মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উপ সম্পাদকীয়

সন্ত্রাস প্রধান ইস্যু : বন্যার্ত মানুষের পাশে কেউ নেই

প্রকাশের সময় : ৩০ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মুনশী আবদুল মাননান

সন্ত্রাস এখন প্রধান ইস্যু। আলোচনার শীর্ষে এসে উপনীত হয়েছে এই ইস্যু। এর আগেও এটি ইস্যু ছিল। তবে গুলশান ও শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাকা-ের পর তা সর্বোপরে উঠে এসেছে। গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ১৭ বিদেশি ও তিন বাংলাদেশি নিহত হন। একই সঙ্গে হামলাধারী ছয়জনও নিহত হন। শোলাকিয়ার হামলায় দুই পুলিশসহ এক গৃহবধূ নিহত হন। এর আগে টার্গেট কিলিং অনেক হয়েছে। এতে যাজক, পুরোহিত, ভিক্ষু, ইমাম, অধ্যাপক, প্রকাশক, ব্লগলেখক মারা গেছেন কিংবা আহত হয়েছেন। দুজন বিদেশিও সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন। এসব হত্যাকা-ের ঘটনাকে সরকারি মহল থেকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হলেও পরে স্বীকার করা হয়েছে, এগুলো পরিকল্পিত হত্যাকা-। লক্ষ্যণীয়, কিছু টার্গেট কিলিংয়ের দায় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংগঠন আইএস স্বীকার করে নিলেও সরকারি তরফে বলা হয়েছে, দেশে আইএস কিংবা ওই ধরনের কোনো সংগঠনের অস্তিত্ব নেই, তৎপরতা নেই। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ বলার চেষ্টা করেছে, ওইসব ঘটনার সঙ্গে আইএসের সংশ্লিষ্টতা আছে। নিদেনপক্ষে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক আছে সন্ত্রাসীদের। গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলা ও হত্যাকা-ের পর তাদের দাবি অনেকটাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ওই দুই ঘটনার দায়ও আইএস স্বীকার করেছে। অতঃপর সরকার তার অবস্থান থেকে সরে এলেও বলেছে, সন্ত্রাসীরা হোমগ্লোন। যুক্তরাষ্ট্রের তরফে বলা হয়েছে, তারা হোমগ্লোন হলেও আইএসের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বা সংযুক্ততা থাকতে পারে। বাংলাদেশে সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাকা-ের ঘটনা বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের অংশ। যা হোক, এ নিয়ে বিতর্ক আর বাড়েনি।
এটা ঠিক, গুলশানে সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাকা-ের যে ঘটনা ঘটেছে, সেরকম ঘটনা এর আগে দেশে আর ঘটেনি। আগের টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনাগুলোতে দেখা গেছে, সন্ত্রাসীরা হামলা, হত্যা বা আহত করে পালিয়ে গেছে। গুলশানের ঘটনায় দেখা গেছে, সন্ত্রাসীরা হামলা করে মানুষ জিম্মি করে নির্মমভাবে হত্যা করেছে এবং পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেনি। তারা আত্মঘাতী হয়নি বটে, তবে তাদের পরিণতি হয়েছে প্রায় একই রকম। অভিযানকারীদের গুলিতে তারা নিহত হয়েছে। শোলাকিয়ার ঘটনাও ব্যতিক্রম। ঈদের জামাতকে লক্ষ্য করে এ ধরনের হামলা নিকট অতীতে হয়নি। স্বাধীনতার পর ঈদের জামাতে হামলা ও হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে।
গুলশান ও শোলাকিয়ার ঘটনার পর সরকার, রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠনে বড় রকমের নড়াচড়া পড়ে গেছে। অন্যান্য ইস্যু চাপা পড়ে গেছে। সবার মুখেই সন্ত্রাস দমনের কথা। কীভাবে সন্ত্রাস দমন করা যাবে, সন্ত্রাসীদের নির্মূল করা যাবে, তা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন মতামত ও মতবাদ প্রচার করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সবাই একমত, সন্ত্রাস এ মুহূর্তের একটি গুরুতর সমস্যা এবং ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক হুমকি। সুতরাং, যে কোনো মূল্য এ আপদ দূর করার বিকল্প নেই। যেহেতু একে গুরুতর জাতীয় সমস্যা হিসেবে মনে করা হচ্ছে, তাই জাতীয় ঐক্য বা রাজনৈতিক ঐক্যের বিষয়টি সামনে বা প্রাধান্যে চলে আসছে। বিভিন্ন মহল ও পর্যায় থেকে জাতীয় ঐক্য ও ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপের ওপর গুরুত্ব প্রদান করা হচ্ছে। সরকার অবশ্য জাতীয় ঐক্য গঠনে তেমন আগ্রহ প্রদর্শন করছে না। তার ভাষায়, জাতীয় ঐক্য হয়ে গেছে। আর ঐক্যের প্রয়োজন নেই। এ থেকে এটা স্পষ্টতই প্রতীয়মান হচ্ছে, সরকার এ ব্যাপারে অন্যান্যের সহযোগিতা প্রয়োজনীয় বলে মনে করছে না। সরকার ও তার মিত্ররাই এ সমস্যা মোকাবিলায় যথেষ্ট। সেটা হলে অবশ্য কথা নেই। তবে জাতীয় কোনো দুর্যোগ, সমস্যা বা সংকট মোকাবিলায় সব দেশেই জাতীয় ঐক্যকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয় এবং ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মধ্য দিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে দেখা যায়।
সরকারের কাছে এখন যেন অন্য কোন বিষয়, প্রসঙ্গ ও ইস্যু নেই। সন্ত্রাসই একমাত্র ইস্যু। সরকারের সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি নিবন্ধ এখন এদিকে। সন্ত্রাস মোকাবেলায় বিভিন্ন উদ্যোগ-পদক্ষেপ ও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে সন্ত্রাসীদের ধরার জন্য অভিযান শুরু হয়েছে। অভিযান প্রতিদিনই চলছে, ধরপাকড় অব্যাহত আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এর মধ্যেই সন্ত্রাসীদের কয়েকটি আস্তানার সন্ধান পেয়ে অভিযান চালিয়েছে। এরমধ্যে রাজধানীর কল্যাণপুরে একটি আস্তানায় অভিযান চালানোর সময় ৯ জন সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। সরকারের তরফ থেকে প্রায় লাগাতারই বলা হচ্ছে, আরো সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে, বড় ধরনের হামলা হতে পারে। কল্যাণপুরের ঘটনার পর বলা হয়েছে, ওই অভিযানের ফলে দেশ বড় রকমের হামলা বা বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেয়েছে। একের পর এক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় এমনিতেই মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অবধি নেই। তাদের মধ্যে ভীতি ও আতঙ্ক বিস্তৃত হচ্ছে। সরকারি মহল থেকে যখন বারবারই বলা হচ্ছে, আরো হামলা হতে পারে, বড় হামলা হতে পারে তখন স্বাভাবিক কারণেই মানুষের মধ্যে ভীতি-আতঙ্ক বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এক ধরনের হতাশা ও অসহায়ত্বও স্থান করে নিচ্ছে। একদিকে সন্ত্রাসীদের ভয় অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়েও তারা সন্ত্রস্ত। সন্ত্রাসীদের হুমকি ও হামলায় তাদের আশ্রয় ও নিরাপত্তার জায়গা হলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু সেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকেও যদি জুলুম, নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হতে হয় বা সে রকম আশঙ্কা থাকে তবে মানুষ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, কোথায় তারা নিরাপদ বোধ করবে?
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, গুলশান ও শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার পর বাংলাদেশ যেন এক ভীতির রাজ্যে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশে বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার যেসব পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে তাতে ভীতির পরিবেশটাই প্রকট হয়ে উঠেছে। গুলশান এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যক বাণিজ্যিক ও অন্যান্য স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে। ইস্কাটন গার্ডেনের যে এলাকায় সরকারি কর্মচারীদের আবাস, সেখান থেকে হেয়ার রোড ও মিন্টো রোড পর্যন্ত পুরো মন্ত্রীপাড়ায় যানসহ সাধারণ মানুষের চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নগরের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অধিক সংখ্যায় সশস্ত্র প্রহরার দৃশ্য মনে হয়, ভয়ঙ্কর এক অশুভ শক্তি আমাদের ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছে। খুন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন গুরুতর অপরাধবৃত্তি গৌণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ভীতি ও শঙ্কা প্রবেশ করেছে ব্যক্তি মানুষের মনেও। কিছু মাত্রায় শঙ্কিত নয় এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। সংবাদপত্রের প্রধান বিষয় এখন জঙ্গি তৎপরতা, এর তুলনায় দেশ-জাতির অন্য সব সমস্যা গৌণ হয়ে পড়েছে। সমস্যাটা যে প্রকট এবং মানসিক স্থৈর্য ও বিচারবুদ্ধির জন্য ক্ষতিকর এতে কোনো সন্দেহ নেই।
সন্ত্রাসবাদের হুমকি নাগরিক নিরাপত্তার ওপর যে শঙ্কা বিস্তার করেছে, সরকারের গৃহীত ব্যবস্থাদি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান, বিভিন্ন সংগঠন-সংঘের কর্মসূচি ইত্যাদি কি তাতে কিছুমাত্র আশ্বস্ততা সৃষ্টি করতে পেরেছে? এটি অবশ্যই একটা বড় প্রশ্ন। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এত কিছুর পরও মানুষ আশ্বস্ত হতে পারছে না। ছাত্র-যুবা থেকে সব বয়সী মানুষই ভয়াবহ আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা সবচেয়ে আতঙ্কের মধ্যে পতিত হয়েছে। ওদিকে বিদেশি মিশনের লোকজনসহ বিভিন্ন উপলক্ষে যেসব বিদেশি বাংলাদেশে অবস্থান করছেন তাদের নিরাপদে থাকা ও চলাফেরার জন্য পরামর্শ দিয়েছে তাদের দেশ। তাদের জন্য গৃহীত বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় তারা মুখে সন্তোষ প্রকাশ করলেও অতটা আস্থাশীল হতে পারছেন না। পত্র-পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, বিদেশি সংস্থা ও সংগঠনগুলোর অফিসগুলোতে উপস্থিতির হার অনেক কম। অধিকাংশ সময়ই ফাঁকা থাকতে দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যেই নিরাপত্তার কথা বলে ব্রিটিশ কাউন্সিল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নিরাপত্তা-হুমকির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ রকম খবর প্রায়ই পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হতে দেখা যাচ্ছে। গার্মেন্ট পণ্যের বায়াররা অনেকেই বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গেছেন, অনেকে আসতে চেয়েও আসেননি। যারা আসবেন বলে হোটেল বুকিং দিয়েছিলেন, তারা বুকিং বাতিল করেছেন। ব্যবসায়ীরা তাদের বিরাট ক্ষতির আশঙ্কার কথা বলেছেন। বলা বাহুল্য, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ কোনো কিছুই স্বাভাবিকভাবে হতে বা চলতে পারে না। দেশের জন্য এটা এক বড় অশনি সংকেত।
সন্ত্রাস দমন ও সন্ত্রাসী নির্মূল করার কাজে সরকার যখন তার সকল মনোযোগ নিবন্ধ করেছে, তাবত মহল যখন এ নিয়ে গভীরভাবে বিচলিত, উদ্বিগ্ন ও সোচ্চার তখন এমন কিছু সিদ্ধান্ত, ডিল বা চুক্তি সম্প্রতি হতে দেখা গেছে যা প্রায় লোক চক্ষুর অন্তরালেই রয়ে যাচ্ছে। এরমধ্যে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ চুক্তি, বাঁশখালী বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ চুক্তি, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ চুক্তি, বঙ্গোপসাগরে ব্লক ইজারা দান ইত্যাদিসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বৃহৎ চুক্তি ও সমঝোতা হয়েছে। এসব ব্যাপারে বিভিন্ন মহলে ভিন্নমত ও বিরোধিতা ছিল। তা বিবেচনায় নেয়া হয়নি। সরকারিভাবে ভালো করে প্রচারও করা হয়নি যাতে জনসাধারণ সম্যক অবগত হতে পারে। এ ব্যাপারে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন, গ্যাস-তেল-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেছেন, দেশের ভেতরে কিছু কমিশন ভোগীর স্বার্থে, ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার স্বার্থে বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশকে বাটোয়ারা করে দেয়া হচ্ছে। তার ভাষায়, ‘ভারতকে দেয়া হচ্ছে সুন্দরবনবিনাশী রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, চীনকে দেয়া হচ্ছে বাঁশখালী ধ্বংস করে আরেকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রাশিয়াকে দেয়া হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। আর আমেরিকাকে দেয়া হচ্ছে বঙ্গোপসাগরের বিশাল সম্পদের ব্লকগুলো।’
এও কম বিস্ময়কর নয় যে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এখন বানের পানিতে ভাসছে। কয়েকদিনের মধ্যে মধ্যাঞ্চলও বন্যার কবলে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এবারের বন্যার পরিধি ও প্রকোপ অনেক বেশি। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঘরবাড়ি, খেতের ফসল হারিয়েছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। অগনন মানুষ বাঁধ ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। অথচ পানিবন্দি মানুষ উদ্ধারের যেমন কোনো উদ্যোগ নেই, তেমনি দুর্গত মানুষের ত্রাণ তৎপরতাও অপ্রতুল। বন্যাকবলিত এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনের তরফে যতটুকু সহায়তা দেয়া হচ্ছে তাতে আসলে কিছুই হচ্ছে না। খাদ্য, পানি, ওষুধপত্রের অভাবে মানুষের দুঃখ-কষ্ট ও বিপর্যয়ের শেষ নেই। দুর্গত মানুষের প্রতি এত অমনোযোগ ও অবহেলা এর আগে কখনোই দেখা যায়নি। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বলতে পারি, যখন দেশ বন্যা বা কোনো ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যায়ের মধ্যে পড়েছে তখনই সরকার তা মোকাবেলায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। দুর্গত মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে সব কিছু ফেলে রেখে। শুধু সরকারই নয়, রাজনৈতিক দল, সেচ্ছাসেবী সংগঠন, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, যে যেভাবে পেরেছে মানুষের কল্যাণ ও সেবায় ঝাপিয়ে পড়েছে। দুর্ভাগ্যই বলতে হবে, এবার কেউই বন্যা কবলিত মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়নি। কেন এই উপেক্ষা তার যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ আমাদের জানা নেই।
বন্যা, নদী ভাঙন ও বাঁধ ধসে মানুষের বাস্তুহারা হওয়া, ফসল হারানো এদেশে প্রায় প্রতিবছরের সাধারণ ঘটনা। আমরা বরাবরই দেখেছি, মানুষ মানুষের জন্য, এই সত্যকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছে এ দেশের মানুষ। সরকার তো বটেই, রাজনৈতিক, সেচ্ছাসেবী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ব্যক্তি, বিপন্নের সেবা ও কল্যাণে যথাসাধ্য করতে এতটুকু কার্পন্য প্রদর্শন করেনি। এবার ব্যতিক্রম কেন? সরকার প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত বলে কি দায়িত্বশীলতারও ঊর্ধ্বে চলে গিয়েছে? সরকার যে রকমই হোক, জবাবদিহিতা ও দায়িত্ব মুক্ত হতে পারে না। রাজনৈতিক দলগুলোরই বা কি হয়েছে? তারাও কি জনগণের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করছে না। নাকি তাদের সংকট এতই বেশি যে, যাওয়ার মত অবস্থা নেই? বিভিন্ন সংগঠন-সংস্থা অন্যান্য কাজে যতটা ব্যস্ত, জনসেবায় ততটাই বিমুখ। প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিও নীরব। সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধে কি এতই ধস ও বিপর্যয় ঘটে গেছে যে, বন্যার্তদুর্গত ও বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মানুষের আকাল পড়ে গেছে?

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
AL Amin Shohag ৩০ জুলাই, ২০১৬, ১১:১৬ এএম says : 0
ঠিক। বলবার মত প্রচার করবার লোকটাও দেখিনা। সারা দেশ খালী জংঙ্গী আর ক্ষমতা থাকবার আর যাবার রাজনীতি।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন