শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দেশের বড় চ্যালেঞ্জ হবে জ্বালানি

বিকল্প মুদ্রার চিন্তা করছি ওকাবের সঙ্গে মতবিনিময়ে সালমান এফ রহমান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

বর্তমান বৈশ্বিক অস্থিরতার জেরে অর্থনীতিতে নানা সমস্যা থাকলেও এ মুহূর্তে জ্বালানি সঙ্কটকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, আমি মনে করি, জ্বালানি সঙ্কট মোকাবিলা করাই হবে আগামী ছয় মাসে অর্থনীতির বড় চ্যালেঞ্জ। বিশ্বব্যাপী তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে বাংলাদেশ বেকাদায় আছে, তবে আমরা আশা করছি, এর দাম অচিরেই কমে আসবে। যদি দাম না কমে তাহলে সঙ্কট আরও বাড়বে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সম্মেলনকক্ষে দেশে কর্মরত বিদেশি সংবাদ মাধ্যমগুলোর সংগঠন ওভারসিজ করেসপনডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ওকাব) সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ মত দেন।

সভায় অর্থনীতির নানা বিষয় আলোচনায় উঠে এলেও বেশির ভাগ সময় জ্বালানি খাতের সমস্যা নিয়ে কথা হয়। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা বলেন, রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানির বিষয়ে আলোচনা চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ সেপ্টেম্বর ভারত সফরে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল শিগগিরই রাশিয়া সফরে যাচ্ছেন। এসব আলোচনায় একটা সমাধান বেরিয়ে আসবে বলে আমি আশা করছি।

ডলারের ওপর চাপ কমানোর উপায় খোঁজা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, আমাদের রিজার্ভে যে কারেন্সি আছে, সেটা আমি ব্যবহার করব এই রকম একটা কৌশল নেওয়া হচ্ছে। বিকল্প মুদ্রা হিসেবে আমাদের চিন্তা করতে হচ্ছে, কারণ আমাদের ৯৫ শতাংশ বাণিজ্যই মার্কিন ডলার ভিত্তিক। এছাড়াও আমাদের ইউরো, আরএনবি বা ইন্ডিয়ান রুপি স্টক থাকে। সেই স্টক ব্যবহার করার জন্যই আমরা বিকল্প মুদ্রার চিন্তা করছি।

বিশিষ্ট এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, আমি যখন বিদেশে যাই, তখন অনেকেই জিজ্ঞাসা করে, বাংলাদেশের উন্নয়নে শেখ হাসিনার ম্যাজিক কী? আমি বলেছি, এর পেছনে অবদান রেখেছে আমাদের বিদ্যুৎ খাত। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে যে মহাপরিকল্পনা নিয়েছে, তার বাস্তবায়নের ফলেই আজ আমরা সুফল পাচ্ছি। কোভিড-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে যে সাফল্য এসেছে, তার মূল কারণ বিদ্যুৎ। বর্তমানে দেশে উন্নয়নের যে ধারা বইছে, বিদ্যুৎ খাতের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে।

মতবিনিময় সভায় ব্যাংকের সুদের হার নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সালমান বলেন, সুদের হার ৯ শতাংশ বেঁধে দেয়ার কারণেই উচ্চ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ সময় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের অনেক দেশের সুদহার বাড়ানোর কথা স্বীকার করেন তিনি।

বাংলাদেশ তা করতে পারে না জানিয়ে তিনি বলেন, সুদহার বাড়ালে শিল্পের খরচ বেড়ে যাবে, তবে এটা ঠিক, সুদহারের সীমা অনেক বছর ধরে বেঁধে রাখা ঠিক না। কোভিডের অভিঘাত ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছি আমরা, কিন্তু যুদ্ধের কারণে সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেল। করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি যেভাবে এগোচ্ছিল, যুদ্ধ না হলে সুদের হারের সীমা তুলে দেয়া যেত।

তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, জানুয়ারিতে আমাদের এলসি খোলা হয়েছিল ৯ বিলিয়ন ডলারের। নানা ধরনের পদক্ষেপের কারণে আগস্টে কমে দাঁড়াতে পারে ৫ থেকে ৬ বিলিয়ন ডলারে। আমদানি কমার ফলে আগামী দিনে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। একই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল হবে বলেও মত দেন তিনি। তিনি জানান, বিদেশি ব্যাংক এইচএসবিসি ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার চিন্তা-ভাবনা নেই।

রাশিয়া ছাড়া অন্য কোনো দেশ থেকে বিকল্প পন্থায় তেল আমদানির চিন্তা করা হচ্ছে কি-না Ñএমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাতার থেকে আনার বিষয়ে আলোচনা চলছে। তারা যদি স্পট মার্কেটের বাইরে তেল বিক্রি করতে চায় তাতে আমরা রাজি আছি। ভারত থেকেও আনার চেষ্টা চলছে।

সালমান এফ রহমান বলেন, বিশ্ববাজারে ডিজেলের দাম বাড়লেও সেটি আমরা আনতে পারছি, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে গ্যাস। দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৮০ শতাংশ চালিত হয় গ্যাসে। আন্তর্জাতিক বাজারে স্পট মার্কেটে গ্যাসের দাম এত বেশি যে, আমদানি করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই এখন থেকে দেশের ভেতরে গ্যাস উত্তোলনের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিদেশি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে গ্যাস উত্তোলনের বিষয়ে চুক্তি করতে হলে বিদ্যমান প্রোডাকশন শেয়ারিং কনটাক্ট বা পিএসসি সংশোধন করতে হবে। কারণ এটি অনেক পুরোনো হয়ে গেছে। এরই মধ্যে সরকার পিএসসির খসড়া চূড়ান্ত করেছে। এটা হয়ে গেলে আমরা বিদেশি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে নতুন করে দরপত্র ডাকতে পারব।

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের অনুপাত জিডিপির তুলনায় এখনও অনেক সহনীয়। কারণ আমাদের নেয়া ঋণের ৯০ শতাংশই নমনীয় ও কম সুদের। বাংলাদেশ সাধারণত বাণিজ্যিকভাবে ঋণ নেয় না, যেটা বিশ্বের অনেক দেশই নিয়ে থাকে। কাজেই ঋণ নিয়ে অহেতুক আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। আমি মনে করি, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি এখনও অনেক দেশের তুলনায় ভালো। অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগের কোনো কারণ দেখছি না।

এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে সালমান বলেন, এটা ঠিক যে, আমাদের জিডিপির তুলনায় বিদেশি বিনিয়োগ এখন অনেক কম। এর মূল কারণ আমরা এখনও বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারিনি। দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য অনেক এফডিআই (সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ) দরকার।
ওষুধ শিল্প পার্ক বা এপিআই চালুর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গ্যাস সঙ্কটের কারণে এটি চালু করা যাচ্ছে না।

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জার্মানিসহ অনেক দেশ কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছে। কারণ তাদের কয়লা সরবরাহে কোনো সমস্যা নেই। বাংলাদেশের অনেক সমস্যা আছে। এখন থেকে শুরু করলেও পাঁচ বছর লাগবে। জলবায়ু আমাদের জন্য বড় একটি ইস্যু। কাজেই কয়লানীতি পরিবর্তন করার আগে অনেক ভাবতে হবে।

ওকাবের সভাপতি কাদির কল্লোলের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি ও ওকাবের সদস্যসচিব নজরুল ইসলাম মিঠু। এ ছাড়া ওকাবের সিনিয়র সদস্যরাও আলোচনায় অংশ নেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন