জ্বালানীর মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়ছে না দক্ষিণাঞ্চলের সাথে সবচেয়ে বড় নৌপথে। তবে কোন ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহনের আগেই এ অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ রুটসমুহের লঞ্চে যে যার খুশিমত করে ভাড়া বৃদ্ধি করে নিয়েছে ইতোমধ্যে। সড়ক পথেও শণিবার থেকে অঘোষিতভাবে ভাড়া বৃদ্ধির পরে রোবববার সকাল থেকে সরকারী সিদ্ধান্তের আলোকে নতুন ভাড়া কার্যকর হয়েছে। তবে কোন কোন রুটে সরকারী প্রজ্ঞাপনের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে গত দুদিনে। আর ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে শণিবারের মত রবি-সোমবারেও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন অভ্যন্তরীন রুটে যাত্রীদের সাথে বচসা থেকে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হবার অভিযোগ রয়েছে।
ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে বরিশাল থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা পর্যন্ত ১৬৫ কিলোমিটার সড়ক পথে সাধারন এসি বাসে ভাড়া সাড়ে ৭শ টাকার স্থলে সাড়ে ৯শ থেকে ১ হাজার টাকা এবং ডিলাক্স শ্রেণীর এসি বাসে ১ হাজার টাকার স্থলে সাড়ে ১২শ ১৩শ টাকা আদায় করা হচ্ছে। তবে বিআরটিসির এসি বাসে রোববার থেকে সাড়ে ৫শর স্থলে ৬শ টাকা করেই আদায় করা হলেও সংস্থাটির মাত্র ১৪টি গাড়ী এ রুটে চলাচল করায় সেখানে ভ্রমন কঠিন। নন এসি বাসেও বরিশালÑঢাকা রুটে ৭শ টাকা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে রোববার থেকে।
বরিশাল-ঢাকার মত বরিশাল-খুলনা-যশোর-বেনাপোল ছাড়াও উত্তবঙ্গগামী সব বসেই রোববার সকাল থেকে নতুন ভাড়া কার্যকর হওয়ায় সাধারন যাত্রীরা চরম বিপাকে পড়েছেন।
তবে সড়ক পথে ভাড়া বৃদ্ধির এ সুযোগকে সাধারন মানুষকে নৌপথ মুখি করতে সচেষ্ট বেসরকারী নৌযান মালিকগন। গত ২৬ জুন পদ্মা সেতু চালু হবার পরে দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগের নৌ পরিবহন সেক্টরে ভাটির টান শুরু হয়। যাত্রীর অভাবে শুধু নৌযান মালিকগনই নয়, ব্যাংক সহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানেরও ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছে ইতোমধ্যে। বরিশাল সহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বানিজ্যিক ব্যাংক সহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ১ হাজার কোটি টাকারও বেশী বিনিয়োগ রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের নৌ পরিবহন সেক্টরে। সে বিনিয়োগ নিয়ে চরম উৎকন্ঠা তৈরী হয়েছে পদ্মা সেতু চালু হবার পরে নৌ পরিবহন সেক্টরে যাত্রী সংকটে।
কিন্তু শণিবার থেকে ডিজেল সহ সব ধরনের জ্বালানীর মূল্য বৃদ্ধিকে এখন কিছুটা আশির্বাদ হিসেবে দেখছেন নৌ পরিবহন খাতের ব্যাবসায়ীগন। যদিও বিষয়টি নিয়ে এখনই মুখ খুলতে নারাজ এসব ব্যাবসায়ীবৃন্দ। জ্বালানীর মূল্য বৃদ্ধি কার্যকরের ২৪ ঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে সড়ক পরিবহন মালিকগন সরকারীভাবেই যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধি করে নিয়েছেন। কিন্তু নৌ পরিবহন ব্যাবসায়ীগন বিষয়টি নিয়ে চুপ থেকে দেশের সবচেয়ে বড় নৌ-বানিজ্যের রুটে ভাড়া বৃদ্ধি না করার অঘোষিত সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন।
বর্তমানে বরিশাল,পটুয়াখালী ও ভোলা থেকে ঢাকাগামী বেসরকারী নৌযানের ডেক শ্রেণীতে সরকার অনুমোদিত ভাড়া সাড়ে ৩শ টাকার বেশী হলেও বেশীরভাগ নৌযানই ২শ টাকায়ও যাত্রী পরিবহন করছে। অনুরূপভাবে ছাত্র ও পেশাজীবীদের জন্য বাতানুকুল সোফা শ্রেণীতে ভাড়া এখনো ৫শ টাকা। একক শয্যার বাতানুকুল প্রথম শ্রেণীর কক্ষ ১ হাজার ও দৈত শয্যার ভাড়া ২ হাজার টাকা হলেও নন এসি প্রথম শ্রেণীতে ১৮শ টাকা ভাড়া বহাল রয়েছে।
পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর ও ঝালকাঠী থেকেও ভাড়া প্রায় অনুরূপ। এহিসেবে দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকায় সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও নিরাপদ পরিবহন এখনো নৌপথই। পদ্মা সেতু চালু হবার পরে ভাংগা থেকে বরিশাল পর্যন্ত ৯৫ কিলোমিটার সড়ক পথে দূর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুনেরও বেশী। উপরন্তু ১৮ থেকে ২৪ ফুট প্রসস্ত এ মহাসড়কের ওপর হাট বাজার থেকে শুরু করে নানা অবৈধ স্থাপনায় যানাবাহনের নির্বিঘ্ন চলাচলকেও বাধা গ্রস্থ করছে । ফলে এ ৯৫ কিলোমিটার মহাসড়ক অতিক্রম করতে বেশীরভাগ যানবাহনেই এখন প্রায় ৩ ঘন্টা সময় লাগছে।
সড়কে পথের এসব বিড়ম্বনার সাথে ভাড়া বৃদ্ধিকে পুজি করে জ্বালানীর মূল্য বৃদ্ধির পরেও নৌযান মালিকগন দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত নৌপথে কোন ধরনের ভাড়া না বাড়িয়ে যাত্রীদের আবার নৌপথমুখি করার সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছেন। তবে কোন নৌযান মালিকই এসব বিষেয় অপতত কথা বলতে রাজী হননি। তাদের মতে, দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত বিনিয়োগের নৌপরিবহন খাতকে রক্ষায় সবার সহযোগীতা প্রয়োজন। এতে দেশের পরিবহন সেক্টরে একটি সুস্থ প্রতিযোগীতা সহ নিরাপদ যাত্রী পরিবহন সহ বিশাল বিনিয়োগ নিরাপদ থাকবে বলে মনে করছেন নৌযান মালিকগন। পাশাপাশি নৌ পরিবহন সেক্টরে বিশাল কর্মসংস্থানও নিরাপদ থাকবে বলে মনে করছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন