ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ছাত্রদলের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। এতে ছাত্রদলের অন্তত ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আহতরা কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালসহ রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলায় আহত ছাত্রদল নেতাকর্মীরা হলেন- ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল, সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল আমিনুল, মো. মাসুম বিল্লাহ, ফারহান মো. আরিফুর রহমান, মো. নাছির উদ্দীন শাওন, মো. রাজু আহমেদ, সুপ্রিয় দাশ শান্ত, নাজমুস সাকিব। সহ সাধারণ সম্পাদক মুন্সি সোহাগ, প্রচার সম্পাদক ইমাম আল নাসের মিশুক, আন্তর্জাতিক সম্পাদক জসিম খান, বিজয় একাত্তর হল ছাত্রদলের সিনিয়র সহ সভাপতি সাইফ খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আকিব জাভেদ রাফি ও কবি জসীমউদ্দিন হল ছাত্রদলের কর্মী জোসেফ আল জুবায়ের ছাত্রদল।
জানা যায়, একই দিনে এক ঘন্টার ব্যবধানে দুটি সংগঠন (ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামানের সাথে দেখা করা নিয়ে এই ঘটনা ঘটে। ঢাবি ছাত্রদলের একাধিক নেতাকর্মী জানায়, মঙ্গলবার বিকেলে পূর্বনির্ধারিত সময় (বিকেল ৪টা ৩০) অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার জন্য ঢাবি শাখা ছাত্রদলের নবগঠিত ৫০ থেকে ৬০ জন নেতাকর্মী বিশ্বিবদ্যালয়ের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ গেটে একত্রিত হতে থাকে। এসময় ৪ টা ২০ মিনিটের দিকে এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে ৩০০ থেকে ৩৫০ জন ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উপর হামলা করে। এতে ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলামসহ অন্তত ১৫ জন গুরুতর আহত হয় এবং বাকি সবাই হামলার শিকার হই।
তবে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবাই আসতে পারে। ছাত্রদলও আসবে। কিন্তু তাদের উপর কে বা কারা হামলা করলো তার দায়ভার কেনো ছাত্রলীগের উপর পড়বে? ওরা সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনগণের রাস্তা বন্ধ করেছিল এজন্য তারা ওদের প্রতিহত করেছে। ছাত্রলীগ এখানে জড়িত নেই। সনজিত বলেন, আমি শুনেছি তারা (ছাত্রদল) নাকি ৬ টি উপদলে বিভক্ত। দলীয় অভ্যন্তরীন কোন্দলের কারণেও তো হামলা হতে পারে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, সব বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকে না। আমরা এ ঘটনায় কারা সম্পৃক্ত তা বিস্তারিত জানার পর যদি ঘটনা আমাদের অধীনে থাকে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অপকর্ম আড়াল করতে হামলা: ঢাবিতে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের ক অস্ত্র ও লাঠি সোটা দিয়ে হামলাকে ন্যাক্কারজনক এবং অগণতান্ত্রিক আখ্যা দিয়ে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিশেয়ন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)। সংগঠনের প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব প্রফেসর ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, ঢাবি শাখা ছাত্রদলের নবঘোষিত কমিটির নেতৃবৃন্দ ঢাবির ভিসির সাথে পূর্বনির্ধারিত সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতিতে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে ছাত্রলীগের উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মীরা ছাত্রদলের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় ছাত্রদলের অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।ইউট্যাব নেতৃদ্বয় বলেন, ঢাবি হলো মুক্তবুদ্ধি চর্চার প্রধান কেন্দ্র। ঢাবি ছাত্রদলের নতুন কমিটির নেতৃবৃন্দ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে কথা বলেই ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছিল। কিন্তু ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা প্রবেশপথেই ছাত্রলীগের দুষ্কৃতিকারীরা রড, পাইপ ও লাঠি-সোটা নিয়ে একযোগে অতর্কিত আক্রমণ করে বেধড়ক মারপিট করে। ছাত্রদলের অনেক নেতাকর্মী রক্তাক্ত হয়েছেন। যা অগণতান্ত্রিক এবং ন্যাক্কারজনক। তারা বলেন, ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এড়াতে পারেনা। এ ঘটনায় প্রক্টরিয়াল বডি ব্যর্থতার প্রমাণ দিয়েছে। তারা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। ছাত্রলীগকে বিরোধীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। আজকে ছাত্রলীগের ইডেন কলেজ শাখা যখন নিজেদের অন্যায় অপকর্মের মুখোশ উন্মোচন করছে তখন সেই ঘটনাকে আড়াল করতে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে ছাত্রলীগ। ##
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন