জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেছেন, ‘দেশে নারী-পুরুষের সমতা বিধান এবং নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হলে সামাজিক কাঠামো ভাঙতে হবে। বদলে ফেলতে হবে বিশৃঙ্খল সমাজের চিত্র। তাহলেই অর্জিত হবে এদেশের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য।’ শনিবার (০৬ আগস্ট) রাজধানীর বেইলি রোডে বাংলাদেশ গার্ল গাইড অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত গাইড হাউজের অডিটোরিয়ামে ১৬তম জাতীয় রেঞ্জার পরিষদ অধিবেশন ও নির্বাচন-২০২২ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘নারী যখন উপেক্ষিত হয়। এর পেছনে অনেক কারণ থাকে। আমরা যদি ধরি নারী এবং পুরুষ সবাই এই সমাজের মানুষ। বঞ্চনার জায়গাটা কি শুধু নারী-পুরুষে বিভেদ। নাকি বঞ্চনার জায়গাটা যে সমাজ আমরা সৃষ্টি করেছি সেটি। আমার তো মনে হয় যে সমাজ আমরা তৈরি করেছি সেটির কারণে নারী বঞ্চিত। নারী প্রথমবার বঞ্চিত সে আদিবাসী। আবার দ্বিতীয় বার বঞ্চিত সে আদিবাসী নারী। তাহলে সংকটটি কোথায়। ধরুন সব পুরুষ আগামীকাল থেকে ভালো হয়ে গেল। তাহলে কী সংকট শেষ হয়ে যাবে? না, শেষ হবে না। কারণ সমস্যাটা আরও গভীরে। সমস্যাটা অর্থনীতিতে, সমাজে, সংস্কৃতিতে, ধর্মে। এর সবকিছুর ¯্রষ্টা আমরা। এর সবকিছুর ভেতরে রয়েছে ক্ষমতার কাঠামো। ক্ষমতাবান নারী অপেক্ষাকৃত কম ক্ষমতাবান নারীকে বঞ্চিত করছে। এই ক্ষমতার কাঠামো ভাঙতে হবে। সেটি ভাঙতে হলে সবাই মিলে ভাঙতে হবে। আর সেটি আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আরও বলেন, ‘আমরা গেরিলা যুদ্ধ করেছি। সেই যুদ্ধে সাহসী যোদ্ধা পুরুষ যেমন ছিল, সাহসী নারী যোদ্ধাও ছিল। আমাদের সভ্যতার বিকাশে, কৃষি উন্নয়নে, মাতৃগর্ভ ধারণ, শিশু প্রতিভা বিকাশ থেকে শুরু করে পৃথিবী সুন্দর করে গড়ে তোলার সবকিছুতে নারীর অংশগ্রহণ অর্ধেক নয়, এর বেশিই। কিন্তু তারপরেও কী নারীর বঞ্চনা দূর করা গেছে। এসব পরিবর্তন করতে হলে সোশ্যাল স্ট্রাকচারে হাত দিতে হবে। সমাজ কাঠামোকে ভাঙতে হবে। সমাজকাঠামো বদলে দেয়া কিন্তু সহজ কাজ নয়। এই পৃথিবীতে শক্তিধর রাষ্ট্র দুর্বল রাষ্ট্রকে আঘাত করে। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার লাখ লাখ মানুষকে শরণার্থী বানায়। সুচির মতো মানুষ নেতৃত্বে থাকতেও মানবাধিকার যখন লঙ্ঘিত হয়, তখন কী তিনি দাঁড়াতে পেরেছেন। কারণ তিনি সামরিক কাঠামোর শিকার। যদি ভাঙতে হয় তাহলে অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ভাঙতে হবে, অর্থনৈতিক বিভেদকে ভাঙতে হবে। বৈষম্যকে ভাঙতে হবে। সেটি করতে হলে নারীর কখনো সমঅধিকার বা কখনো বেশি অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।’
ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘তোমরা যারা গার্ল গাইডস্ করছো- এদেশ তোমার-আমার। আমি কখনো নিরাশ হই না। আমরা একটি দেশ পেয়েছি। এটি এমনি এমনি আসেনি। তোমরা যারা জাতীয় সংগীত পরিবেশন করলে সেই লাল-সবুজের পতাকায় লাখ লাখ নারীর নির্যাতনের প্রতিচ্ছবি ভেসে আসে। আমরা তাদের রক্তঋণে আবদ্ধ। আমরা যারা প্রিভিলেইজড তারা হয়তো খুব সুন্দর গোছানো অফিসে কাজ করি। কিন্তু যে নারী হাজার হাজার ইট মাথায় নিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় শ্রমিকের কাজ করে আমি তাকে সেলুট জানাই। আসো, আমরা তাদের সবাইকে নিয়ে সমাজটাকে নিজেদের মতো করে গড়ে তুলি।’
এই সমাজে যারা হিং¯্র তাদেরকেও সুপথে আনার জন্য কাজ করতে হবে উল্লেখ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি বলেন, ‘এজন্য যা যা করার তা সম্মিলিতভাবে করতে হবে। অশুভ, অসত্য কখনো টেকে না। তাদের রুখে দেয়া সম্ভব। তোমার সত্য, সাহসী উচ্চারণ, তোমার অংশগ্রহণমূলক প্রতিটি কাজ সব অশুভকে রুখে দেবে। আমাদের সমতার সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেটি করতে পারলে আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি আমরা মানবিক, উদার, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নিশ্চিত করতে পারব। আসুন হাতে হাত ধরে প্রিয় দেশমাতৃকাকে গড়ে তুলি, যেখানে অশুভের সঙ্গে দেখা হবে না। তোমাদের সামাজিক আন্দোলন কখনোই নষ্ট হবে না। অর্থের অভাবে কখনোই কোনো শুভ উদ্যোগ ব্যাহত হয় না। আমরা সম্মিলিতভাবে বসে যা যা করার তাই করব। কিন্তু তোমাদের প্রস্তুতির মধ্যে বিজ্ঞান ভাবনা থাকতে হবে। একই সঙ্গে নিশ্চিত করবে তোমার চেষ্টার যেন কোনো ভ্রুটি না থাকে। তবেই আমরা সোনায় মুড়িয়ে সবুজে-শ্যামলে ভরা সুন্দর দেশ গড়ে তুলতে পারব।’
অধিবেশনে বাংলাদেশ গার্ল গাইড অ্যাসোসিয়েশনের জাতীয় কমিশনার ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগমের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ডেপুটি কমিশনার প্রফেসর ড. ইয়াসমিন আহমেদ, জাতীয় ডেপুটি কমিশনার ফেরদৌস প্রমুখ। সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া অধিবেশনের শুরুতেই বাংলাদেশ গার্ল গাইড অ্যাসোসিয়েশনের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে একটি তথ্যচিত্র তুলে ধরা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন