পূর্ব প্রকাশিতের পর
এ কথা শুনে উমর রা. বললেন, হে আবূ ইসহাক! এটি তোমার ব্যাপারে তাদের ধারণা মাত্র। এ কথা বলে তদন্ত করার জন্য কুফাতে তার সাথে এক বা একাধিক লোক পাঠালেন। তদন্তকারীদল কুফার প্রতিটি মসজিদে মসজিদে গিয়ে তাঁর ব্যাপারে তদন্ত করলেন। প্রতিটি মসজিদের সকল লোক তাঁর প্রসংশা করলেন। এক পর্যায়ে তদন্তের জন্য বনী আবাসা গোত্রের মসজিদে গেলে উসামা ইবনে কাতাদাহ নামক এক ব্যক্তি যার উপনাম ছিল আবূ সাদ দাড়িয়ে বলল, আপনি কসম দিয়ে বলছেন এজন্য বলছি, সাদ কোনো যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে না। সমতার ভিত্তিতে বণ্টন করে না এবং বিচার কার্যে ইনসাফ করে না। এ কথা শুনে সাদ রা. ব্যথিত হৃদয়ে বললেন, এই শোন! আল্লাহর কসম, তোর জন্য আমি ৩টি বদদুআ করছি। হে আল্লাহ! তোমার এই বান্দা উসামা যদি মিথ্যাবাদী হয় এবং লোক দেখানো ও সুখ্যাতির জন্য দাড়িয়ে থাকে, তাহলে ১. তার বয়স বৃদ্ধি করে দাও। ২. তার দারিদ্রতা বাড়িয়ে দাও। ৩. এবং তাকে ফিতনার মখোমুখি কর। সাদ রা. এর এ বদদুআ আল্লাহর দরবারে কবূল হয়ে যায়। এ হতভাগা এই তিন রকমের বিপদেই পতিত হয়। তাকে জিজ্ঞাসা করলে সে বলতো, আমি ফিতনায় আক্রন্ত এক বয়োবৃদ্ধ। আমার উপর সাদের বদদুআ লেগেছে। ঘটনার বর্ণনাকারী জাবের ইবনে সামূরার ছাত্র আব্দুল মালেক বলেন, পরবর্তীতে আমি উসামাকে দেখেছি, অতি বার্ধক্যের কারণে তার উভয় ভ্রু চোখের উপর পড়ে গেছে এবং রাস্তা-ঘাটে যুবতী মেয়েদের বিভিন্ন অঙ্গে খোঁচা দিত ও উত্যক্ত করতো। [বুখারী, হাদীস:৭৫৫] ২. দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটেছে পৃথিবী খ্যাত মহান ব্যক্তিত্ব, হাদীস শাস্ত্রের দিকপাল ইমাম বুখারী রহ. এর জীবনে। ইমাম বুখারী রহ. বুখারায় বুখারী শরীফের দরস আরম্ভ করলে ইলমে হাদীসের পিপাসুগণ দলে দলে তাঁর দরসে অংশ গ্রহণ করতে থাকেন। এটি দেখে হিংসুকরা তেলে বেগুণে জ্বলে উঠে। এই হিংসুকদের পরামর্শে তৎকালীন বুখারার গভর্ণর খালিদ ইবনে আহমাদ যুহলী ইমাম বুখারী রহ.এর কাছে দাবী করেন, তাকে ও তার সাহেবযাদাদেরকে শাহী দরবার বা অন্যদের থেকে আলাদাভাবে দরস দিতে হবে। ইমাম বুখারী রহ. তার দাবী প্রত্যাখ্যান করায় বুখারার শাসক ভীষণ ক্ষিপ্ত হন। এই সুযোগে হিংসুকরা গভর্ণরের ইশারায় ইমাম সাহেবকে বিদআতী হওয়ার অপবাদ দেয়। এই অপবাদকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে গভর্ণর তাঁকে বুখারা থেকে বহিষ্কারের নির্দেশ দেন। এতে বুখারী রহ. নেহায়াত মনোকষ্ট পেয়ে বিরোধীদের জন্য এই বদদুআ করেন- ‘হে আল্লাহ! এই আমীর ও তার সহযোগীরা যেরুপ অপমান আমাকে করেছে, এরুপভাবে তাকে, তার সন্তান-সন্ততি, পরিবার-পরিজন ও সহযোগীদেরকে অসম্মান ও অপমানের মুখ দেখান। বুখারী রহ. এর এ বদদুআ বিদ্যুৎগতিতে আল্লাহর দরবারে কবূল হয়। ফলে এক মাস যেতে না যেতেই খলীফাতুল মসলিমীন এই আমীরের প্রতি কোনো কারণে অসন্তুষ্ট হয়ে তাকে আমীরের পদ থেকে অপসারণ করে তার স্থলে অন্য আমীর নিযুক্ত করেন। পাশাপাশি নির্দেশ দেন, অপসারিত আমীরের মুখ কলংকিত করে গাধায় চড়িয়ে পুরো শহর জুড়ে তাকে অপমান করা হয়। এরপর তাকে জেলে আবদ্ধ করে রাখা হয়। জেলে সে চরম অপমান ও অপদস্থ হয়ে মৃত্যু বরণ করে। আর তার সহযোগীরা বিভিন্ন রকমের বালা-মসীবতে আক্রান্ত হয়ে ধ্বংস হয়ে যায়। [মুকাদ্দিমা ফতহুল বারী: ৪৯৩; নসরূল বারী:১/১৩৪-১৩৫] বর্ণিত দুটি ঘটনাতেই দেখা যাচ্ছে আলেমেকে কষ্ট দেওয়া ও তার বদদুআর নির্মম পরিণতি। কাজেই অন্যায়ভাবে আলেম উলামাকে কষ্ট দেওয়া, গালিগালাজ করা, হুমকি-ধমকি দেওয়া এবং তাঁদের উপর মিথ্যাচার করা থেকে সকলকেই বিরত থাকতে হবে। নতুবা আলেম সমাজের মনোবেদনা ও বদদুআর কারণে দুনিয়া-আখেরাতে চরম খেসারত দেওয়ার সম্ভবনাই বেশি।
লেখক: প্রধান মুফতী ও সিনিয়র মুহাদ্দিস, জামিয়া মিফতাহুল উলূম, নেত্রকোনা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন