গত বছর দেশের মোট দেশজ উৎপাদন প্রবৃদ্ধি ছিলো ৭ দশমিক ২ শতাংশ। কিন্তু বৈশ্বিক অর্থনীতির টালামাটাল অবস্থার প্রেক্ষিতে চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। মূলত, স্থানীয় ভোগ-চাহিদা কমে যাওয়া, রফতানি ও প্রবাসী আয় হ্রাস এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির শ্লথগতি-এসব কারণে জিডিপি প্রবৃদ্ধির এমন পূর্বাভাস দিয়েছে।
আজ বুধবার প্রকাশিত এডিবির ডেভেলপমেন্ট আউটলুক সেপ্টেম্বর সংস্করণে এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে। এ উপলক্ষে এডিবির ঢাকা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, বিশ^ব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও জ¦ালানি সংকটের কারণে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কমে যেতে পারে। এছাড়া কৃষি খাতে অনাবৃষ্টি ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যার কারণে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ক্ষতির মুখে পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে দেশের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি ও টাকার মান সামাল দেয়ার জন্য মুদ্রানীতিতে কড়াকড়ি পদক্ষেপ নিয়েছে। বৈশ্বিক অস্থিরতা এবং স্থানীয় পর্যায়ে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে যাওয়ায় চলতি বছরে গত বছরের চেয়ে প্রবৃদ্ধি কম হবে বলে জানিয়েছে এডিবি।
২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ হয়েছে। এডিবি বলছে, এবার জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে।
এ ছাড়া চলতি অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৭ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এডিবি। এডিবি বলছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে, যা মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিচ্ছে। উল্লেখ্য, দুই মাসে ধরেই বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের বেশি।
এডিমন গিন্টিং জানান, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় এবং জ্বালানি-সঙ্কটের কারণে এ বছর কাক্সিক্ষত হারে বিনিয়োগ হবে না। ধীরগতি দেখা দেবে সরকারি বিনিয়োগেও। এ অবস্থায় রাজস্ব আদায় বাড়াতে সরকারকে তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
এ ছাড়া ৬ দশমিক ৬ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধিকে ‘ভালো’ মনে করেন তিনি। সরকার চলতি অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছে। আর গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশে আটকে রাখতে চেয়েছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় বাংলাদেশে। গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ।
এডিমন গিন্টিং আরও বলেন, রফতানি আয়ে বৈচিত্র্য আসছে। কৃষি ও ওষুধ খাতে বছরে ১০০ কোটি ডলারের বেশি রফতানি হচ্ছে। প্রবাসী আয়ও বাড়ছে। আমি মনে করি, রফতানি খাতে বৈচিত্র্যই অর্থনীতিকে টেকসই করে। যেহেতু প্রবৃদ্ধি দেশের ভেতর থেকেই হতে হবে, তাই বেসরকারি খাতের বিকাশ প্রয়োজন।
এতে এডিবির সিনিয়র কান্ট্রি স্পেশালিস্ট সুন চ্যাঙ হং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এ ছাড়া বক্তব্য দেন এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং। বর্তমান বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ প্রেক্ষাপটে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নতুন চ্যালেঞ্জ বলে মনে করে এডিবি।
একই সঙ্গে গড় মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ হবে বলে জানিয়েছে ম্যানিলাভিত্তিক এই উন্নয়ন সংস্থা। সংস্থাটির ধারণা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়বে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন