রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ইভিএম ভোট ডাকাতির মেশিন: খন্দকার মোশাররফ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০২২, ১:৩৪ পিএম

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, বর্তমান ফ্যাসিবাদ ও গায়ের জোরের সরকারের বশংবদ নির্বাচন কমিশন সংলাপের নামে নাটক করেছে। আমরা সহ আরো কয়েকটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল সংলাপে অংশ নেয়নি। তিনি বলেন, সংলাপে অংশ নেয়া অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএম এর বিপরীতে মত দিয়েছে। আমরা তো চাইনা। সুতরাং এটা তো এখানেই মীমাংসিত হওয়া উচিৎ। তিনি বলেন, যে দেশের মানুষ নিজের হাতে ভোট দিতে পারেনা। তারা কিভাবে মেশিনে ভোট দিবে? এই ব্যবস্থা তো বিশ্বে বাতিল করা হয়েছে। কারণ এটা মানুষের তৈরি। সেখানে পেপার ট্রেইল নাই। সুতরাং এটা দূরভিসন্ধিমূলক। এটা ভোট ডাকাতির মেশিন।

বুধবার (৩ আগস্ট) দুপুরে এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে "সরকার ইভিএম-এ নির্বাচন করতে চায় কেনো?" শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ইয়ূথ ফোরাম। সংগঠনের উপদেষ্টা সাঈদ আহমেদ আসলামের সভাপতিত্বে ও সভাপতি মুহাম্মদ সাইদুর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সংসদ সদস্য হারুন অর রশিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, বিলকিস ইসলাম, আনোয়ার হোসেন বুলু, শেখ ওয়াহিদুজ্জামান দিপু, ইয়ূথ ফোরামের উপদেষ্টা মোঃ শুকুর মাহমুদ ববি, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন বিপ্লব, সহ-সভাপতি আজিজুল হাই সোহাগ প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ভোটকেন্দ্রে গোপন কক্ষে কারা থাকে তারা তো সরকারের লোক। তারাই তো ইভিএমের বাটনে চাপ দিচ্ছে। তাছাড়া সেটা বাইরে থেকেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। প্রিসাইডিং অফিসারকে ২৫ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। ফলে তিনি তার ইচ্ছে মতো তার থেকেও বেশি ভোট কাস্টিং করে। এটাকে তো ভোট বলেনা। সুতরাং এটা পরিষ্কার যে তারা আবারো নতুন পদ্ধতিতে ডাকাতি করে গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকতে পারে। কিন্তু এটা হতে দেয়া যায় না। কারণ যারা দিনের ভোট রাতেই ডাকাতি করতে পারে তারা কি না করতে পারে?

তিনি বলেন, বাংলাদেশে আর ভোট ডাকাতির সুযোগ দেয়া হবে না। লাখো শহীদের প্রাণ ও রক্তের বিনিময়ে আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছি। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের সেই লক্ষ্য ও চেতনা আজ ভুলুণ্ঠিত। চেতনার ফেরিওয়ালা যারা তারা গণতন্ত্র হত্য করেছে। তারা ৭২-৭৫ সালে গণতন্ত্র হত্যা করেছিল। এখনো করছে। সুতরাং তাদেরকে ক্ষমতায় রেখে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার কীভাবে সম্ভব?

খন্দকার মোশাররফ বলেন, সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছে। জনগণের প্রতি তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। তারা মেগা উন্নয়নের নামে মেগা লুট করে দেশের রিজার্ভ শুন্য করেছে। তারা বিদ্যুত খাতের জন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছে। কুইক রেন্টালের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। কোনো বিদ্যুত উৎপাদন না করেও ক্যাপাসিটি চার্জের নামে টাকা লুট করছে। তারা সবাই সরকারের ঘনিষ্ঠজন। আজকে দেশের তেল গ্যাস অনুসন্ধান না করে বিদেশ থেকে তেল গ্যাস ও বিদ্যুৎ আমদানি করছে। এভাবে দেশকে আমদানি নির্ভর করে দেশের রিজার্ভ শুন্য করেছে। এখন তারা রিজার্ভের হিসাব নিয়েও মিথ্যাচার করছে। আইএমএফের সাথে তাদের হিসেব মিলছেনা। সরকার এখন আমদানি ব্যয় মেটাতে পারছেনা।

তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন তিনি নাকি লোডশেডিং জাদুঘরে পাঠিয়েছেন। কিন্তু আজকে ছয় থেকে আট ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। এখন তিনি বিএনপিকে হারিকেন দেয়ার কথা বলছে। আরে সেটা করতেও তে ৪/৫ কোটি হারিকেন কিনতে হবে সেই টাকাও তো তাদের নেই॥ আজকে সামাজিক, রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সব ক্ষেত্রে সংকট চলছে। শ্রীলংকার যে সংকট একই সংকট বাংলাদেশেও। এটা তো বেশিদিন লুকিয়ে রাখা যায় না। সময় আসছে বাংলাদেশে সেই অবস্থা দেখবেন।

বিএনপির এই নীতি নির্ধারক বলেন, এখন শুধু রাস্তায় মানুষের ঢল নামা বাকি। আমরা রাস্তায় সংকটের সমাধান করবো ইনশাআল্লাহ। সেই ইতিহাস ও অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। ইয়াহিয়া খানের মতো শাসক টিকতে পারেনি। সুতরাং কারফিউ বা অন্য কোনো ভাবেই ক্ষমতা রক্ষা করতে পারবেন না। রাস্তায় নামলে তদের পতন হবেই হবে। শ্রীলংকায় দুই ভাই ১৮ বছর শাসন করেও শেষ রক্ষা হয়নি। অতএব রাস্তায় নামার বিকল্প নেই। মানুষ দুরবস্থার মধ্যে আছে। তারা একটা পরিবর্তন চান। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নামতে হবে। আমরা সেই লক্ষ্যে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ করছি। রুপরেখা জনগণের সাথে তুলে ধরা হবে। কিভাবে আন্দোলন হবে সেই বিষয়ে ঘোষণা আসবে।

ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ইভিএম কোনো কাজের জিনিস না। বিগত দুই নির্বাচন তারা ডাকাতি করেছে। সরকার এবার দিনের ভোট আগের রাতে ডাকাতি করতে পারবেনা। আর তারা তো ক্ষমতা ছাড়তে পারছেনা। কারণ তারা বাঘের পিঠে সওয়ার হয়েছে। তারা প্রশাসনকে গিলে ফেলেছে। এখন তারা পীড়া দিচ্ছে। লড়াই ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, বিশ্বের বহু দেশ ইভিএম বাদ দিয়েছে। ইভিএমের জারিজুরি চলবেনা। কিন্তু সরকার তো সে পথেই যাচ্ছে। সেজন্য লড়াইয়ে যেতে হবে। এই আন্দোলন বিএনপি ছাড়া সম্ভব না। এই জালিম সরকারের চোখে কোনো চামড়া নেই। তারা লাখ লাখ নেতাকর্মী বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে নিপীড়ন করেছে। বহুদিন ধরে তারা আন্দোলন করছে। এখন জীবনও দিচ্ছে। তবে আমাদের নিজেদের ভুলেও কিন্তু ফ্যাসিবাদ শক্তিশালী হয়েছে। আজকে আওয়ামী লীগকে মানুষ থুথু দিচ্ছে। কোনো মানুষ তাদেরকে দেখতে পারেনা।ফেয়ার নির্বাচন হলে তারা টিকতে পারবেনা। পুলিশ ছাড়া টিকতে পারবে না। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে রাজপথ দখল হয়ে যাবে।
মান্না বলেন, আওয়ামী লীগ বাহ্যিকভাবে আমেরিকা, বিশ্বব্যাংক সহ বিদেশিদের পাত্তা দিচ্ছে না। কিন্তু তলে তলে তাদের পা ধরছে। আমাদের টার্গেট অটুট রাখতে হবে যে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়।তাহলে তারা ইভিএমের স্বপ্নও দেখতে পারবেনা।

এমপি হারুন অর রশিদ বলেন, দেশে নির্বাচনের নামে প্রহসন হচ্ছে। আমরা যে নির্বাচনে এমপি সেটা সরকারের একটা কূটকৌশল। চূড়ান্ত প্রহসন হয়েছে। এখন সরকার ইভিএম এ নির্বাচন করতে চায় কেনো? বর্তমান সরকার জালিম এবং মুনাফেক সরকার। সরকারের কথা ও কাজের কোনো মিল নেই। তারা আমানতের খেয়ানত করছে।দেশে বিদ্যুৎ নেই। সারের দাম বাড়ালেন। দেশকে ভয়াবহ সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা যাবো কোথায়? সুতরাং আমাদের রাস্তায় নামতে হবে। বিএনপি সহ সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব সরকারের।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন তো ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি। সুতরাং নির্বাচন করতে হলে অবশ্যই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। ভোট ব্যবস্থাকে সরকার ধ্বংস করে ফেলেছে। গোটা রাষ্ট্র ব্যবস্থা নির্বাচনী অনিয়ম দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েছে। ভোটকেন্দ্রে গোপন কক্ষে রয়েছে ছদ্মবেশী ডাকাত। হয় ছাত্রলীগ যুবলীগের লোক, নয়তো প্রশাসনের লোক বা ডিবির লোক রয়েছে। আমরা ইভিএম নয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। কারণ দেখেন ঠাকুরগাঁওয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই তবুও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। অথচ ওইখানেই সাত মাসের একটা শিশু মারা গেছেন।
আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ বলেন, ক্ষমতাসীন সরকার ফের ইভিএম ব্যবহার করে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চায়। কিন্তু এবার সেই খায়েশ তাদের পূরণ হবে না। অবশ্যই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন