জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেছেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সফলতার দূরদর্শী কারিগর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ যেন শ্রীলঙ্কা না হয়, সেজন্য যা করা দরকার ১৯৯৭ সালে তিনি তা করেছেন। শতভাগ শিক্ষার জায়গায় পৌঁছেও শ্রীলঙ্কা তামিল-সিংহলীদের সংকট থেকে মুক্ত হতে পারেনি। কিন্তু ১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তি চুক্তির মাধ্যমে কোনো তৃতীয় পক্ষের সমঝোতা ছাড়াই বঙ্গবন্ধু কন্যা তাঁর একক নেতৃত্বে পাহাড়ি অঞ্চলের বন্ধুদের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করলেন। সংকটের সমাধান তিনি ‘৯৭ সালেই করে দিলেন। সুতরাং যারা বলে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হবে তারা জানে না যে অতন্ত্র প্রহরীর মতো বঙ্গবন্ধু কন্যা বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির মডেল সাজিয়েছেন।’ বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের গাজীপুরস্থ ক্যাম্পাসে সিনেট হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় বঙ্গবন্ধু কন্যার নানা অবদান তুলে ধরে ভিসি ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘সমুদ্রসীমা বিজয় তথা আরেকটি রাষ্ট্র পাবার যে কৃতিত্ব সেটি দেখিয়েছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তিনি ডেল্টা প্লান ঘোষণা করলেন। আগামী শতবর্ষের বাংলাদেশ কোথায় দাঁড়াবে, অর্থনৈতিক শক্তি কোথায় যাবে। আগামী একশ বছরে পরাশক্তির জায়গা কোথায় যাবে- সেই জায়গায় বাংলাদেশের অবস্থান কী হবে-এসব পরিকল্পনা তিনি করে রেখেছেন। এসব কিছুর মধ্যে সমুদ্র বিজয় এবং এর স্থায়ী সমাধান কতবড় ঘটনা, কতবড় সংকট থেকে তিনি আমাদের মুক্ত করেছেন তা অনুধাবন করা অত্যন্ত জরুরি। আমাদের আগামী প্রজন্ম পৃথিবীর দেশে দেশে যখন এই সংকট তৈরি হবে, তখন স্মরণ করবে বঙ্গবন্ধু কন্যা কতবড় অর্জন আমাদের জন্য রেখে গেছেন। আমাদের ছিটমহলের যে সংকট ছিল, ওই সংকট যদি দূর না হতো তাহলে আগামী দিনে যে কোনো সময় ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক নষ্ট করা যেতো। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা তা করতে দেননি। তিনি তা জানতেন বলেই ছিটমহল সমস্যা সমাধান করে আমাদেরকে চাদরে আগলে রেখেছেন। এরকম অসংখ্য উদাহরণ আছে যার কারণে বঙ্গবন্ধু কন্যা এদেশের মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় থাকবেন আজীবন।’
দেশের প্রখ্যাত এই সমাজবিজ্ঞানী বলেন, ‘আজ থেকে ২৫/৩০ বছর আগে ভাতের মাড় খাওয়ার জন্য গরিব মানুষ দারস্থ হতো। কিন্তু আজ তিনবেলা পেট ভরে খাওয়ার পরেও আমরা আমাদের উদ্বৃত্ত খাদ্য রপ্তানি করতে পারি। এটি কী এমনি এমনি হয়েছে? তা হয়নি। বঙ্গবন্ধু কন্যার একটি প্রিয় স্লোগান- বাঙালির ভাত ও ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা। এই ভাত এবং ভোটের অধিকার নিশ্চিত করে বাঙালির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করেছেন। তিনি কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা আগে বলেননি। তিনি আগে বলেছেন ভোট এবং ভাতের অধিকারের কথা। এটি আগে নিশ্চিত করে এরপর বলেছেন ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা। অর্থাৎ উন্নয়নের যে রূপকল্প, মহাপরিকল্পনা সেটিতে কোনটির পর কোন ধাপে যেতে হবে তা তিনি ঠিক করেছেন নিপুণ হাতে। আমি তো মনে করি পৃথিবীর অনেক সেরা রাষ্ট্রপ্রধানরাও উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সফলতা বঙ্গবন্ধু কন্যার মতো কেউ দেখাতে পারেননি। বঙ্গবন্ধু কন্যার অপূর্ব গুণাবালীর একমাত্র কারণ মানুষের জন্য অপার ভালোবাসা। মানবমুক্তির যে বাসনা সেটি ছিল তাঁর হৃদয়ে। ক’টা মানুষ পৃথিবীর সামনে দাঁড়িয়ে, জাতিসংঘসহ অন্যান্য ফোরামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে বলতে পারবেন আমরা যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা চাই না। কিন্তু তিনি বলেছেন। শেখ হাসিনা যতটা না বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার নেত্রী তারচেয়ে আজ শেখ হাসিনা বিশ^জনীন নেত্রীতে পরিণত হয়েছেন। পৃথিবীর অনেক দুর্বল রাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু কন্যার দিকে তাঁকিয়ে থাকে শক্ত-দৃঢ় উচ্চারণের জন্য, যেটি তিনি কারো অনুরোধে করেন না। নিজের অনুভূতি থেকে স্পষ্ট উচ্চারণে তিনি এসব করে থাকেন। কারণ বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন ছিল মানবমুক্তি আর তাঁর কন্যার রাজনৈতিক দর্শনও তাই।’
মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. নাসরীন আহমাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শৈশব, কৈশোর জীবনের নানা ঘটনা তুলে ধরে বলেন, ‘শেখ হাসিনা ছোট বেলা থেকেই সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি ভীষণ দুর্বল ছিলেন। স্কুল থেকে ফিরে গল্পের বই পড়তেন। রবীন্দ্র সংগীত শুনতেন। ছিলেন আমুদেও। শৈশব-কৈশোর পেরিয়ে তিনি যখন কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়ে জীবনে পা বাড়ালেন, তখন তিনি রাজনীতিতে একজন নিবেদিতপ্রাণ হয়ে নিজেকে তৈরি করলেন।
জীবনে নানা ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে রাজনৈতিক অঙ্গনে তিনি একজন বিচক্ষণ রাজনীতিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেন। যার প্রমাণ এখন আমরা প্রতিটি ধাপে দেখতে পাই। রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় শেখ হাসিনা ছোট বেলা থেকেই রাজনীতি সচেতন ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে থেকে বঙ্গমাতা যেমন রাজনীতি রপ্ত করেছেন, শেখ হাসিনাও রাজনীতিকে রপ্ত করেছেন সেই ছোট বেলায়। তাদের সবার লক্ষ্য এক ও অভিন্ন। আর তা হচ্ছে দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসা।’
জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করেছে। বাদ যোহর বিশ^বিদ্যালয়ের মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল আয়োজন করা হয়। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এছাড়া ক্যাম্পাসে ফলোজ, বনোজ ও ঔষধি গাছ রোপণ করে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন উপাচার্য। ক্যাম্পাসে মেডিকেল সার্ভিসেস দপ্তরের মেডিকেল অফিসার ডা. শামীম আরেফিনের তত্ত্বাবধানে রক্তদান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলোতেও অনুরূপ কর্মসূচি পালন করা হয়।
আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বিশ^বিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ, ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিশ^বিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর আবদুস সালাম হাওলাদার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন। অনুষ্ঠানে বিশ^বিদ্যালয়ের ডিনবৃন্দ, বিভিন্ন দপ্তরের বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন