ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে একটা গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করতে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমরা একযোগে যুগপৎ আন্দোলন করব-এ ব্যাপারে একমত হয়েছি। ইতিমধ্যে এই কাজ আমরা শুরু করেছি। গতকাল মঙ্গলবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বৈঠকের বিষয়বস্তু তুলে ধরে বলেন, সরকার হটানোর আন্দোলন-নির্বাচন-রাষ্ট্র রুপান্তরে একসঙ্গে কাজ করতে আমরা ঐক্যেমত্যে পৌঁছেছি। আমরা রাষ্ট্রের পরিবর্তনের যে কথা বলেছি সেই পরিবর্তনগুলো আমরা আরো বিস্তারিত আলোচনা করে আশা করি একমত হতে পারব। আমরা এই বিষয়টাকে দ্রুত করার জন্যে পরবর্তিতে আরো কয়েকটি আলোচনা বসব এবং শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাবো বলে আমরা নিশ্চিত।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে প্রচণ্ড রকমের একটা আগ্রহ-উদ্যোম সৃষ্টি হয়েছে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতনের লক্ষ্যে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, এই বিষয়কে তরান্বিত করার জন্যে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে আমরা দ্রুত করা যায় সেজন্য একটা লিয়াজোঁ কমিটি আমরা গঠন করব। যার মাধ্যমে আমাদের লক্ষ্য, আমাদের দফাগুলো, আমাদের কর্মসূচি, রুপরেখা সব গুলো থাকবে। এই ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি যে, সরকার পতনের লক্ষ্যে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করার মধ্য দিয়ে আপাতত যুগপৎ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা আন্দোলনকে আরো বেগবান করতে পারবো এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহনের মধ্য দিয়ে আমরা এদেরকে (ক্ষমতাসীনদের) পরাজিত করতে সক্ষম হবো।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, বাংলাদেশের জন্য আজকের (গতকাল) এ দিনটি একটি ঐতিহাসিক দিন। সারা পৃথিবীর কাছে আজকে ম্যাসেজ যাবে যে, বাংলাদেশের জনগণ রাতের অন্ধকারে যারা ভোট চুরি করেছে অনৈতিকভাবে, অবৈধভাবে ক্ষমতায় আছে তাদেরকে সরানোর জন্য বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের সৃষ্টির মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই স্বৈরাচারের শুধু পতন ঘটাবে না। রাষ্ট্র মেরামত করবে, সংস্কার করবে, সংবিধান সংস্কার করবে এবং আন্দোলন ও নির্বাচন দুইটাই একসাথে করবে।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে যুগপতভাবে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবার জন্য এখন থেকেই কাজ করব। আমরা আন্দোলনে আছি সেই আন্দোলনে থাকবো।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে আমরা কেউ যাবো না। আমরা যেটা দাবি করেছি সেটা হচ্ছে এই সরকারের পদত্যাগ, অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা গুণগত পরিবর্তন সংবিধান সংস্কারের মাধ্যমে।
বৈঠকে গণতন্ত্র মঞ্চের প্রতিনিধি দলের জেএসডির আসম আবদুর রব, শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, শহীদুল্লাহ কায়সার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, আকবর খান, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, আবুল হাসান রুবেল, গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ফারুক হাসান, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, হাবিবুর রহমান রিজু এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের ইমরান ইমন ও সৈয়দ হাসিব উদ্দিন হোসেন প্রমূখ। বিএনপি মহাসচিবের সাথে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া বিদেশে ও সদস্য সচিব নুরুল হক নূরের একটি দূতাবাসে সাক্ষাতকার থাকায় তারা বৈঠকে অংশ নিতে পারেননি বলে জানান গণতন্ত্রের মঞ্চের নেতারা। এ বছরের ৮ আগস্ট জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন-এই সাতটি দল নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা আওয়ামী লীগের পদত্যাগের দাবি করে আসছে।###
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন