শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বাস্তবায়ন চাই তিস্তা চুক্তি সইসহ মহাপরিকল্পনা

রংপুরে মানববন্ধনে দাবি

হালিম আনছারী, রংপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০১ এএম

রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় তিস্তা চুক্তি আটকে থাকলেও তিস্তার ভাঙন ও বন্যা থেমে নেই। নদী তীরবর্তী ৫ জেলার ৪২ ইউনিয়নে উপার্যুপরি ভাঙন ও বন্যায় প্রতিবছর অন্তত ৫০ হাজার মানুষ ভিটে-মাটি হারাচ্ছে। বিলীন হচ্ছে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি। খরাকালে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও খননের কাজ শুরু করতে হবে। তাই তিস্তা চুক্তি আর ঝুলে রাখা চলবেনা, তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ আটকে না রেখে দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। এমন দাবি তুলে গতকাল সোমবার দুপুরে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে দুই ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন সমাবেশ করেছে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ। এসময় তিস্তা চুক্তি সই ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জোর দাবি জানিয়েছেন বক্তারা।

মানববন্ধনে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারত গেছেন। সফরের আলোচ্য সূচিতে তিস্তা ইস্যুসহ অববাহিকাভিত্তিক তিস্তা নদীর ব্যবস্থাপনার’ বিষয়টি না থাকায় আমরা আশাহত হয়েছি। তার পরেও তিস্তা অববাহিকার দুই কোটি মানুষের আশা বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক আলোচনার গোল টেবিলে তিস্তা নিয়ে একটা গ্রহণযোগ্য সমাধানে আসবেন।

অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হাক্কানী সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আরো বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলে ভাঙন ও বন্যার হাত থেকে তিস্তা পাড়ের মানুষ রক্ষা পাবে। কৃষকের ফসলি জমি ফিরে পাবে তার প্রাণ। তাই খরাকালে পানি প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে আমরা তিস্তা চুক্তি চাই। চাই তিস্তা অববাহিকাভিত্তিক যৌথ নদী ব্যবস্থাপনা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, ভু-রাজনীতির নানামুখি ঘটনাপ্রবাহের জটে তিস্তা মহাপরিকল্পনা সর্বোচ্চ পর্যায়ের রাজনীতিক সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আটকে আছে। আটকে আছে তিস্তা চুক্তিসহ অববাহিকাভিত্তিক যৌথ নদী ব্যবস্থাপনার কার্যক্রমও। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত থাকলেও যৌথ নদী কমিশন ও কার্যকর সংস্থায় পরিণত হয়েছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের ফেডারেলিজমের দোহাই দিয়ে তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে যে ঐক্যমত হয়েছিল তার চুড়ান্ত কারণ আজও ঝুলিয়ে রেখেছে। এই ঝুলন্ত জট খুলে তিস্তা পাড়ের মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে হলেও বিজ্ঞানসম্মতভাবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আকুল আবেদন জানান তিনি।

এসময় তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে দুই দেশের মধ্যে সমতারভিত্তিতে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন, পারস্পরিক আস্থার সংকট নিরসনে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন নদী গবেষক ড. তুহিন ওয়াদুদ।

দাবিগুলো হলো : তিস্তা নদী সুরক্ষায় বিজ্ঞানসম্মতভাবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা’ দ্রুত বাস্তবায়ন। অভিন্ন নদী হিসেবে ভারতের সঙ্গে ন্যায্য হিস্যার ভিত্তিতে চুক্তি সম্পন্ন, তিস্তা নদীতে সারা বছর পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে পানির আধার নির্মাণ। তিস্তা নদীর শাখা-প্রশাখা ও উপশাখাগুলোর সঙ্গে নদীর পূর্বেকার সংযোগ স্থাপন ও নৌ চলাচল পুনরায় চালু। ভূমিদস্যুদের হাত অবৈধভাবে সকলকৃত তিস্তাসহ তিস্তার শাখা-প্রশাখা দখলমুক্ত করা। নদীর বুকে ও তীরে গড়ে ওঠা সমস্ত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ। তিস্তা ভাঙন, বন্যা ও খরায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের স্বার্থসংরক্ষণ। নদী ভাঙনের শিকার ভূমিহীন, গৃহহীন ও মৎস্যজীবীসহ নদী ভাঙনে উদ্বাস্ত মানুষের পুনর্বাসন। তিস্তা মহাপরিকল্পনায় তিস্তা নদী ও তিস্তা তীরবর্তী কৃষকের স্বার্থ সুরক্ষায় কৃষক সমবায় এবং কৃষিভিত্তিক শিল্প-কারখানা গড়ে তোলা এবং মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ এবং প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় অগ্রাধিকারভিত্তিতে তিস্তা পাড়ের মানুষদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা।

মানববন্ধনে ছয় দফা দাবির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আসা ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ছাড়াও আরও বক্তব্য রখেন, তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান, পরিষদের লালমনিরহাট জেলা সভাপতি গেরিলা লিডার ড. শফিকুল ইসলাম কানুসহ পরিষদের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
jack ali ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৫:২৮ পিএম says : 0
যতদিন আমাদের দেশ কোরআন দিয়ে শাসন করা হবে না ততদিন আমরা মুরতাদ মুনাফিক সরকারের দ্বারা জঘন্যতম ভাবে জুলুমের শিকার হতে থাকব
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন