্কোর। দ্বিতীয় ইনিংসেও ১৪৪ রানের বেশি করতে না পেরে ক্যারিবীয়দের কাছে হেরেছিল ইনিংস ব্যবধানে। এবার নতুন করে এ মাঠে ফিরে চার বছর আগের দুঃসহ স্মৃতি যে সাকিব, তামিম, লিটনদের তাড়া করবে না, সেটি বলা যাচ্ছে না। তবে ক্রিকেটাররা আদৌ পেছনের ইতিহাস মাথায় রেখে খেলতে নামেন কি না, সেটি নিয়ে কথা হতে পারে।
প্রতিষ্ঠার পর ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে কয়েকবারই। এ মাঠের উইকেট ও আউটফিল্ড নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন ছিল। ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের সময় সেটি নতুন করে তৈরি করা হয়। কিন্তু তাতে কী,২০০৯ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একটি টেস্ট বোলারদের রানআপের জায়গা বিপজ্জনক হওয়ার কারণে ১০ ওভার হয়েই পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়েছিল। অ্যান্টিগার সবচেয়ে আদরের ক্রীড়াবিদ ভিভ রিচার্ডসের নামখচিত এ মাঠ কখনোই কিংবদন্তির নামের সঠিক মূল্যায়ন করেনি!
এ মাঠে প্রতিষ্ঠার পর থেকে মোট ১১টি টেস্ট হয়েছে। আজ বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ এ মাঠের ১২তম টেস্ট ম্যাচটি খেলতে নামবে। ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে এই ১১ টেস্টে সর্বোচ্চ ৩টি জয় পেয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ভারত পেয়েছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২টি জয়। আর এই মাঠে বাংলাদেশের স্মৃতি যে দুঃসহ, সেটি তো আগেই বলা হয়েছে। সেই টেস্টে বাংলাদেশের ৪৩ রানে গুটিয়ে যাওয়া ইনিংসে সর্বোচ্চ ২৫ রান এসেছিল লিটন দাসের ব্যাট থেকে। বাংলাদেশ হেরেছিল ইনিংস ও ২১৯ রানে। সে টেস্ট সাকিবের নেতৃত্বেই মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। এবার আরেকটি নতুন শুরুর প্রেক্ষাপটেও হাজির সেই দু’জন। সাকিব এবারও ফিরেছেন নেতৃত্বের স্টিয়ারিংয়ে, আর সহকারী হিসেবে পেয়েছেন সেই লিটনকে।
এবার কি সেই লজ্জার অধ্যায়ে কিছুটা আলো ছড়াতে পারবে বাংলাদেশ? এমন প্রশ্নে উত্তর মিলতে থাকতে হবে অপেক্ষায়। তবে অ্যান্টিগায় যে টেস্টে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে বাংলাদেশকে সেটি খুব খালো করেই জানা। আর তাইতো বেশ আগে ভাগেই ক্যারিবিয়ায় পা রেখেছিল রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যরা। টানা অনুশীলনের ফাঁকে একটি তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেছে দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট একাদশের বিপক্ষে ড্র হলেও নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তামিম ইকবাল, মুস্তাফিজুর রহমানরা। তামিম দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন (অপরাজিত ১৬২), ফিফটি পেয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্তও। দীর্ঘদিন পর বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচ খেলতে নেমে ডিউক বলে প্রথম বার বোলিং করে মুস্তাফিজও নিয়েছেন ৩ উইকেট। ইবাদত হোসেনের শিকারও ৩টি।
বোলাররা মোটামুটি ভালো করলেও ব্যাটিং নিয়ে হালকা চিন্তা থেকেই যাচ্ছে ডমিঙ্গোর। তবুও দলের খেলোয়াড়েরা তিন দিনের ম্যাচটি যেভাবে খেলেছেন, তাতে পুরোপুরি তৃপ্ত বাংলাদেশের দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ। তার মতে গুরুত্বপ‚র্ণ ব্যাপার হলো টেস্টের আগে উইকেটে ব্যাটসম্যানদের সময় কাটানোটাই, ‘তিন দিনের ম্যাচটি ছেলেরা যেভাবে খেলেছে, তাতে আমি সন্তুষ্ট ও তৃপ্ত। ব্যাটসম্যানরা উইকেটে গুরুত্বপ‚র্ণ সময় কাটিয়েছে। বোলাররা মাঝের ওভারগুলোয় আঁটসাঁট বোলিং করেছে। প্রথম টেস্টে নামার আগে আমরা দারুণ সময় কাটিয়েছি।’ গতকালের অনুশীলন নিয়েও তৃপ্তি ছিল ডমিঙ্গোর কণ্ঠে, ‘আজকের (গতকাল) অনুশীলন ভালো হয়েছে। যে ভেন্যুতে আগে খেলেছি, সেটিতে আবার ফিরতে পেরে ভালো লাগছে। এ মাঠে অনেক বাতাস। এর উইকেট ও কন্ডিশন এমনই। তবে আমরা উইকেট ও কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছি। রাব্বি (ইয়াসির আলী) ছাড়া সবাই ফিট আছে। প্রত্যেকেই প্রথম টেস্ট খেলার জন্য বিবেচনায় আছে।’
এদিকে, প্রথম টেস্টের জন্য ১২ সদস্যের দল আগেই দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১২ জনের দলে তিনজন আছেন অভিষেকের অপেক্ষায়, আর চারজন ছিলেন পাকিস্তান সফরে। পাকিস্তানে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শেষ করে তারা এরই মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজে ফিরেছেন। স্পুনার বলেছেন, ‘দলের কয়েকজন পাকিস্তানে ছিল। জেইডেন সিলস, অ্যান্ডারসন ফিলিপ, এনক্রুমা বোনার, কাইল মেয়ার্স- পাকিস্তান থেকে এই চারজন গত সোমবার দেশে ফিরেছে। দলের বাকি সদস্যরা আরও কয়েক দিন আগে থেকেই স্যার ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়ামে অনুশীলন শুরু করেছে।’ এবার মাঠের লড়াইয়ের অপেক্ষা।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন