প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারত শাসনের আট বছরে তার ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার ধর্মনিরপেক্ষতা, বহুত্ববাদ, ধর্মীয় সহনশীলতা এবং সমান নাগরিকত্বের আদর্শের উপর অসহিষ্ণু ও সহিংস হিন্দু আধিপত্যবাদী সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে চাপিয়ে দিয়ে ভারতীয় গণতন্ত্রকে ধীরে ধীরে হত্যা করেছে, যা ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট দেশটির স্বাধীনতা লাভের পর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। নাৎসি জার্মানির সাথে পাল্লা দিয়ে নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদি সরকার ভারতে বৃহৎ মুসলিম সংখ্যালঘুদের প্রতি অমানবিক নির্যাতন, সামাজিক বিভাজন এবং সহিংসতাকে উস্কে দিয়েছে। তারা সমালোচকদের মুখ বন্ধ করার জন্য সরকারী বাহিনী, বিভ্রান্তি এবং ভয়-ভীতি ব্যবহার করেছে এবং পরিকল্পিতভাবে দেশটির নাগরিক স্বাধীনতার লঙ্ঘন করেছে।
বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র ভারত এখন উদারনীতি ও স্বৈরাচারের মধ্যে বিশ্বব্যাপী লড়াইয়ে পরাজয়ের সম্মুখীন। তবুও যুক্তরাষ্ট্রের মতো পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলি মোদির কার্যকলাপকে না দেখার ভাণ করে, পরিবর্তে ভারতের বিশাল বাজারে তাদের প্রবেশাধিকার বজায় রাখার জন্য এবং চীনের বিরুদ্ধে কৌশলগত বাধা হিসাবে দেশটির উপযোগিতা বজায় রাখার জন্য তারা মোদির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে। গত বছর একদিকে, সুইডেনের ভি-দেম ইনস্টিটিউট ভারতের বর্তমান শাসন ব্যবস্থাকে ‘নির্বাচনী স্বৈরাচার’ বলে অভিহিত করেছে এবং অন্যদিকে, ওয়াশিংটন-ভিত্তিক একটি ফ্রিডম হাউস ভারতের গণতন্ত্রকে ‘আংশিকভাবে মুক্ত’ বলে উল্লেখ করেছে।
মোদির ভারতের রাজনীতিতে অর্থ এবং অপরাধম‚লক যোগস‚ত্র প্রধান হয়ে উঠেছে। সেখানে অঞ্চলগুলির জন্য বিধায়ক কেনা-বেচা হয়। অনেকেই আইন প্রণয়নের জন্য প্রস্তত নয়, এর পরিবর্তে তারা শীর্ষ নীতিগুলিকে অপব্যবহার করে প্রায়শই বিশেষ স্বার্থের প্রতি নজর রাখে, যা জনস্বার্থ বিরোধী, যেমন কৃষি আইন, যা গত বছর বাতিল না হওয়া পর্যন্ত কৃষকদের বিক্ষোভকে আলোড়িত করেছিল। ভারতের সংসদের গঠন ইতিমধ্যেই এই সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদকে প্রতিফলিত করছে। ভারতের প্রায় ১৫ শতাংশ মুসলিম জনসংখ্যা ইন্দোনেশিয়া এবং পাকিস্তানের পরে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম (হিন্দুরা প্রায় ৮০ শতাংশ)। কিন্তু মুসলিমরা সংসদের মাত্র ৫ শতাংশ আসন নিতে পেরেছে। বি.জে.পি ভারতের ৭৫ বছরের ইতিহাসে প্রথম শাসক দল যাদের একজনও মুসলিম সংসদ সদস্য নেই।
ভারতে এখন আইন ও অধিকার অসমভাবে প্রয়োগ করা হয়। মুসলিমদের জনসমক্ষে প্রার্থনা করার জন্য গ্রেপ্তার করা হয়, অন্যদিকে হিন্দু তীর্থযাত্রীদের রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তারা অভিনন্দন জানান। মোদি সরকার যেখানে হিন্দু ধর্মের সমস্ত আচার উৎসব উদযাপন উৎসাহিত করে, সেখানে হিজাব পরিধান এবং আযানের মতো মুসলিম রীতিনীতির প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ করা হয়। উগ্র হিন্দু দলগুলি মুসলিমদের এবং তাদের ব্যবসার উপর আক্রমণ করে। এমনকি এক উচ্চপদস্থ বি.জে.পি নেত্রী বাংলাদেশ থেকে আগত মুসলিম উদ্বাস্তুদেরকে দেশের সম্পদ কেড়ে নেয়ার অভিযোগে উঁইপোকা বলে সম্বোধন করেছেন। রাষ্ট্রীয় সমর্থনে উৎসাহিত হয়ে হিন্দু উগ্রপন্থীরা এখন প্রকাশ্যে মুসলিমদের গণহত্যা ও ধর্ষণের হুমকি দিচ্ছে। সরকারের ঘৃণাম‚লক কর্মকাÐের সমালোচনা করলে সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসে মোদির সরকার ১১ জন অপরাধীকে মুক্তি দিয়েছে যারা ২০০২ সালের গুজরাট গণহত্যার সময় একজন মুসলিম মহিলাকে গণধর্ষণ এবং তার পরিবারের ১৪ সদস্যকে হত্যা করার জন্য যাবজ্জীবন কারাদÐে দÐিত হয়েছিল, যা মোদির নজরদারিতে ঘটেছিল। ভারতের উচ্চতর বিচার বিভাগ এখন বেশিরভাগই মোদি হিন্দুত্ববাদী সরকারের সাথে একযোগে কাজ করে এবং মোদির সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা দেশটির সেসব সংবাদপত্রগুলির উপর চড়াও হন, যেগুলি গণতন্ত্র রক্ষায় মুখ্য ভ‚মিকা পালন করার চেষ্টা করছে। ৭৫ বছর বয়সে কয়েক দশকের প্রাতিষ্ঠানিক অপব্যবহারের পর দুর্বল ভিত্তির ভারতের গণতন্ত্র এখন নরেন্দ্র মোদির মতো শক্তিশালী ব্যক্তিকে প্রতিরোধ করতে খুবই দুর্বল। মোদি সংসদ ভবনকে ‘গণতন্ত্রের মন্দির’ বলেছেন। কিন্তু তার নয়াদিল্লির নতুন শাসন প্রাঙ্গণটি একটি কপট গণতন্ত্রের প্রতীক, যা তিনি নির্মাণ করছেন। এটি একটি ফাঁপা মুখোশ, যা তার ঘৃণাবাদী শাসনকে বৈধভাবে উপস্থাপন করার জন্য দাড়িয়ে আছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন