বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে

জালাল উদ্দিন ওমর | প্রকাশের সময় : ১ জুলাই, ২০২২, ১২:১১ এএম

বন্যার কারণে যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা বর্ণনাতীত। এসব ক্ষতি সহজে পূরণ হবার নয়। এখন প্রয়োজন বন্যা দুর্গত মানুষদের সর্বাত্মকভাবে সাহায্য করা। তারা যেন আবার সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে, সে জন্য তাদের সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করতে হবে। বন্যার সময় সার্বিকভাবেই মানুষের জীবনে কষ্ট নেমে আসে। আবার বন্যার পানি নেমে যাবার পরও অনেকদিন ধরে বন্যাকবলিত মানুষদের সেই কষ্ট সহ্য করতে হয়। তখন মানুষ বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। বিশেষ করে, পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ে। বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দেয় প্রবলভাবে। পুকুরসমূহ ময়লা পানিতে সয়লাব হয়ে যাওয়ায় ব্যবহারের পানিরও সংকট চলে। মানুষ ব্যাপক হারে ডায়রিয়ার আক্রান্ত হয়। এ অবস্থায় বন্যার্ত মানুষদের সাহায্য করাটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। সারাদেশের সামর্থ্যবান মানুষে যদি এগিয়ে আসে তাহলে এই দুর্যোগকে মোকাবেলা করা কঠিন এবং অসম্ভব নয়।

আমাদের সম্মিলিত প্রয়াসে এসব দুর্গত মানুষ অচিরেই তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে, একথা আমরা দৃঢ়তার সাথে বিশ্বাস করি। এখন দুর্গত মানুষদের দরকার শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি এবং প্রয়োজনীয় ঔষধ। বন্যার কারণে যে মানুষটি আজ সর্বহারা, তার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। বন্যার কারণে যে মানুষটির ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে, তাকে ঘরের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। যে কৃষকের ফসল ধ্বংস হয়েছে তার নতুন করে কৃষিকাজের জন্য সহায়তা করতে হবে। অনুরূপভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পোল্ট্রি এবং মৎস্য চাষিদের আবারো নতুন করে ব্যবসা শুরুর জন্য সহযোগিতা করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা যাতে সহজে ব্যাংক থেকে বিনিয়োগ নিয়ে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য পুনরায় চালু করতে পারে, সে জন্য ব্যাংকগুলোকে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের এক কোটি মানুষ যদি প্রত্যেকেই মাত্র একশত টাকা করে দুর্গত মানুষদের জন্য দান করে তাহলে নিমিষেই জোগাড় হবে শত কোটি টাকা। আর যদি দান করে প্রত্যেকেই এক হাজার টাকা, তাহলে নিমিষেই জোগাড় হবে হাজার কোটি টাকা। সুতরাং এই উদ্যোগ আজ আমাদেরকে গ্রহণ করতে হবে। দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী, শিল্পপতিসহ ধনী মানুষদের আজ দুর্গতদের জন্য অনেক কিছু করার আছে। যার পক্ষে যতটুকু সম্ভব তা যদি আমরা দুর্গতদের জন্য করি, তাহলে খুব সহজেই বিশাল একটি ত্রাণ তহবিল গড়ে উঠবে। আর এই তহবিলকে যথাযথ ব্যবহার করে এইসব দুর্গত মানুষকে আবারো সুন্দর জীবনে ফিরিয়ে আনা যাবে। তাই এই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য আজ সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি সেক্টরকেও এগিয়ে আসতে হবে। দেশের মানুষের উপকার করার এখনই সময়। দেশের কর্পোরেট গ্রুপসমূহকে কর্পোরেট স্যোশাল রেসপনসিভিলিটির অংশ হিসাবে ত্রাণ কাজে এগিয়ে আসতে হবে। বিভিন্ন শিল্পগ্রুপ বেসরকারি ব্যাংক, দৈনিক পত্রিকাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ত্রাণ তহবিল গঠন করতে হবে। তারা উদ্যোগ নিলেই তাদের সেই উদ্যোগে এদেশের মানুষেরা স্বতস্ফুর্তভাবে সহযোগিতা করবে এবং সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। আজ প্রয়োজন উদ্যোগের এবং প্রয়োজন উদ্যোক্তার। মনে রাখতে হবে, এটা জাতীয় সমস্যা। বন্যার কারণে যারা আজ সকল সহায় সম্পদ হারিয়ে বেঁচে আছে, তারা সবাই আমার আপনার মতই মানুষ। মনে রাখতে হবে, আগামীতে ওদের মতো আমরাও হতে পারি বিপদগ্রস্ত। আজকে ওদের যেমন প্রয়োজন আমাদের সাহায্য, তেমনি আগামীতে আমাদের প্রয়োজন হতে পারে ওদের সাহায্য। সুতরাং মানবতার স্বার্থেই তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।

সামনেই পবিত্র ঈদুল আজহা এবং আগামি ১০ জুলাই পবিত্র কোরবানি পালিত হবে। সামর্থ্যবান মুসলমানরা ঈদুল আজহার সময় মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। এই কোরবানির প্রধান উদ্দেশ্য এবং মর্মবাণী হচ্ছে ত্যাগ করা। আর তাই কোরবানির উদ্দেশ্যে জবাইকৃত পশুর গোশতের তিন ভাগের দুই ভাগই ফকির, মিসকিন এবং গরিব আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে বিলিয়ে দিতে হয়। তাই সম্ভব হলে এবার বেশি বেশি কোরবানি দিতে হবে, যাতে গরিব-দুঃখীদের সঙ্গে বন্যা দুর্গত মানুষদেরও কোরবানির গোশত দিয়ে সহায়তা করা যায়।

বাংলাদেশ একটি গরিব দেশ এবং ষোল কোটি মানুষের দেশ। এদেশের অনেক মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যেই বেঁচে আছে। বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় আর জ্বলোচ্ছাস হয়েছে আমাদের নিত্যসঙ্গী। কিছুদিন পরপর এসব আমাদের জীবনে চক্রাকারে ঘুরতে থাকে। সুতরাং প্রকৃতির এই প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করেই আমাদের বাঁচতে হবে। এদেশ ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে বসবাস করার সুযোগ আমাদের নেই। এখানেই জন্মেছি এবং এখানেই বাঁচতে হবে। প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করে আমাদের আবারো সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে। সুতরাং আমাদের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে একতা, বন্ধুত্ব এবং সম্প্রীতি। আমরা প্রায় প্রত্যেকেই কোনো না কোনো ধর্মে বিশ^াসী। আর প্রত্যেক ধর্মই মানব কল্যাণকে ধর্মীয় কাজের অংশ করেছে। সুতরাং মানবতার পাশে দাঁড়ানো, বন্যায় বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদেরকে আর্থিকভাবে সাহায্য করাটা ধর্মীয় কাজেরই অংশ।

লেখক: প্রকৌশলী ও উন্নয়ন গবেষক।
omar_ctg123@yahoo.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন