শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বলাইশিমুলে খেলার মাঠ রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন

প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

শামসুল আলম খান, ময়মনসিংহ থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

শতবর্ষী বলাইশিমুল খেলার মাঠ দখল করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের প্রতিবাদে এবং মাঠ রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা ও দৃষ্টি আকর্ষণের লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কর্মসূচির হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে নেত্রকোণার জেলার কেন্দুয়ার বলাইশিমুল ইউনিয়নের প্রায় দুই হাজার নারী-পুরুষ। বলাইশিমুল ইউনিয়নের একমাত্র এই ঐতিহ্যবাহী মাঠটি রক্ষায় আবারো ফুঁসে উঠেছে শিশু-কিশোর-নারী-পুরুষ-বৃদ্ধ-বণিতা। সকল পেশার স্বতঃস্ফূর্ত স্থানীয় এলাকাবাসী প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধন ও অবস্থান সমাবেশে করেন।

মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শহিদুল ইসলাম বাচ্চু, গোলাম কাওসার, মশিউজ্জামান টিটু, মো. রিয়াদ, আশরাফুল ইসলাম আরিফ, সাইকুল ইসলাম, আতিকুর রহমান চুন্নু, মিজানুর রহমান, দেওয়ান মাহতাব উদ্দিন, হেমুনুর রহমান, হালিমা খাতুন, তানজিনা আক্তার, আঙ্গুরা বানু ও রোকেয়া খাতুন প্রমুখ।
মানববন্ধন ও সমাবেশে প্রতিবাদকারীরা জানান, বলাইশিমুল ইউনিয়নে প্রচুর খাস জমি আছে, সেগুলোতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের গৃহ নির্মাণ না করে একশ্রেণির অতিউৎসাহী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সরকারকে খুশি করার জন্য মাঠ দখল করে খেলার পরিবেশ বিনষ্ট করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের গৃৃহ নির্মাণ করতে উঠে পড়ে লেগেছে। এর ফলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশংকা করছেন ত্যাগী আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। শতবর্ষী লম্বালম্বি বলাইশিমুল খেলার মাঠটির দক্ষিণ পাশে একটু নিচু প্রচুর খালি জমি পড়ে আছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও যাতে মাটি ভরাট করা না লাগে সেজন্য উচু মাঠটিই ধ্বংস করে নির্মিত করা হয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর। স্থানীয় সকল শ্রেণিপেশার মানুষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের বিরুদ্ধে কোনো বিদ্বেষ পোষণ করছে না, এলাকাবাসীর দাবি আশ্রয়ণ প্রকল্পের গৃহ নির্মিত হোক এবং খেলার মাঠটিও অক্ষত থাকুক।

নেত্রকোনার কেন্দুয়ার বলাইশিমুল ইউনিয়নের বলাইশিমুল গ্রামে ১ একর ৮৭ শতাংশ ভূমির প্রাচীন একটি খেলার মাঠের এক অংশে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় গুচ্ছ গ্রাম করছে কেন্দুয়া উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু এলাকাবাসী মাঠে গুচ্ছগ্রাম না করে পাশের খাসভূমিতে অসহায় ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের গুচ্ছগ্রাম করার দাবি জানিয়ে এলাকার নারী-পুরুষ একাধিক মানববন্ধনসহ আদালতে মামলা করেছেন।

মানববন্ধনের মূল সমন্বয়ক মামুনুল কবির খান হলি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, চিরাং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ এবং সাধারণ সম্পাদক, আইন সহায়তা কেন্দ্র ফাউন্ডেশন (বাসক), কেন্দুয়া উপজেলা শাখা, নেত্রকোনা তারা বক্তব্যে বলেন, নেত্রকোনা জেলাধীন কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমুল ইউনিয়নের শতবর্ষী খেলার মাঠটি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি বলাইশিমুল ইউনিয়নের সরকারি খাস জমির পরিমাণ ৮৪ একর, তন্মধ্যে বলাইশিমুল গ্রামেই সরকারি খাস জমির পরিমাণ ১০ একর, ৩ একর ৬৭ শতাংশ জমি কান্দা যা বাড়ি করার উপযোগী।

প্রয়োজনে গ্রামের মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য জায়গা কিনে দিতেও প্রস্তুত। খেলার মাঠ ঠিক রেখে অন্যত্র আশ্রয়ণ প্রকল্প হোক এটাই জনতার চাওয়া। প্রশাসন এবং জনতার মাঝে সাংঘর্ষিক কোনো কিছু কাম্য নয়, চাই সুন্দর একটি সমাধান।
বালাইশিমুল ইউনিয়নবাসী ব্যানারে আয়োজিত ‘শতবর্ষী প্রাচীন বালাইশিমুল খেলার মাঠ থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্প অন্যত্র স্থাপনের দাবিতে গত ১ জুলাই ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শতবর্ষী এই খেলার মাঠটি উদ্ধার করতে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত হন্তক্ষেপ কামনা করে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, তেতুলতলা কলাবাগান মাঠ রক্ষা আন্দোলনের নেত্রী সৈয়দা রত্না, ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক-আবুল কালাম আল আজাদ, কণ্ঠশিল্পী বীথি ঘোষসহ এলাকার ছাত্র ও যুব নেতৃবৃন্দ।

বলাইশিমুল মাঠ রক্ষা আন্দোলনে বক্তারা বলেন ‘মাঠ আন্দোলন যৌক্তিক ও মানবিক আন্দোলন। আগামী প্রজন্মের জন্য এ লড়াই, অন্য যেকোনো আন্দোলন থেকে কম নয়। আপনাদের এ দাবি যদি প্রধানমন্ত্রী শোনেন নিশ্চয় তিনি একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। তিনি আরো বলেন, যারা বালাইশিমুল মাঠ দখল করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায়, তারা পক্ষান্তরে প্রধানমন্ত্রীর আদেশ অমান্য করছে। দেশে উন্নয়ন প্রয়োজন কিন্তু প্রকৃতকে ধ্বংস করে না।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, শত বছরের পুরোনো ওই খেলার মাঠটি বলাইশিমুল গ্রামের ১ একর ৮৭ শতক সরকারি জায়গায় অবস্থিত। সেখানে এলাকার শিশু-কিশোর, শিক্ষার্থীসহ তরুণ-যুবকেরা খেলাধুলা করেন। সম্প্রতি স্থানীয় প্রশাসন মাঠের দুই পাশে ভূমিহীন ও গ্রহহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ২৩টি ঘর নির্মাণ করছে। তাই ওই জায়গার পরিবর্তে মাঠের উত্তর পাশে কিছুটা নিচু জমিতে ঘর নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন