শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

‘গুম’ হওয়া বাবাকে ফিরে পেতে সন্তানদের কান্না : কাঁদালো অন্যদেরও

নয়াপল্টনে বিএনপির মানববন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

‘গুম’ হওয়া বাবাকে ফিরে পেতে সন্তানদের কান্না আর আকুতিতে কেঁদেছেন অন্যরাও। গতকাল মঙ্গলবার নয়াপল্টনের সামনে ছাত্রদলের গুম হওয়া বাবার জন্য তাদের ছোট কন্যা সন্তানরা যখন আকুতি জানাচ্ছিলো তখন তাদের কান্না দেখে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ উপস্থিত অনেকেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। অনেকেই শিশুদের কান্নায় চোখে পানি ধরে রাখতে পারেননি। কাউকে কাউকে দেখা যায় টিস্যু দিয়ে চোখ মুছতে। আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবসে দুপুরে মানববন্ধনে এসেছিলো বংশাল থানা ছাত্রদলের সভাপতি মো. সোহেলের ছোট্ট মেয়ে সাফা ও পল্টন থানা ছাত্রদলের সভাপতি পারভেজ রেজার মেয়ে হৃদি। তারা তাদের মনের কষ্টের কথা বলছিলো সাবলীলভাবে। কান্না করতে করতে সাফা বলে, আমার বাবাকে ওরা নিয়ে গেছে। আমি বাবাকে একবারও দেখিনি। আমার বাবাকে দেখতে ইচ্ছা করে আমি দেখতে পাই না। যখন আমি স্কুলে যাই তখন আমার বন্ধুরা তাদের বাবার সাথে আসে। আমাকে জিজ্ঞাসা করে তোমার বাবা আসে না কেনো? আমি কথা বলতে পারি না। আমার একটাই দাবি, আমার বাবাকে ফিরিয়ে দেন, আমি বাবাকে দেখতে চাই, আমার বাবাকে দেখতে ইচ্ছা হয়। চেয়ারের ওপর দাঁড়িয়ে তার ‘পাপা’কে না পাওয়ার বেদনার কথা তুলে ধরে ছোট্ট এই শিশুটি।

হৃদি বলে, আমার পাপাকে ফিরিয়ে দেন, প্লিজ আমার পাপাকে ফিরিয়ে দেন আপনারা। আমি ছোট্ট থেকে বড় হয়ে গেছি বলতে বলতে। কত বার বলছি (অঝোরধারায় কাঁদতে থাকে)। আমি পাপার সাথে ঘুরতে চাই। আমি পাপার সাথে ঘুরতে পারি না। আমার কষ্ট লাগে (আবারো কান্না)। আমার ভালো লাগে না। প্লিজ আমার পাপাকে ফিরিয়ে দেন। পাপা কবে আসবে কেউ কিচ্ছু বলে না।

সাফা ও হৃদি বক্তব্যের সময়ে বিএনপি মহাসচিবও তার চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। দেখা গেছে তার পকেট থেকে রুমাল বের করে বার বার নিজের চশমা খুলে চোখের পানি মুছতে। সাফা ও হৃদির কান্না বিজড়িত কথাগুলো নয়া পল্টনে উপস্থিত নেতা-কর্মী অনেককে নাড়া দেয়।

হৃদি ও সাবা ছাড়াও গুম হওয়া ছাত্র দলের সাইফুর রহমান সজীবের বাবা শফিকুর রহমান, সেলিম রেজা পিন্টুর বোন নদী, সাজেদুল ইসলাম সমুনের বোন সানজিদা ইসলাম তুলিও তাদের মনের কষ্টের কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, গুম করে নিয়েছে যাদেরকে, তাদের অপরাধ কী ছিলো? তাদের অপরাধ ছিলো একটাই। সেটা হচ্ছে- স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে তাদের অধিকার নিয়ে বাস করতে চেয়েছিলো। আজকে এই আওয়ামী লীগের সরকার, শেখ হাসিনার সরকার গত ১৫ বছর ধরে আমাদের সেই অধিকারগুলো কেড়ে নিয়েছে।

তিনি বলেন, আমি যখন এই অনুষ্ঠানের জন্য বেরুচ্ছি আমার বাসা পাশে দক্ষিণখানে মুন্নার মা তিনি আমাকে ফোন করেছিলেন। মুন্না ছাত্রদলের নেতা, একজন কর্মী ছিলেন। আপনি বসেন মা। তার বাবা একটি ঔষধের দোকান চালাতেন। সেই ঔষধের দোকান দেখাশুনা করতো। একদিন হঠাৎ করে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে তাকে সেখান থেকে এই সাদা পোষাক পরা এই র‌্যাবের লোকেরা তাকে তুলে নিয়ে চলে যায়। তারপর তার বাবা একবছর ছেলেকে খুঁজেছে সারা বাংলাদেশ জুড়ে, ভারতে গেছে, কলকাতা গেছেন, সব খানে খুঁজেছেন। কিন্তু তাকে কোথাও পায়নি। সব শেষে সে নিজে লিভার রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আজকে তার মা এখানে বসে আছেন। তাকে এখন দেখার কেউ নেই।

গুম-খুনের পরিবারগুলোর উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে গুম হওয়া পরিবার যারা এসেছে এখানে তাদের প্রতি আন্তরিক সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। একটা কথা পরিস্কার করে বলতে চাই, তোমরা একা নও, তোমাদের সঙ্গে সারা বাংলাদেশের মানুষ আছে, তোমাদের জন্য সারা বাংলাদেশের মানুষ লড়াই করবে। আজকে আমাদের এই সন্তানদের (গুম হওয়া পরিবার) এদের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য, তাদের বাবাকে, তাদের ভাইকে, তাদের ছেলেকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদেরকে আরো বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে হবে, আমাদেরকে দূর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে।

আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের যৌথ উদ্যোগে মানববন্ধনের এই কর্মসূচি হয়। এতে দলের গুম হওয়া শতাধিক পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন। ফকিরেরপুল থেকে কাকরাইলে নাইটেঙ্গল মোড় পর্যন্ত রাস্তায় একপাশে হাজার হাজার নেতা-কর্মী সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে গুমের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ জানায়।

গুম হওয়া, বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড, রাজনৈতিক নিপীড়ন বন্ধের দাবি জানিয়ে নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন প্ল্যার্কার্ড বহন করে। মানববন্ধন কর্মসূচির অনুষ্ঠানস্থলে গুম ও বিচারবর্হিভূত হত্যার দৃশ্য নেতা-কর্মীরা অভিনয় করে প্রদর্শন করে যা নেতা-কর্মী দৃষ্টি কাড়ে।

ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিনের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় মানববন্ধনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিনের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ বক্তব্য রাখেন।###

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন