দেশের সর্ববৃহৎ পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আজ ছয় মাস পেরিয়ে গেল। এরই মধ্যে দেশে প্রথম বারের মতো চালু হয়েছে মেট্রোরেল। এবার অপেক্ষার পালা শেষ হতে চলছে স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধনের। সিভিল ওয়ার্ক শতভাগ শেষ করে নিরাপত্তাবলয় তৈরি, বৈদ্যুতিক সংযোগসহ খুঁটিনাটি যেসব কাজ আছে, তা শেষ করেই আগামী ফেব্রুয়ারিতে শেষ হচ্ছে দেশের চলমান বৃহৎ মেগা প্রকল্পটির কাজ। একই সঙ্গে টানেলের আনোয়ারা প্রান্তের ছয় লেনের সংযোগ সড়কের আপাতত চার লেনের রাস্তা খুলে দিতে চলছে রাত-দিনের ব্যস্ততা। তবে ফেব্রুয়ারিতে টানেলের পুরো কাজ সম্পন্ন হলেও যানবাহন চলাচলের জন্য কবে খুলে দেওয়া হবে, তার চূড়ান্ত দিনক্ষণ এখনো ঘোষণা করা হয়নি বলে জানান প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা। তাঁরা জানান, উদ্বোধনের তারিখ চূড়ান্ত করবে মন্ত্রণালয়। তবে ফেব্রুয়ারিতে টানেল যাতে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া যায়, সে রকম প্রস্তুতি চলছে।
জানা যায়, দেশের বিভিন্ন সেতু ও শাহ আমানত সেতুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বঙ্গবন্ধু টানেলের টোল প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রাথমিক প্রস্তাবনায় তিন চাকার গাড়ি ও মোটরসাইকেলের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়নি। প্রস্তাবনায় প্রাইভেট কার, জিপ ও পিকআপের জন্য ২০০ টাকা, মাইক্রোবাসের জন্য ২৫০ টাকা, ৩১ বা এর চেয়ে কম আসনের বাসের জন্য ৩০০ টাকা এবং ৩২ বা এর চেয়ে বেশি আসনের বাসের জন্য ৪০০ টাকা, পাঁচ টনের ট্রাকের জন্য ৪০০ টাকা, পাঁচ থেকে আট টনের ট্রাকের জন্য ৫০০ টাকা, ৮ থেকে ১১ টনের ট্রাকের জন্য ৬০০ টাকা, ট্রাক (তিন এক্সেল) ৮০০ টাকা, ট্রেইলর (চার এক্সেল) ১ হাজার টাকা এবং চার এক্সেলের বেশি ট্রেইলরের জন্য ১ হাজার টাকার সঙ্গে প্রতি এক্সেলের জন্য ২০০ টাকা বাড়তি টোল নির্ধারণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেতু বিভাগ থেকে পাঠানো প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয় অনুমোদন করার পর আইন মন্ত্রণালয় ভেটিং করবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার পর টোলের হার চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করা হবে।
বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পের পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ জানান, টানেলের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৯৫ শতাংশের কিছুটা বেশি। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে দুটি টিউব, তিনটি ক্রস প্যাসেজের কাজ, ভায়াডাক্ট উভয় টিউবের পেভমেন্ট স্লেভ, পূর্ব অংশ ও পশ্চিম অংশের রেইন শেল্টারের আর্ক মেশ শেল ইনস্টলমেন্ট ও পেইন্টিং কাজ। টানেলের ইলেকট্রোমেকানিক্যাল ওয়্যার্সের মধ্যে ক্যাবল কানেকশন, ফায়ার এক্সটিংগুইশার, লাইটিং কাজ চলমান থাকলেও জেট ফ্যান ইনস্টলমেন্টও সম্পন্ন হয়েছে। উভয় প্রান্তের অ্যাপ্রোচ সড়কের ৫ হাজার ৩৫০ মিটার কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। চলমান অন্যান্য কাজও শেষ করে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে পুরো কাজ শেষ করার প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া এ পর্যন্ত সম্পন্ন কাজে যাতে কোনো ত্রুটি না থাকে, সেগুলো চূড়ান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে দোহাজারী সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল মিয়া বলেন, টানেল সংযুক্ত শিকলবাহা ওয়াই জংশন সড়কের ছয় লেনের কাজের মধ্যে আপাতত টানেলের কাজের সঙ্গে চার লেনের কাজ শেষ করা হবে। এই চার লেনের কাজের ৭৫ শতাংশ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। অধিগ্রহণমূলক কিছু সমস্যা ছিল, এসব শেষ হয়েছে। তাই বাকি দুই লেনের কাজ আগামী ডিসেম্বরে শেষ করা হবে বলে সওজের এই কর্মকর্তা জানান।
প্রসঙ্গত, চীনের সাংহাই নগরীর আদলে চট্টগ্রাম শহর ও আনোয়ারা উপজেলাকে এক করে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’-এর আদলে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে তৈরি হয়েছে বঙ্গবন্ধু টানেল। এই টানেলের এক প্রান্তে রয়েছে আনোয়ারার ভারী শিল্প এলাকা। অন্য প্রান্তে চট্টগ্রাম নগরী, বিমান ও সমুদ্রবন্দর। এই টানেল শহর ও গ্রামকে এক সুতায় যুক্ত করবে। বাংলাদেশ সরকার ও চায়নিজ এক্সিম ব্যাংক এই প্রকল্পে যৌথ অর্থায়ন করেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন