ডলারের বিনিময় হারের ঊর্ধ্বমুখী। গ্যাস, জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দাম ইতোমধ্যে বেড়েছে। আবার বাড়ানোর প্রস্তুতি চলছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বন্যা। এমন পরিস্থিতিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে। ইতোমধ্যে আর্থিক নীতি প্রণয়ন সংক্রান্ত সকল কাজ সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি বিভাগ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন মুদ্রানীতির প্রধান লক্ষ্য সরকার নির্ধারিত জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আগে সাধারণত সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মুদ্রানীতি ঘোষণা করতেন। কিন্তু করোনার কারণে গত দুই বছর আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া শুধু ওয়েবসাইটে মুদ্রানীতি প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক আগে প্রতি ছয় মাসের আগাম মুদ্রানীতি ঘোষণা করলেও গত দুই অর্থবছর তা এক বছরের জন্য করা হয়। এবারের মুদ্রানীতি অনলাইনের পরিবর্তে সরাসরি ঘোষণা করবেন গভর্নর ফজলে কবির। আগামী ৩ জুলাই তার মেয়াদ শেষ হবে। সে হিসেবে বর্তমান গভর্নরের মেয়াদে এটি তার শেষ মুদ্রানীতি ঘোষণা।
মূলত, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও প্রকাশ করে। দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রা সরবরাহ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ, বৈদেশিক সম্পদ কতটুকু বাড়বে বা কমবে এর একটি পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।
নতুন মুদ্রানীতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ মো. হাবিবুর রহমান বলেন, মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। এজন্য যা যা করা দরকার আমরা তা করব। এবারের মুদ্রানীতিতে নতুন কোনো চমক আছে কি না, জানতে চাইলে প্রধান এ অর্থনীতিবিদ বলেন, নতুন কোনো চমক আপাতত নেই। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই আমাদের বড় লক্ষ্য। পাশাপাশি কাঙ্খিত জিডিপি অর্জনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরির বিষয়টি আমরা নজর দেব।
এর আগে আগামী (২০২২-২৩) অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতিকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে রাখার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। কিন্তু চলতি বছরের মে মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি গিয়ে ঠেকেছে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশে। যা গত ৮ বছরের মধ্যে রেকর্ড। প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংক ঋণে জোর দেবে। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের ঘাটতি পূরণে ব্যাংক ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ নেবে বলে লক্ষ্য ঠিক করছে সরকার। এ অংক চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৯ হাজার ৮৮২ কোটি টাকার বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ঠিক করা আছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৪ জুন পর্যন্ত ব্যাংক থেকে সরকার নিট ৪১ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে। গত মে পর্যন্ত যা ছিল ৩২ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা। এর মানে শেষ সময়ে এসে ঋণ দ্রুত হারে বাড়ছে। চলতি জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ।
জানা গেছে, গভর্নর হিসেবে ফজলে কবিরের মেয়াদ আগামী ৩ জুলাই শেষ হবে। ইতোমধ্যে নতুন গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অর্থসচিব আব্দুর রউফ চৌধুরী। আগামী ৪ জুলাই নতুন গভর্নর হিসেবে যোগ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু দাফতরিক প্রয়োজনে তিনি ১২ জুলাই গভর্নর হিসেবে যোগ দেবেন। ৪ তারিখের পর থেকে গভর্নরের রুটিন কাজগুলো করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল।##
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন