বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

প্রস্তুত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু টানেল

চালু হতে পারে নির্ধারিত সময়ের আগেই ব্যয়-সময় কোনোটাই বাড়েনি এই মেগা প্রকল্পে যোগাযোগ, বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও পর্যটনে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২৯ জুন, ২০২২, ১২:০০ এএম

দ্রুত এগিয়ে চলছে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের নির্মাণকাজ। চট্টগ্রাম অঞ্চলের কোটি মানুষের স্বপ্নের এই টানেল প্রায় প্রস্তুত। টিউব বা সুড়ঙ্গপথ, সংযোগ সড়কসহ অবকাঠামো নির্মাণ শেষ। এখন চলছে টানেলে রাস্তা, লেন তৈরিসহ যানবাহন চলাচলের উপযোগী করার কাজ। এ পর্যন্ত এই মেগা প্রকল্পের অগ্রগতি ৮৬ শতাংশ। ফলে নির্ধারিত সময় আগামী ডিসেম্বরের আগেই ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত টানেলটি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুুক্ত করে দেয়া যাবে। এটি হবে বাংলাদেশের প্রথম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশে প্রথম ও দীর্ঘতম রোড টানেল।

এ টানেল চালু হলে এই অঞ্চলে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। টানেল হয়ে দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাথে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সংযোগ সৃষ্টি হবে। টানেলের কারণে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী বন্দরনগরীর সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সেতুবন্ধন তৈরি হবে। কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে নগরায়ণ, শিল্পায়ন ও বন্দরের কার্যক্রম প্রসারিত হবে। মীরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ পর্যন্ত গড়ে উঠবে শিল্প করিডোর। মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর হওয়ার পর চট্টগ্রাম হয়ে যানবাহন এই টানেল দিয়ে সহজে চলাচল করতে পারবে।

ইতোমধ্যে চালু হয়েছে সিটি আউটার রিং রোড। বিমানবন্দর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজ-ও এগিয়ে চলছে। কর্ণফুলী টানেলে যান চলাচল শুরু হলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা কক্সবাজার ও দক্ষিণ চট্টগ্রামগামী যানবাহনকে আর মহানগরীতে প্রবেশ করতে হবে না। সিটি আউটার রিং রোড হয়ে টানেলের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। এতে চট্টগ্রাম নগরীতে যানবাহনের চাপ কমে যাবে।

এ মেগা প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পের জটিল কাজ শেষ। এখন কিছু টেকনিক্যাল কাজ চলছে। তাতে তেমন কোন চ্যালেঞ্জ নেই। এর ফলে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে প্রকল্পের কাজ। টানেলের মোট দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কি.মি.। এরমধ্যে টানেলের প্রতিটি সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কি.মি.। দুটি টানেলে লেন থাকছে চারটি। মূল টানেলের সঙ্গে পশ্চিম ও পূর্বপ্রান্তের ৫ দশমিক ৩৫ কি.মি. সংযোগ সড়ক থাকছে। আনোয়ারা প্রান্তে রয়েছে ৭২৭ মি. দীর্ঘ ফ্লাইওভার। প্রথম টানেল খননে সময় লেগেছে ১৭ মাস। আর মাত্র ১০ মাসেই নির্মাণ হয়েছে দ্বিতীয় সুড়ঙ্গ। ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরতায় তৈরি করা হয়েছে দুটি টানেল। প্রতিটি ৩৫ ফুট প্রশস্ত ও ১৬ ফুট উচ্চতার। মহানগরী প্রান্তের পতেঙ্গা নেভাল অ্যাকাডেমির পাশ দিয়ে শুরু হওয়া এ টানেল আনোয়ারা প্রান্তের সিইউএফএল এবং কাফকোর মাঝামাঝি স্থান দিয়ে দক্ষিণ প্রান্তে পৌঁছাবে।

প্রকল্পের পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী গত সোমবার ইনকিলাবকে জানান, টানেলে অবকাঠামো নির্মাণ শেষ। এখন ভেতরে লেন নির্মাণসহ কিছু টেকনিক্যাল কাজ চলছে। নির্ধারিত সময় ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজ শেষ করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

দেশের মেগা প্রকল্পগুলোতে একের পর এক সময় এবং ব্যয় বাড়লেও একমাত্র ব্যতিক্রম কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প। এ প্রকল্পের সময় এবং ব্যয় কোনটাই বাড়েনি। শুরু থেকে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। সময় নির্ধারণ করা হয় ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, নির্ধারিত বাজেটে এবং নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রকল্পের কাজ শেষ করা যাবে।

দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের কারণে চট্টগ্রাম মহানগরী অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে গেলেও কর্ণফুলীর ওপাড়ে আনোয়ারা থেকে যায় অবহেলিত। সড়ক যোগাযোগ না থাকায় কর্ণফুলী নদীর ওপাড়ে বন্দর সম্প্রসারিত হয়নি। কর্ণফুলী নদীর দুপাড়ে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ওয়ান সিটি টু টাউন গড়ে তুলতে নেয়া হয় এই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণ প্রকল্প।

নদীর দক্ষিণে আনোয়ারায় রয়েছে সিইউএফএল, কাফকো, কোরিয়ান ইপিজেড, প্রস্তাবিত চায়না ইপিজেড, পারকি সমুদ্র সৈকত। কর্ণফুলী পেরিয়ে আনোয়ারা দিয়েই কক্সবাজার, বাঁশখালী ও মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরে যেতে হয়। মাতারবাড়িকে ঘিরে মেগা প্রকল্প বহর, অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনাল এবং মীরসরাই ও ফেনীর সোনাগাজীর বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের সাথে যোগাযোগের লক্ষ্যেই নেয়া হয় এ টানেল প্রকল্প।

টানেল নির্মাণের চুক্তি সই হয় ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর। এর আগে ২০১৪ সালে প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ও চীনের সরকারি পর্যায়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়। আর চীন সরকার এ টানেল নির্মাণের জন্য মনোনীত করে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডকে। নকশা ও অন্যান্য কাজ শেষে ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে টানেলের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আগে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, নির্মাণ কাজের প্রায় পুরোটাই যন্ত্র নির্ভর হওয়ায় নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ করা যাচ্ছে। এটি চালু হলে বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে উন্নয়ন, বিনিয়োগ, শিল্পায়ন, পর্যটন ও আবাসন খাতে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। এ টানেল জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
সাকিব ২৯ জুন, ২০২২, ১:১৩ এএম says : 0
এ টানেল চালু হলে এই অঞ্চলে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।
Total Reply(0)
মনি ২৯ জুন, ২০২২, ১:১০ এএম says : 0
আ.লীগ সরকার এ দেশ অনেক উন্নত করছে। আশা করি সামনে এ দেশ উন্নত বিশ্বের কাতারে নাম লেখাবে
Total Reply(0)
মনি ২৯ জুন, ২০২২, ১:১০ এএম says : 0
এটি চালু হলে বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে উন্নয়ন, বিনিয়োগ, শিল্পায়ন, পর্যটন ও আবাসন খাতে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
Total Reply(0)
মনি ২৯ জুন, ২০২২, ১:১০ এএম says : 0
এ টানেল জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
Total Reply(0)
সাকিব ২৯ জুন, ২০২২, ১:১৫ এএম says : 0
টানেলের কারণে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী বন্দরনগরীর সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সেতুবন্ধন তৈরি হবে।
Total Reply(0)
Shailoja Nanda Basak ৩০ জুন, ২০২২, ৬:৪৬ এএম says : 0
সরকারের মেগা প্রকল্পগুলো একে একে বাস্তবায়ন হলে দেশ অবশ্যই উন্নতির দিকে এগিয়ে যাবে, দেশের মানুষ তার সুফল পাবে।জয় বাংলা, জয় বংগবন্ধু। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
Total Reply(0)
jack ali ৩০ জুন, ২০২২, ১:১৯ পিএম says : 0
কোরআন দিয়ে দেশ শাসন করলে আমরা নিজেরাই নিজেদের সবকিছু তৈরি করতে পারতাম যতগুলো সরকার এসেছে সব সরকারের নির্বোধ ওরা জানেনা দেশ এবং জাতিকে কিভাবে উন্নত করতে হয় ওরা শুধু জানে জাতিকে কিভাবে ঠকিয়ে লক্ষ্য হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করবে সরকারের বিরুদ্ধে কোন কথা বলবে তাঁকে হত্যা করবে না হলে গুম করে ফেলবে না হলে মিথ্যা কেস দিয়ে জেলের মধ্যে চিরজীবনের জন্য আটকে রাখবেন মানুষের নীতি নৈতিকতা নষ্ট করবে গুন্ডামি চাঁদাবাজি ধর্ষণ যিনা-ব্যভিচারের মাধ্যমে গান-বাজনা সিনেমা-নাটক নাচানাচি মেয়েরা প্রকাশ্যে অসভ্য কাপড় পড়ে হাঁটাচলা করে মেয়েরা প্রকাশ্য পুলিশের ড্রেস পড়ে খেলাধুলা করে
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন