প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এর আগে অনেক আশা নিয়ে ভারতে সফরে গিয়েছেন, তিস্তা চুক্তি সই হবে, এই হবে, সেই হবে, ওমুক হবে, তমুক হবে কিন্তু সেটা এখন পর্যন্ত হয়নি। এ বিষয়গুলো নির্ভর করে জনগণের সমর্থনের ওপর। জনগণ যদি সরকারকে সমর্থন দিতো তাহলে অনেক আগেই হতো। আর প্রধানমন্ত্রী ফিরে আসুক, আমাদের জন্য কী কী নিয়ে আসেন তখনই দেখা যাবে। গতকাল মঙ্গলবার শেরে বাংলা নগরে স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটির নেতৃবৃন্দকে নিয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, জনসমর্থনহীন সরকার বলেই ভারতের সাথে অভিন্ন সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারছে না। তিনি বলেন, ভারতের সাথে আমাদের অভিন্ন নদীর পানি বন্টন সমস্যা, সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিকদের হত্যা করা এবং অন্যান্য যে সমস্যাগুলো আছে এই সমস্যাগুলোর সমাধান বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত করতে পারেনি। পারেনি কারণ ওদের পেছনে জনগণের সমর্থন নেই।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ভারত ১০০ বিলিয়ন ডলার সাহায্য দিয়েছিলো সেটারও ৩০ শতাংশ মাত্র কাজ হয়েছে। আর কোনো কাজ হয়নি। জনগণ যদি এই সরকারকে সমর্থন দিতো তাহলে প্রত্যেকটি কাজই ইতোমধ্যে হয়ে যেতো। আমি আবারো বলছি, উনি ফিরে আসুন, কি কি আনছেন বাংলাদেশের মানুষের জন্য- সেটাই হবে এই সফরের সাফল্য।
ভারতের পালাম বিমান বন্দরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে একজন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন- বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। কারণ এখানে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর আগের যে বক্তব্যগুলো এবং এই সরকারের বেশির ভাগ মন্ত্রীদের যে বক্তব্যগুলো সেই বক্তব্য তো খুব স্পষ্ট যে, ওরা যেভাবেই রিসিভ করুক, তারা যাবে এবং সেটা নিয়ে তাদের খুব একটা বড় রকমের সমস্যা থাকবে না। এই সরকার একেবারের একটা নতজানু সরকার। তাদের বন্ধুদের সমর্থন ছাড়া টিকে থাকা কঠিন আছে। তারা চাইবে যে, সামনে নির্বাচনের আগে সেইটাকে যদি কোনো রকম আরো শক্তিশালী করতে পারে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বিশ্বাস করি গোটা গণতান্ত্রিক বিশ্ব বাংলাদেশের জনগণের যেটা মূল চাহিদা একটা গণতান্ত্রিক সরকার, একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন- সেই ব্যাপারে বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশের সরকারগুলো তাদের ভূমিকা পালন করবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের কাছে গণতন্ত্র ছিলো এই আওয়ামী লীগ সরকার সেই গণতন্ত্র কেড়ে নিয়েছে এবং প্রতিদিন প্রতি মুহুর্তে এখানে গণতন্ত্রকে হত্যা, মানুষের অধিকারকে হত্যা করছে, তারা বিরোধী পক্ষকে হত্যা করছে। সেই সরকারের সমর্থনে কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আসবে এটা আমরা বিশ্বাস করি না। আমরা বিশ্বাস করি যে, সমস্ত গণতান্ত্রিক বিশ্ব জনগনের যে সংগ্রাম, মহান ঐতিহ্যবাহী যে সংগ্রাম গণতন্ত্রের পক্ষের যে সংগ্রাম তাকেই সমর্থন করবে।
মিয়ানমার প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের দীর্ঘ ১৫ বছরের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি যে, এই সরকার যেহেতু জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার নয়, যেহেতু জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে তারা সরকারে আসেনি। সুতরাং তাদের পক্ষে বর্হিবিশ্বে কোনো চুক্তি করা, বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের স্বার্থকে রক্ষা করা অত্যন্ত দুরহ কাজ। এটা আমরা লক্ষ্য করেছি মিয়ানমারের ক্ষেত্রে। এখন পর্যন্ত মিয়ানমারে এই সরকার কোনো ব্রেক থ্রো করতে পারেনি। আরো ভয়াবহ কান্ড হচ্ছে যে, মিয়ানমার বার বার বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে বিনষ্ট করে তারা মর্টার মারছে, গোলা মারছে। কিন্তু সরকারের নতজানু পররাষ্ট্র নীতির কারণে একটি প্রতিক্রিয়া ছাড়া কোনো কিছু করার সাধ্য তাদের নেই।
মির্জা ফখরুল স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন সভাপতি এসএম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসানের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীদের নিয়ে শেরে বাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কবরে পুস্পমাল্য অর্পন করেন এবং মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন। এ সময়ে বিএনপি আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, আসাদুজ্জামান রিপন, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, কামরুজ্জামান রতন, আজিজুল বারী হেলাল, মীর সরফত আলী সপু, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, আকরামুল হাসান, মহানগর বিএনপির আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, যুবদলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটির সংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান প্রমূখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।##
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন