ক্ষমতার পরিবর্তন হলে সংবিধানে কিছুটা পরিবর্তন আনা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমরা বলেছি খুব পরিস্কারভাবে যে, আমরা সাংবিধানিক কমিশন তৈরি করব। যদি আমরা জনগণের ম্যান্ডেটে বিজয় অর্জন করতে পারি সাংবিধানিক কমিশন তৈরি করে আমরা সেই অগণতান্ত্রিক, জনগণ বিরোধী যে সমস্ত বিষয় সংযোজন করা হয়েছে সেগুলোকে আমরা বাতিল করে জনগণের জন্য যেটা প্রয়োজন, ৭২ সালে যেটা করা হয়েছিলো তার আশেপাশে নিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা যুগোপযোগী একটা সংবিধান আমরা নিয়ে আসার চেষ্টা করব। গতকাল মঙ্গলবার একটি দৈনিকের প্রতিষ্ঠবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯৭১ সালে যে আশা, স্বপ্ন, আকাক্সক্ষা আমরা দেখিছিলাম, সেটাকে বাস্তবায়িত করার জন্য প্রয়োজন যারা আমাদের স্বপ্নগুলোকে ভেঙে দিচ্ছে, সমস্ত অধিকারগুলোকে কেড়ে নিচ্ছে। যে সংবিধানে আমার অধিকার হরণ করা হয়েছে, যে সংবিধানের মধ্যে কেটে ছেঁটে তিনটি অনুচ্ছেদ বলা হয়েছে যে, এটা কোনোদিন পরিবর্তন করা যাবে না। যে সংবিধানে আমরা সবাই মিলে ঠিক করেছিলাম যে, আমরা একটা স্বাভাবিক শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য আমরা একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচনে যাবো সেই সংবিধান অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে। সেই সংবিধান অবশ্যই আমাদের মানুষের জন্য। আমরা যেটা চেয়েছিলাম সেটাকে করার জন্য এই সংবিধানে অবশ্যই আমাদের কিছুটা পরিবর্তন আনতেই হবে।
তিনি সাংবাদিকদের প্রতি আহবান রেখে বলেন, বাংলাদেশকে যেন আমরা সত্যিকার অর্থেই একটা অত্যন্ত প্রগতিশীল জনপদ হিসেবে তৈরি করতে পারি, বাংলাদেশে মুক্ত চিন্তার যে অবস্থা সেই অবস্থা সৃষ্টি করতে পারি, সত্যিকার অর্থেই একটা সাম্য, ন্যায় বিচার এবং মানবিক মূল্যবোধের কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে পরিণত করতে পারি সেজন্য আপনারা অতীতে যে ভূমিকা রেখেছেন তা অব্যাহত রাখবেন। আপনারা জনগণের পাশে দাঁড়াবেন এই বিশ্বাস আমার আছে।
বৃষ্টিপাতে রাজধানীসহ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে সৃষ্ট পানিবদ্ধতা সরকারের মেগা উন্নয়নের ফল বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, উত্তরার রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। ডিএমপি কমিশনার একটা সার্কুলার দিয়েছেন যে, এই সড়কটা ব্যবহার না করার জন্য। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর ফলে যে বৃষ্টিপাত হয়েছে এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর পর্যন্ত এই রাস্তাটি আর চলাচলের উপযোগী নয়।এই কথাটা আমি বেশ কিছুদিন ধরে বলে আসছি এই রাস্তাটার কথা। এই যে মেগা প্রজেক্ট, মেগা উন্নয়ন তার একটা ফলোশ্রুতি, সেজন্য আজকে এই অবস্থা। কথাটা এজন্য বললাম যে, আজকে এই বর্তমান অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে এই তাদের মেগা উন্নয়নের কারণেই।’
দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা একটা নষ্ট সময়, একটা ভয়ংকর সময় অতিক্রম করছি। আমার কাছে আজকে বিস্ময় মনে হয়। ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে আমরা সরাসরি জড়িত ছিলাম। তখন কি আমরা যুদ্ধ করেছিলাম আমরা মানুষের অধিকারগুলোকে কেড়ে নেবো, তার ভোটের অধিকার কেড়ে নেবো, তার কথা বলার অধিকার কেড়ে নেবো। এই যে সাংবাদিক ভাইয়েরা সবাই বসে আছেন তাদের লেখার অধিকার কেড়ে নেবো। দুর্ভাগ্য আমাদের, ১৯৭৫ সালের সেই অবস্থা আমাদেরকে আপনার পার হতে হয়েছে, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ওই একাত্তরের চেতনাকে তারা বাস্তবায়িত করেছে, একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে তারা স্বাধীনতার চেতনা বাস্তবায়িত করেছে। আজকে আবার একইভাবে তারা এই স্বাধীনতার কথা বলে, মুক্তিযুদ্ধে কথা বলে তারা মানুষের অধিকারগুলোকে পুরোপুরিভাবে কেড়ে নিচ্ছে।
তিনি বলেন, এই সময়টা আমাদের অত্যন্ত ধৈর্য্যরে সঙ্গে, অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে অতিক্রম করতে হবে এবং আমাদের জয়লাভ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ইকতেদার আহমেদ, ব্যারিস্টার মইনুল ইসলাম, নয়া দিগন্তের আলমগীর মহিউদ্দিন, বিএনপির খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, জহির উদ্দিন স্বপন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আতিকুর রহমান রুমন, শায়রুল কবির খান, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, বর্তমান সভাপতি এম আবদুল্লাহ, মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, ডিই্উজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম প্রমূখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন