শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

গবেষণা উপেক্ষা করে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগের অভিযোগ

ঢাবির আইইআর-এ শিক্ষক নিয়োগ

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর) অন্তর্ভুক্ত একটি বিভাগে লেকচারার পদে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে এসেছে। শিক্ষকতায় গবেষণাকে উপেক্ষা করে রাজনৈতিক মতাদর্শ বিবেচনায় নিয়োগের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার অভিযোগ ওঠেছে।
সম্প্রতি ইনস্টিটিউটের অধীনে ৫টি বিভাগের ৬ শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ আহ্বান করা হয়। তারমধ্যে একটি বিভাগে নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ রেজাল্টধারী ও একাধিক গবেষণা প্রবন্ধ রয়েছে এমন অন্তত ৫ জনকে বাদ দিয়ে তুলনামূলক নিম্নমানের রেজাল্টধারী একজনকে নিয়োগের বিষয়ে ভাবা হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। যার রয়েছে সুস্পষ্ট রাজনৈতিক পরিচয় কিন্তু গবেষণা প্রবন্ধের ঝুলি শূন্যের কোঠায়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষা প্রশাসন ও নেতৃত্ব বিভাগে স্থায়ী ও অস্থায়ী এ দু’টি পদে শূন্য স্থায়ী অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর পদের বিপরীতে লেকচারার পদে এই নিয়োগ আহ্বান করা হয়। যেখানে একটি পদে রোবেল আহম্মেদ নামের একজনকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

নির্বাচিত এই প্রার্থীর অনার্সে রেজাল্ট ৩.৬৯ এবং মাস্টার্সে ৩.৮৩। একাডেমিক রেকর্ডে তার গবেষণা ও প্রবন্ধ রচনার ঝুলি শূন্য। অপরদিকে একাডেমিক উৎকর্ষতায়, প্রবন্ধ ও গবেষণায়, শিক্ষকতার অভিজ্ঞতায় তার থেকে এগিয়ে থাকা অন্তত ৫ প্রার্থীকে বাদ দেয়া হয় এই পদে। এমনকি তাদের মাঝে একজন যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করা শিক্ষার্থী। যার অনার্স ও মাস্টার্সের সিজিপিএ যথাক্রমে ৩.৯১ এবং ৪.০০। জি এম রাকিবুল ইসলাম নামের ওই প্রার্থীর গবেষণা ও প্রকাশনা রয়েছে ৯টি। যার মধ্যে ৭টি গবেষণা প্রবন্ধ ও ২টি রয়েছে বই। রয়েছে ৯ বছরের শিক্ষকতা করার অভিজ্ঞতা। তিনি বর্তমানে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগের শিক্ষক ও চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত।

এছাড়া আবু হানিফ নামের এক প্রার্থী ময়মনসিংহের একটি কলেজে সাড়ে ৪ বছর যাবত অধ্যাপনা করে আসছেন। যার অনার্স ও মাস্টার্সের রেজাল্ট যথাক্রমে ৩.৮৩ ও ৩.৯৮। ওমর ফারুক নামের আরেক প্রার্থী রয়েছেন, যার অনার্স মাস্টার্সের রেজাল্ট যথাক্রমে ৩.৮৩ ও ৩.৯৫। গবেষণা প্রবন্ধ রয়েছে ২ টি। মোহাম্মদ রাসেল উদ্দিন নামের আরেক প্রার্থী রয়েছেন, যার অনার্স ও মাস্টার্সের রেজাল্ট যথাক্রমে ৩.৫০ ও ৩.৯৫। গবেষণা প্রবন্ধ রয়েছে ১০টি।

তিনি ২০১৭ সালে জাপানের হিরোশিমা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমআইএসসি ও ২০২০ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়াও রোবেল আহম্মেদের চেয়ে তুলনামূলক কম রেজাল্টধারী ওয়ালিউর রহমান আকন্দ নামের আরেক প্রার্থী রয়েছে যার শিক্ষকতা পেশায় সাড়ে ৪ বছরের অভিজ্ঞতাসহ গবেষণা ও প্রকাশনা রয়েছে ৪ টি। যদিও রোবেল আহম্মেদ ও ওয়ালিউর রহমান আকন্দ দু’জনের কারোই মাস্টার্সে কোনো থিসিস ছিল না। এসব যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দিয়ে তুলনামূলক নিম্নমানের রেজাল্টধারী রোবেলকে নির্বাচন করায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন অন্যান্য প্রার্থীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রার্থী ইনকিলাবকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিভাগটিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় গবেষণার উপর। এখানে মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের থিসিস করানো হয়। কিন্তু এমন একজন লোক যার কোনো গবেষণা প্রবন্ধ নেই, মাস্টার্সে থিসিস করার যোগ্যতা ছিল না যার, সে কীভাবে এখানে এসে শিক্ষার্থীদের থিসিস করাবে?

সূত্র জানায়, রোবেল আহম্মেদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিভাগে ৩ বছর যাবত অধ্যাপনা করে আসছেন। তবে অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নির্বাচিত হন। ৩০ থেকে ৩৫ জন প্রার্থীর মাঝে সবচেয়ে নিম্নমানের রেজাল্ট নিয়ে তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পদধারী ছিলেন বলে জানা যায়। রোবেলের পরিবারের একাধিক লোক রাজনৈতিক নেতা বলেও জানা গেছে।
তবে এসব বিষয়ে রোবেল আহম্মেদ বলেন, আন্তর্জাতিক জার্নালে আমার একটি আর্টিকেল সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু লেকচারার নিয়োগে এই তথ্য চাওয়া হয় না বলে আমি তা সিভিতে উল্লেখ করিনি। তিনি বলেন, সিলেক্টেড হওয়ার বিষয়টি আমি এখনো জানি না তবে আমি ভাইভা খুব ভালো দিয়েছি এবং আমি আশাবাদী যে আমাকে নিয়োগ দেয়া হবে। মাস্টার্সে থিসিস না থাকার কারণ হিসেবে তিনি দাবি করেন তৎকালীন সময়ে থিসিস করানোর মতো শিক্ষক ছিল না।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উল্লেখিত নিয়োগ ভাইভা বোর্ডের প্রধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) প্রফেসর ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা একাডেমিক রেজাল্ট, ভাইভা বোর্ডে তার পারফরম্যান্স, গবেষণা করার কোয়ালিটি, শিক্ষাদানের কোয়ালিটি, একজন শিক্ষক হিসেবে তিনি শ্রেণিকক্ষে কেমন হবেন তার অভারল এসেসমেন্ট দেখি এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগে তার জ্ঞানের গভীরতা কেমন এসসবকিছু বিবেচনা করেই সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এখন যারা নির্বাচিত হবেন না তারা তো অভিযোগ করবেনই। এটা যে শুধু এইক্ষেত্রে হয় তা নয় বরং সবক্ষেত্রেই কিন্তু এমনটা হয়।
তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, বিষয়টি আমার নজরে আসেনি, আসলে দেখব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Dr. Mohammad Ziaul Hoque ১৭ জুলাই, ২০২২, ৫:৪৭ এএম says : 0
ঢাকা বিশ্ববিদ্দালয়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকের সংখ্যাই বেশি। এদের বেশির ভাগের গবেষণা বলতে কিছু গরুর রচনা ছাড়া কিছুই নেই। ইসলাম বিদ্বেষিতা, ভারতীয় করণ কর্মসূচি পালন ও দলকানা বিবৃতি দেয়া ছাড়া এদের আর কোন কাজে আগ্রহ নেই।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন