বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

কাজের তাগিদে ঢাকায় ফেরা

একলাছ হক | প্রকাশের সময় : ১৭ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

ঈদুল আজহা উদযাপন শেষ। কর্মব্যস্ত মানুষ যারা গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন অত্মীয়দের সাথে ঈদ উদযাপন করতে তারা এখন ঢাকায় ফিরছেন। ইতোমধ্যে অনেক অফিস খোলা হয়ে গেছে। ঈদের ছুটি শেষ হলেও অনেকেই নিয়েছেন অতিরিক্ত ছুটি। অনেকে পরিবারের নারী ও শিশু সদস্যদের গ্রামে রেখেই ঢাকায় এসেছেন কয়েকদিন আগেই। যারা অতিরিক্ত ছুটি নিয়েছেন তারা এখন আসতে শুরু করেছেন। তারা কর্মস্থলে যোগ দেবেন সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার থেকে। আবার স্কুলসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোদমে খোলা হবে এ সপ্তাহ থেকেই। এসব নানা বিষয় মাথায় নিয়েই গ্রামে ফেরা মানুষ একসাথেই ঢাকায় ফিরছেন।

দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা মাধ্যমেই রাজধানীতে আসছে লোকজন। যারা নিজের গাড়িতে করে যাতায়াত করছেন তারা এবার সহজেই ঢাকায় ফিরছেন। আর যারা ট্রেন, বাস, লঞ্চসহ অন্য কোন গণপরিবহনে ঢাকায় আসছেন তাদের অনেককেই কিছুটা যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে। তবে সড়কে যানজট কম থাকায় ভোগান্তি ছাড়াই ঢাকায় প্রবেশ করছে দূরপাল্লার বাসগুলো।

গতকাল শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, বাস টার্মিনালগুলোতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা যাত্রীরা নামছেন। একসাথে অনেক বাস যাত্রী নিয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করছে। মানুষের চাপ দেখা গেছে সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলীতে। কমলাপুর, আরামবাগ, টিটিপাড়া, মালিবাগ, কল্যাণপুর এলাকাও নামছেন অনেক যাত্রী। রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে ভোর থেকেই দূরপাল্লার পরিবহনগুলো ঢাকায় প্রবেশ করতে শুরু করেছে। বিভিন্ন গন্তব্য থেকে আসা বাসগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঢাকায় পৌঁছায়। সড়কপথে যানজটের কবলে পড়তে হয়নি বলে জানান যাত্রীরা।

রাজশাহী থেকে আসা সাইদুল বলেন, রাস্তায় তেমন কোন যানজট নেই। তবে ঢাকায় আসার টিকিট কাটতে কষ্ট হয়েছে। ভোগান্তি ছাড়াই পৌঁছাতে পেরে ভালো লাগছে। কয়েকটি স্থানে হালকা যানজটে পড়লেও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি। অনেক মানুষ একসঙ্গে যাত্রা করার কারণে ফেরার পথে টিকিট পেতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে।

সড়কপথে গলাকাটা ভাড়া, যানজট ভোগান্তির জন্য ট্রেনযাত্রায় স্বচ্ছন্দ্য বোধ করে উত্তরাঞ্চলের মানুষ। কিন্তু শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে উত্তরাঞ্চলের ট্রেনের যাত্রীদের। নীলফামারীর চিলহাটী থেকে ছেড়ে আসা আন্তনগর নীলসাগর এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে কমলাপুর ছেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু এটি সঠিক সময়ে কমলাপুরেই আসেনি নীলসাগর এক্সপ্রেস। গতকালও ঢাকা থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা দেরিতে ছেড়ে যায় নীলসাগর এক্সপ্রেস। দিনাজপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা একতা এক্সপ্রেস ট্রেন তিলকপুর স্টেশনে পৌঁছালে দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে সারাদেশের ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এ ঘটনার পর থেকে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে।

গতকাল সকাল থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা কর্মজীবী মানুষের ঢল নামে ফেরিঘাটে। তবে মানুষের ভিড়ে যানবাহনগুলোর ফেরিতে উঠতে মাঝে মাঝে কিছুটা সময় লাগছে। ফেরিতে ওঠা যানবাহনের মধ্যে মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলের সংখ্যাই বেশি। যাত্রীরা বলছেন, অন্যবারের তুলনায় এবারের ঈদযাত্রা ছিল অনেকটা স্বস্তির। এর আগে ফেরি পারের অপেক্ষায় মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে। এমনকি অনেক গাড়িকে এক-দুই দিন ঘাটেই যানজটে লাইনে বসে থাকতে হয়েছে। এতে আটকে থাকা মানুষসহ যানবাহনের চালক ও সহকারীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়।

বঙ্গবন্ধু সেতু-পূর্ব এলাকার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে প্রায় ১২ কিলোমিটারজুড়ে যানবাহন ধীরগতিতে চলাচল করে। এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু-পূর্ব পর্যন্ত সড়ক দুই লেনের হওয়ায় গাড়িগুলো এলোমেলোভাবে চলাচল করছে। এজন্য ১৪ কিলোমিটার সড়কে গাড়ি ধীরগতিতে চলাচল করে। ফলে কর্মস্থলে ফিরে আসার পথে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বিভিন্ন পরিবহনের অনেক যাত্রীকে।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার পাশে স্থাপনা থাকার কারণে যানজট লেগে থাকে। ঈদের সময় অন্যান্য সড়কে গাড়ির চাপ কম থাকলেও এই সড়কে থাকে বেশি। গতকালও এই সড়কে বিভিন্ন এলাকার বাসগুলোতে যাত্রীদের ভোগান্তি পেতে হয়েছে। যাত্রীবাহী বাসগুলো প্রতিযোগিতা, রাস্তায় দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করানোর কারণে এই সমস্যা হয় বলে জানান যাত্রীরা।

গতকাল রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এলাকায় ঢাকায় ফেরা মানুষের ভিড় দেখা গেছে। ঈদের আগে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের অনেকেই পদ্মা সেতু দিয়ে গ্রামে গেছেন। ফলে অন্যান্য বছরের মতো এবার ঈদের আগে লঞ্চ মালিকদের যাত্রী নিয়ে অসন্তোষ ছিলো। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টে গেছে ঈদের আগের দুইদিনে। এবার ফেরার পথেও আগের মতো যাত্রীদের দেখা মিলেছে। ঢাকামুখী মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা সবগুলো লঞ্চে। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে লঞ্চগুলো। চাঁদপুরের লঞ্চগুলোতেও যাত্রীতে ভরপুর ছিলো। ঢাকায় নেমে এত মানুষের গন্তব্যে পৌঁছানোর যানবাহন সঙ্কটের সুযোগ নিয়ে বাস, সিএনজি ও রিকশাচালকরাও বাড়তি ভাড়া নিয়েছেন। বিশেষ করে ঘাটের আশপাশে রাতভর অবস্থান করা বাস ও সিএনজি চালকরা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ভাড়া নিয়েছেন যাত্রীদের কাছ থেকে।

সিএনজি অটোরিকশা চালক রিপন মিয়া বলেন, এবার ঈদে গ্রামের বাড়িতে যেতে পারিনি। ঈদের দিন থেকে গত কয়েকদিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ছিলো ফাঁকা। লোকজন তেমন ছিলো না। কয়েকদিন যাত্রী কম থাকায় আয়ও কম হয়েছে। এখন আবার অনেক যাত্রী আসছে। ভাড়াও অগের চেয়ে একটু বেশি নিচ্ছি। তবে অনেক যাত্রী ইচ্ছে করে একটু বেশি ভাড়া দিয়ে হলেও বাসায় যেতে চায়। তবে কমলাপুর রেল স্টেশন ও সদরঘাট এলাকায় বেশি ভাড়া হয়।

রয়াল পরিবহনের সায়েদাবাদ টার্মিনালের ম্যানেজার ওয়াদুদ ইনকিলাবকে বলেন, ঈদের পর কয়েকদিন বাসে যাত্রী কম ছিলো। গতকাল থেকে আবার আগের মতো লোকজন ঢাকায় আসছেন। এখন আমাদের পরিবহনে কোন সিট ফাঁকা থাকছে না। তবে রাস্তায় যানজট না থাকায় যাত্রীদের ভোগান্তি নেই।###

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন