যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা আনন্দ-উদ্দীপনা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে রোববার রাজধানীসহ সারাদেশে মুসলিম সম্প্রদায় তাদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা উদযাপন করেছে। মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহ লাভের আশায় ঈদের জামাত শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ্য অনুয়ায়ী পশু কোরবানি দিয়েছেন। গত দুই দিনও রাজধানীসহ সারাদেশে ধর্মপ্রাণ মুসলমাদের কেউ কেউ কোরবানি দিয়েছেন।
রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহসহ সারাদেশের ঈদগাহ ও মসজিদগুলোতে পেশ ইমাম ও খতিবরা ঈদ জামাত পূর্ব বয়ানে কোরবানির তাৎপর্য ও ফযিলত সর্ম্পকে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য তুলে ধরেন। তারা কোরবানির জবাইকৃত পশুর বর্জ্য দ্রুত পরিষ্কারের তাগিদ দেন। সারাদেশের ঈদগাহ ও মসজিদগুলোর ঈদ জামাতে মুসল্লিদের ঢল নেমেছিল। মহান আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা অন্যতম বৃহৎ এই ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করেছেন। প্রতিবছর জিলহজ মাসের ১০ তারিখ এ ঈদ পালিত হয়।
রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৮টায়। কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ঈদের প্রধান জামাতে অংশ নিতে মুসল্লিরা জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে প্রবেশ করেন। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব আল্লামা মুফতি রুহুল আমিনের ইমামতিতে ঈদের প্রধান জামাতে অংশ নেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, রাজনৈতিক নেতারা, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মুসল্লিরা। ঢাকাসহ সারাদেশের ঈদগাহ ও মসজিদে ঈদের জামাতে মুসল্লিদের ঢল নামে। ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ শেষে সমগ্র মুসলিম উম্মাহসহ দেশ ও জাতির কল্যাণ, করোনা মহামারি থেকে মুক্তি, সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
করোনার মহামারির কারণে বিধি নিষেধ থাকায় দুই বছর পর এবার কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্য ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানের দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এবারও সবচেয়ে বড় ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। ১৯৫তম ঈদের জামাতে লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণ করেন। সকাল ৯টায় জামাত শুরু হয়। জামাতে ইমামতি করেন শহরের মারকাজ মসজিদের ইমাম মাওলানা হিফজুর রহমান খান। ঈদগাহ ময়দানে জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিশিষ্টজনরা ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
পবিত্র ঈদুল আজহায় প্রতিবছরের মতো এবারও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদের পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজম কমপ্লেক্সে এবার চারটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া সারাদেশের বিভিন্ন ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত। নামাজ শেষে দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
অপর দিকে, শনিবার মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত করেছে। ঈদে নানা রঙে-ঢঙে সেজেছে ছোট্ট শিশুরা। শনিবার সকালে মধ্যপ্রাচ্যের সউদী আরবে যথাযথ মর্যাদায় মসজিদুল হারাম শরিফে ঈদের নামাজ আদায় করেন লাখ লাখ মুসল্লিরা। এরপরই একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি ও কুশল বিনিময় করেন বিভিন্ন দেশ থেকে আগত মুসল্লিরা। ঈদ জামাত শেষে পেশ ইমাম ও খতিবরা মোনাজাতে বলেন, সারা বিশ্বের মুসলিম মুমিনদের জীবনে ঈদুল আজহা বয়ে আনুক অনাবিল সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও প্রকৃত সফলতা। তারা দেশ জাতির উন্নতি সমৃদ্ধি এবং মুসলিম উম্মাহর শান্তি কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন। মোনাজাতে আল্লাহর নৈকট্য ও ক্ষমা লাভের আশায় মুসল্লিদের মাঝে কান্নার রোল পড়ে যায়। আল্লাহ হুম্মাহ আমিন আল্লাহ হুম্মাহ আমিন ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে উঠে ঈদগাহর ময়দান। বৈশ্বিক করোনা মহামারি থেকে দেশবাসিসহ মুসলিম উম্মাহর হেফাজতে মোনাজাত করা হয়। জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো ঈদুল আজহার তাৎপর্য ও ফজিলত সর্ম্পকে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন