কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, সান্ত্রী আর রাষ্ট্রশক্তির সম্মিলিত আক্রমণের মুখে তার আন্দোলন ও প্রত্যাঘাত আরও ক্ষুরধার হয়। বারবার সেই প্রমাণ পেয়েছে দেশ। তারই সর্বশেষ উদাহরণ ছিল একুশের বিধানসভা নির্বাচন। আরও একবার আদ্যোপান্ত ‘অগ্নিকন্যা’ ইমেজকে অস্ত্র করেই গেরুয়া শিবিরের মোকাবিলায় নেমেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এবার তার বিরুদ্ধে কেন্দ্রের শাসক এবং ইডি, সিবিআই ও ইনকাম ট্যাক্সের ত্র্যহস্পর্শ। তবে ভরসা রাখছেন তিনি, তামাম বিরোধী শক্তির উপর। সেই ঘোষণার মাধ্যমেই বৃহস্পতিবার বিজেপির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের মঞ্চ থেকে রণভেরী বাজিয়ে ঘোষণা করলেন—আরও মারাত্মক খেলা হবে চব্বিশে। সিংহ গর্জনে বৃহস্পতিবার প্রত্যুত্তর দিয়েছে স্টেডিয়াম—‘এবার আরও বড় খেলা হবে।’
বিরোধী রাজ্যগুলিকে করায়ত্ত করতে গেরুয়া শিবির শুরু করেছে অপারেশন লোটাস। অর্থ, প্রলোভন তাতে কাজ না হলে এজেন্সি লেলিয়ে দেওয়া—পদ্মশিবিরের সেই আগ্রাসনে মহারাষ্ট্রে রাজপাট খুইয়েছেন উদ্ধব থাকরে। এই পরিসরে মোদি-শাহের নজর ঝাড়খণ্ড, দিল্লি, বিহার এবং অবশ্যই বাংলার দিকে। মমতার ‘বরাভয়’ বাঁচিয়ে দিয়েছে হেমন্ত সোরেনের জোট সরকারকে। বিহারেও তেজস্বী যাদবের হাত ধরে মুখ্যমন্ত্রীর পদে থেকে গিয়েছেন একদা বিজেপি সঙ্গী নীতীশ কুমার। দিল্লিতে গেরুয়া পার্টিকে সমুচিত জবাব দিয়েছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। আর তাই বাংলায় শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে পদ্মপার্টিকে ‘অক্সিজেন’ দেওয়ার মরিয়া চেষ্টা।
সেই প্রেক্ষিতকে সামনে রেখেই দলের বিশেষ অধিবেশনে মমতা এদিন বলেন, ‘ঝাড়খণ্ডে সরকার বাঁচিয়েছি আমরা, বাংলা পেরেছে। এখন এজেন্সি দিয়ে ভয় দেখাচ্ছে! লাভ হবে না, আগামীতে আবার খেলা হবে। পঞ্চায়েত ভোট শান্তিপূর্ণভাবে করব, তারপরই শুরু হবে চব্বিশের খেলা।’তৃণমূল সুপ্রিমোর প্রত্যয়ী বার্তা—‘এমন খেলা খেলব, বিজেপিবাবুরা বুঝবে, ঠ্যালার নাম বাবাজি।’ মহারণ ২৪’এর ময়দানে সঙ্গী-সাথী আর রসদ যে প্রস্তুত, এদিন সেই বার্তাও দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, ‘বাংলার ময়দান থেকেই শুরু হবে খেলা। আর এখন তো আমরা সবাই (বিরোধীরা) এক হয়ে যাব। নীতীশজি, অখিলেশ, হেমন্ত আর আমি তো আছিই। আছে আমার বন্ধুরাও। সব বন্ধু একসঙ্গে বিজেপিকে হারাব। একটাই পণ—বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই, শুধুই লড়াই।’
লোকসভায় ৩০০-র বেশি আসন দখলের অহংয়ে বিরোধীদের ‘কণ্ঠরোধের’ চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। রাজনীতির পরিসরে বারবার এই অভিযোগ করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এদিন সেই প্রেক্ষিতকে সামনে রেখে মমতা বলেছেন, ‘রাজীব গান্ধীরও ৪০০ আসন ছিল। ধরে রাখতে পারেননি। আর বিজেপি তিনশো আসনের গর্ব করছে! আমরা (বিরোধীরা) সবাই মিলে ১০০ আসন ঘ্যাচাং ফুঁ করে দেব। তখন কোথা থেকে সরকার গড়বে! তাই আজ স্পষ্ট ভাষায় বলছি, আর নেই দরকার বিজেপি সরকার, আর নেই দরকার সিপিএমের দালালের সরকার। আমরা বদলা নিইনি, কিন্তু বদলা হবে জনতার আদালতে।’ এরপরই মমতার গলায় চ্যালেঞ্জর সুর—‘বলে যাচ্ছি, যত ইচ্ছে, যাকে ইচ্ছে অ্যারেস্ট করো। রাজনৈতিকভাবে লড়ে নেব, আদালতে লড়ে নেব।’ শুনিয়েছেন সেই অমোঘ বার্তাও—‘জানবেন, আহত সিংহ অনেক বেশি ভয়ঙ্কর।’ সূত্র: এনডিটিভি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন