ওমরাযাত্রীদের বিমানের টিকিটের দাম দেদারসে বাড়ছে। যাত্রী পরিবহনের ক্যাপাসিটির তুলনায় ওমরাযাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সাউদিয়া এয়ারলাইন্স ও বিমান টিকিটের দাম বাড়াচ্ছে। টিকিটের সঙ্কট চরম আকার ধারণ করায় অনেক ওমরাযাত্রী বাধ্য হয়েই বিজনেস ক্লাসের টিকিট অতিরিক্ত টাকা দিয়ে কিনে ওমরায় যাচ্ছেন। এ সুযোগে সিন্ডিকেট চক্র বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের টিকিট ব্লক করে রেখে চড়া দামে বিক্রি করছে। বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের টিকিট অতিরিক্ত দিয়ে কিনতে ওমরাযাত্রীদের গলদঘর্ম। সিস্টেমে বিমানের ওমরাযাত্রীদের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের একটি টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। আবার বেশি টাকা দিলে ওমরাহ টিকিট মিলছে। যথা সময়ে সাউদিয়া ও বিমানের টিকিট না পেয়ে ওমরাযাত্রীরা চরম হতাশায় ভুগছেন। হাবের একাধিক সূত্র এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এদিকে, ওমরা টিকিটের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং আগস্ট মাসের ১৫ দিন ও সেপ্টেম্বর পুরো মাসের বিমানের টিকিট বিক্রি হওয়ায় বিস্মিয় প্রকাশ করেছেন আটাবের মহাসচিব আব্দুস সালাম আরেফ। গতকাল শনিবার আটাব মহাসচিব আরেফ ইনকিলাবকে বলেন, করোনা মহামারির দু’বছর পর মধ্যপ্রাচ্য থেকে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী কর্মী ছুটিতে দেশে এসেছে। ছুটি শেষে তারা বিদেশের স্ব স্ব কর্মস্থলে ফিরে যাচ্ছেন। এ জন্য সাউদিয়া ও বিমানের টিকিটের উপর চাপ বাড়ছে। এক প্রশ্নের জবাবে আটাব মহাসচিব বলেন, দেড় মাস আগেই বিমানের সউদীগামী সকল টিকিট বিক্রি হবার বিষয়ে আমরা বিস্মিত হয়েছি। বিমানের সউদীগামী টিকিট নাম ছাড়া বিক্রি করে থাকলে তা’বাতিল করে সরাসরি এজেন্সির কাছে সিস্টেমে বিক্রি করার জন্য এবং ওমরাযাত্রীদের চাপ কমানোর লক্ষ্যে ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা রুটে অতিরিক্ত ফ্লাইট চালুর জন্য শিগগিরই বিমানের কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত চিঠি দেয়া হবে বলেও আটাব মহাসচিব উল্লেখ করেন।
ইতিপূর্বে পাঁচটি এয়ারলাইন্স বাংলাদেশ থেকে তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়ায় সিন্ডিকেট চক্র ওমরাহ টিকিটের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে চড়া দামে টিকিট বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল। হাবের সাবেক শীর্ষ নেতা ও প্যান ব্রাইট ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী মো.রুহুল আমিন মিন্টু গতকাল শনিবার ইনকিলাবকে বলেন, বিমানের মতিঝিল অফিসের ম্যানেজার সেলস আশরাফুল দেড় মাসের টিকিট নামে বেনামে সিন্ডিকেট চক্রের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। এতে ওমরাহ এজেন্সির মালিকরা বিমান অফিসে ধরণা দিয়েও ওমরাযাত্রীদের কোনো টিকিট পাচ্ছে না। তিনি বলেন, বিমানের দেড় মাসের ফ্লাইটগুলো যথাযথভাবে চেক করা হলেই থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে। তিনি ওমরাযাত্রীদের টিকিট সঙ্কট দ্রুত নিরসনের লক্ষ্যে সউদী আরবের রুটে একাধিক অতিরিক্ত ফ্লাইট চালু এবং ওমরাহ এজেন্সিগুলোর কাছে সরাসরি টিকিট বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিতকরণে বিমান মন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এ ব্যাপারে রাতে বিমানের ম্যানেজার সেলস আশরাফুলের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের কাছে ওমরাহ এজেন্সিগুলো ওমরাযাত্রীদের টিকিট বুকিং চেয়ে মেইল পাঠানোর বিশ পচিশ দিনেও কোনো জবাব দেয়া হয় না বলে অভিযোগ উঠছে। সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে যেসব এজেন্সির মালিকদের দহরমহর সর্ম্পক রয়েছে তাদের মেইল তাৎক্ষণিভাবে জেদ্দাস্থ প্রধান অফিসে পাঠিয়ে তাদের টিকিট কনফার্ম করে সরবরাহের অভিযোগ উঠছে। এতে অনেক এজেন্সিই ওমরাযাত্রীদের টিকিট থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ইউরো এয়ার ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলস আগামী ২৪ আগস্ট ২৫ জন ওমরাযাত্রীর টিকিট বুকিং চেয়ে সাউদিয়া এরাবিয়ান এয়ারলাইন্সের ১৫ দিন আগে মেইল পাঠায়। কিন্ত গতকাল পর্যন্ত এসব ওমরাযাত্রীর টিকিটের ব্যাপারে কোনো উত্তর দেয়া হয়নি। ইউরো এয়ার ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী মাওলানা মাহমুদুর রহমান ইনকিলাবকে জানান, সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তা কর্মচারীরা তাদের পছন্দের এজেন্সির মেইলগুলো আগে জেদ্দা পাঠিয়ে টিকিট কনফার্ম করে দিচ্ছে। আমরা ওমরাহ টিকিটের জন্য মেইল দেয়ার পরেও কোনো সাড়া পাচ্ছি না। এসব অনিয়মের সুরাহা হওয়া প্রয়োজন। তিনি ওমরাযাত্রীদের টিকিট সঙ্কট দ্রুত নিরসন এবং টিকিটের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে নির্ধারণ ও অতিরিক্ত ফ্লাইট চালুর জোর দাবি জানান। চলতি ১৪৪৪ হিজরীর প্রথম ওমরাহ ফ্লাইট গত ৩১ জুলাই শুরু হয়েছে। করোনা মহামারির পর গত বছর প্রায় ৭৫ হাজার ওমরাযাত্রী ওমরাহ পালনের জন্য সউদী আরব গিয়েছিলেন।
সাউদিয়া এয়ারলাইন্স বর্তমানে জনপ্রতি ওমরাহ টিকিট ৭৫ হাজার টাকা, ৮০ হাজার টাকা এবং ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করছে। থার্ড ক্যারিয়ারগুলোও প্রায় ৮৮ হাজার টাকায় ওমরাহ টিকিট বিক্রি করছে। বিমান ওমরাহ টিকিট ৭২ হাজার টাকা ও ৭৮ হাজার টাকায় বিক্রি করছে। আগামী ১ অক্টোবর থেকে বিমান ওমরাহ টিকিটের দাম বৃদ্ধি করে ৮৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে। এসব টিকিট কোনো সিন্ডিকেট চক্রের কাছ থেকে কিনতে হলে আরো অতিরিক্ত কয়েক হাজার টাকা গুনতে হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ওমরাহ এজেন্সির মালিক এসব তথ্য জানিয়েছে। হাবের ইসির অন্যতম সদস্য ও রাজশাহী ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরসের স্বত্বাধিকারী মুফতী মুস্তাফিজুর রহমান গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, সউদী আরবে যাত্রী পরিবহনের ক্যাপাসিটি কম কিন্ত ওমরাযাত্রী বেশি হওয়ায় টিকিটের দাম বাড়ছে। তিনি ওমরাযাত্রীদের টিকিট সঙ্কট নিরসনের লক্ষ্যে ঢাকা জেদ্দা ঢাকা রুটে অতিরিক্ত ফ্লাইট চালুর জোর দাবি জানান। এদিকে, ওমরাযাত্রীর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিমান আগামী ২৩ আগস্ট ঢাকা জেদ্দা ঢাকা রুটে একটি অতিরিক্ত ফ্লাইট চালু করছে। আগামী ৩০ আগস্ট বিমান আরো একটি অতিরিক্ত ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ নিয়ে তা’এখনো কনফার্ম করেনি। এনিয়ে ওমরাহ এজেন্সিগুলোর মাঝে চরম অসন্তোষ দেখা দিচ্ছে। বাংলাদেশ হজযাত্রী ও হাজী কল্যাণ পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু দাউদ ফয়সাল ওমরাহ টিকিটের দাম বৃদ্ধি এবং টিকিট সঙ্কটের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে অতিরিক্ত ফ্লাইট চালুর ওপরগুরুত্বারোপ করেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন