মাগুরার রাজনৈতিক মাঠ হঠাৎ করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে । সাথে সাথে গ্রামগুলো সামাজিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে হয়ে উঠছে সহিংসতা। প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে সহিংস ঘটনা। রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠের প্রধান বিরোধী দল মাঠে নামলেই সন্ত্রাস নৈরাজ্যের প্রতিবাদ তুলে সরকারি দলের নেতা কর্মীরা নামছে মাঠে। চলছে অস্ত্রের মহড়া। যে কোন সময় শুরু হবে হামলা পাল্টা হামলা হতে হবে আক্রান্ত এ শঙ্কায় রয়েছে অনেকেই।
আর এ হামলা মোকাবেলা করতে চলছে অস্ত্রের মহড়া এক শ্রেণীর যুবক ধারালো অস্ত্র সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভীড় দেখা যাচ্ছে কামার বাড়িতে। কেউ কেউ আবার ধারালো অস্ত্রের দোকান থেকে কিনছে চাপাতি, কিরিস, রামদাসহ বিভিন্ন প্রকার ধারাল অস্ত্র। পুরাতন অস্ত্র আবার ঘষামাজা করছে অনেকে।
গত ২৭ আগস্ট মাগুরা জেলা বিএনপি তাদের ভায়না মোড়ের অস্থায়ী জেলা কার্যালয়ের কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালন উপলক্ষে মিছিল সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে উপস্থিত বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী জানান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলী আহম্মদের সভাপতিত্বে সভার শেষ পর্যায়ে বিএনপি নেতা মনোয়ার হোসেন খান বক্তব্য রাখার সময় জেলা যুবলীগ ও ছাত্র লীগের একটি দল অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে কয়েকটি হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সমাবেশে হামলা চালায়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে শুরু হয় ইট নিক্ষেপ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এতে আহত হয় উভয় দলের ১০ জন। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীর ৭ টি মোটর সাইকেল আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয় এবং বিএনপি কার্যালয়সহ কয়েকটি দোকনে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এ সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে মাগুরা আদর্শ কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ, বিএনপির ৩৬ নেতাকর্মীসহ ৪০০ জনকে আসামি করে মামলা দয়ের করে।
ঐদিন গ্রেফতার হওয়া ৬ নেতাকর্মীকে আদালত পাঠায় কারাগারে। এর আগে সকাল থেকেই মাগুরা শহররে বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা কর্মীরা অবস্থান নেয়। এ অবস্থানের কারণ হিসেরে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ফজলুর রহমান জানান, বিএনপি জামাতের নৈরাজ্য প্রতিহত করতে তারা অবস্থান নিয়েছে। সকাল থেকে বেশ কিছু যুবককে মোটর সাইকেলে অস্ত্র সজ্জিত হয়ে শহরে শোডাউন করতে দেখা যায়। এ ঘটনার পর থেকে মাগুরা শহরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আর রাজনীতি হয়ে ওঠে উত্তপ্ত।
মাঝে মধ্যেই আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের পক্ষ থেকে সন্ত্রাস নৈরাজ্য বিরোধী মিছিল সমাবেশ করা হচ্ছে।
অপরদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে খুব সতর্কতার সাথে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করা হছে। মাগুরা শহর নয় জেলার এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলছে দেশীয় ধারালো অস্ত্র সংগ্রহের ব্যস্ততা। বাড়ছে বখাটে ও ডানপিঠে যুবকদের কদর। তাদের সরব উপস্থিতি অনেকেরই চোখে পড়ছে। উভয় দলই বর্তমানে এসব ছেলেদের দলে আবার ভিড়ানোর চেষ্টা করছে।
একজন প্রতক্ষ্যদর্শী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কামার বাড়ি ও এসব অস্ত্র বিক্রির দোকান থেকে এক শ্রেণীর যুবক সংগ্রহ করছে এসব ধারালো অস্ত্র। আবার এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাড়ছে সন্ত্রসীদের কদর।
মাগুরা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কলিমুল্লাহ জানান, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় সে ব্যাপারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
এ ব্যাপারে মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ কুমার কুন্ডু বলেন, বিএনপি জামাত শান্তিপূর্ন কর্মসূচি পালন করলে কোন কথা নেই তবে কর্মসূচির নামে সন্ত্রাস নৈরাজ্য করলে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা তা প্রতিহত করতে প্রস্তুত রয়েছে।
রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত হওয়ার পাশাপাশি মাগুরা জেলার মহম্মদপুর ,শ্রীপুর ও মাগুরা সদর উপজেলার চিহিৃত বেশ কিছু গ্রামে সামাজিক আধিপত্য নিয়ে মাঝে মধ্যে ঘটছে হতাহতের ঘটনা। মহম্মদপুর উপজেলার নহাটা ইউনিয়নে মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত বর্তমান চেয়ারম্যান এর গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের ঘটনা নিয়ে ৩০ জন আহত হয়েছে।
এ ঘটনা নিয়ে উপজেলার কানুটিয়া বাজারে আতর লস্কার নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছে। এর আগে একই উপজেলার উড়ুরায় দুদিন ব্যাপী দুপক্ষের সংঘর্ষে বাড়িঘর লুট কয়েকজন আহত হবার ঘটনা ঘটে। ঘুল্লিয়া মাঠে কথা কাটাকাটি তারপর দুগ্রামের মধ্যে রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষ।
এ ভাবে একটার পর একটা সহিংস ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। এ সব ঘটনায় আহত হচ্ছে উভয় পক্ষেরই ব্যাপক সংখ্যক লোকজন।
এদিকে ৬ সেপ্টেম্বর রাতে একই উপজেলার সব্দালপুর ইউনিয়নের কাজলী হোগল ডাঙ্গা গ্রামে আওয়ামী লীগের দুগ্রুপে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য রাশেদুল ইসলাম গুম হয়। এ সময় তাকে উদ্ধার করতে গেলে অরো ৮ জন আহত হয়। এসব সংঘর্ষ নিয়ে ঘটে ব্যাপক লুটপাট ভাংচুর।
এদিকে গত শনিবার মাগুরা পৌর এলাকার রায় গ্রামে দুদল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে আহত হয় উভয় পক্ষের ১৫ জন। লুটপাট ভাংচুর হয় ঘরবাড়ি। মাগুরা এসব ঘটনায় পুলিশ হিমসিম খাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে মাগুরার আইন শৃঙ্খলা অবনতির প্রধান কারণ গ্রাম সংঘর্ষ। আর এ সংঘর্ষের কারণ গ্রাম্য মাতবরি। এসব ঘটনায় মাতবরদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার পাশাপাশি সংঘর্ষ প্রবন গ্রাম গুলিতে অভিযান বা ঘরে থাকা ধারালো অস্ত্র জমা দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করলে পরিবেশ স্বাভাবিক করা, জানমালের ক্ষতিসহ বাড়িঘর লুটপাট সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি রোধ করা সম্ভব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন