শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

পবিত্র ঈদুল আজহা

| প্রকাশের সময় : ২০ জুলাই, ২০২১, ১২:১১ এএম

করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বৃদ্ধির শঙ্কাজনক পরিস্থিতির মধ্যেই ত্যাগের মহিমা, ঐশী অনুপ্রেরণা ও আনন্দের বার্তা নিয়ে ফিরে এসেছে মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। এই পরিস্থিতির মধ্যেই আগামীকাল বাংলাদেশে উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। আরবী ঈদ শব্দের অর্থ আনন্দ, খুশি, উৎফুল্লতা ইত্যাদি। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে ঈদ নিছকই আনন্দ, খুশি বা উৎফুল্লতা নয়। এর সঙ্গে আধ্যাত্মিক ও ঐতিহাসিক দিকও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। ঈদুল আজহা মহান আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ ও আত্মত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল। পশু কোরবানির মাধ্যমে পরম করুণাময় আল্লাহর নির্দেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ ও তার সন্তুষ্টি অর্জনই ঈদুল আজহার লক্ষ্য। কোরবানি ঈদুল আজহার প্রধান আমল বা কর্তব্য। এর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য হলো নিজের মধ্যে থাকা পশুবৃত্তি ও স্বভাবকে কোরবানির মাধ্যমে বিনাশ করা। মহানবী (সা.) এই ঈদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয়ে বলেছেন : এটি তোমাদের পিতা হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর সুন্নাত। বলাবাহুল্য, হযরত ইব্রাহীম (অ.) আল্লাহ পাকের প্রতি গভীর আনুগত্য ও তাঁর রাহে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের যে নজির স্থাপন করেন, ঈদুল আজহা তারই স্মারক। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নির্দেশে এবং সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হযরত ইব্রাহীম (আ.) তার প্রাণপ্রিয় পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ.)- কে কোরবানি করার যে অনান্য সাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন তার নজির মানব ইতিহাসে বিরল। আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি এবং রহমত ও নির্দেশে হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর স্থলে দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। সেই থেকে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে পশু কোরবানির বিধান চালু হয়।

আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন, কোরবানির পশুর গোশত বা রক্ত কোনোকিছুই আল্লাহর কাছে পৌঁছায়না। বরং তাঁর কাছে পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া। বলার অপেক্ষা রাখেনা, ঈদুল আজহার মর্মবাণী হলো এই তাকওয়া। তাকওয়ার অর্থ হলো মুমিনের সেই সংকল্প যাতে প্রয়োজন বোধে সে তার সবকিছু এমনকি প্রাণও আল্লাহপাকের নামে কোরবানি করতে প্রস্তুত। আসলে যে কোরবানিতে তাকওয়া নেই, আল্লাহপাকের দৃষ্টিতে তার কোনো মূল্য নেই। গোশত খাওয়া, সামাজিকতা রক্ষা করা কিংবা অর্থবিত্তের গরিমা প্রকাশ করা কোরবানি নয়। কোরবানির নিয়ত ও লক্ষ্য যদি ঠিক না হয়, তবে সে কোরবানির কোনো ফায়দা নেই। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, আমাদের দেশে কোরবানির এই দিকটি অনেকেই খেয়াল রাখেন না। অনেকেই কোরবানির মর্মবাণী অনুধাবন না করে নানা লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে কোরবানি করেন। তাদের কোরবানি তাদের কোনো কাজে আসেনা। কোরবানিকে ওয়াজিব করা হয়েছে। যাদের জন্য তা ওয়াজিব রাসুলেপাক (সা.) তাদেরকেই কোরবানি করার নির্দেশ দিয়েছেন। এই মর্মে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন, কোরবানি ওয়াজিব হয়েছে এমন লোক কোরবানি না করলে সে যেন ঈদগাহে না যায়। কোরবানির ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক ও ঐতিহাসিক তাৎপর্যের পাশাপাশি পারিবারিক, সামাজিক, মানবিক নানা কল্যাণকর দিকও রয়েছে। ধনী-দরিদ্র সবাই যেন ঈদের আনন্দ সমভাবে উপভোগ করতে পারে, সে জন্য স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। কোরবানির গোশতের অংশ আত্মীয়-স্বজন ও দরিদ্রের মধ্যে বিতরণ আবশ্যক যাতে তারাও ঈদের আনন্দ সমভাবে ভোগ করতে পারে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, করোনায় বিপর্যস্ত কোটি কোটি মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। পুরনো ও নতুন মিলিয়ে দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক দরিদ্র অবস্থায় রয়েছে। কোটি কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তাদের জীবনে ঈদের আনন্দ বলে কিছু নেই। সামর্থ্য অনুসারে তাদের জন্য সাহায্যেরা হাত বাড়িয়ে দেয়া কর্তব্য। করোনার কারণে দরিদ্র ও কর্মহীন মানুষের মধ্যে ঈদের আনন্দ সওগাত পৌঁছে দেয়া প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের নৈতিক-সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। করোনা সংক্রমণের সতর্কতার পাশাপাশি ডেঙ্গু ও পানিবাহিত রোগের আশঙ্কা সম্পর্কেও সকলের সতর্ক থাকা বাঞ্চনীয়। এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের লোকজন এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন বলে আশা করি। দিশেহারা অসহায় ও অসমর্থ্য মানুষের ত্রাণ সহায়তায় সরকারি-বেসরকারিভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানো জরুরী।

করোনার মধ্যে ঈদে ঘরমুখী মানুষের স্রোতের কমতি নেই। সাত দিনের লকডাউন শিথিল করায় লাখ লাখ মানুষ নাড়ির টানে গ্রামের দিকে ছুটে চলেছে। এই ছুটতে গিয়ে পথে পথে তাদেরকে অন্তহীন দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। মহাসড়কে ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে পড়ে নাকাল হচ্ছে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, ঘরমুখো এসব মানুষের যাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। দেশে যানবাহনের অভাব নেই, যথেষ্ট পরিমাণ সড়ক রয়েছে। শুধু সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দীর্ঘ এই যানজটের মূল কারণ হচ্ছে, সড়কের অবৈধ দখল। সড়কের উপর হাট-বাজার বসা, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ থেকে শুরু করে থ্রি হুইলার জাতীয় ছোট যানবাহন চলাচলের কারণে যানবাহন স্বাভাবিক অবস্থায় চলাচল করতে পারছে না। এই পরিস্থিতি যে ঈদের পরও শহরমুখী হওয়ার ক্ষেত্রে ঘটবে, তা বলা বাহুল্য। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিৎ ছিল সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করা। করোনার মধ্যে এই ঈদযাত্রা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটিও উদ্বেগ জানিয়ে বলেছে, এতে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে পারে। এই শঙ্কা সামনে রেখে, সরকারকে টিকা কার্যক্রম বেগবান করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সবার জন্য টিকার ব্যবস্থা করা হবে। তাঁর কথা অনুযায়ী, দেশে টিকার মজুত ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। টিকা সংকট কেটে যাচ্ছে। এখন এ টিকা যত দ্রুত প্রয়োগ করা হবে, করোনা থেকে সুরক্ষার বিষয়টি তত দ্রুত হবে। এ থেকে পিছিয়ে পড়ার সুযোগ নেই। পাশাপাশি সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে অসহায় ও দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমরা সামর্থ্যবান ও বিত্তবানদের প্রতি আহবান জানাই। ঈদের আনন্দ, কোরবানির গোশত ভাগাভাগির মাধ্যমে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ত্যাগের মহিমায় আত্মনিবেদিত হওয়া সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য। করোনা থেকে মুক্তির জন্য আমাদেরকে আল্লাহতায়ালার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। আল্লাহতায়ালার দয়া ও অনুগ্রহ ছাড়া করোনা থেকে মুক্তির আর কোনো উপায় নেই। আমরা ঈদের মোনাজাতে আল্লাহতায়ালার কাছে ক্ষমা চেয়ে দোয়া করব। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে হেফাজত করুন। সকলকে ঈদের শুভেচ্ছা, ঈদ মোবারক।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন