শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বালাগাল উলা বিকামালিহি কাসাফাদ্দোজা বিজামালিহি

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১১ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

আজ রবিউল আউয়াল মাসের বার তারিখ। এই মাসে এবং উল্লেখিত তারিখে পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা:) পবিত্র মক্কা মোয়াজ্জমায় মহীয়ষী মা আমেনার কোলে আগমন করেছিলেন। তাঁর জন্মতারিখ নিয়ে সামান্য কিছু মতভেদ থাকলেও জন্মদিনটি সোমবার, জন্ম মাসটি রবিউল আউয়াল, জন্ম সনটি পাঁচ শত সত্তর খ্রিষ্টাব্দ বা একাত্তর খ্রিষ্টাব্দ এবং তারিখটি আট রবিউল আউয়াল থেকে বার রবিউল আউয়াল এর মধ্যে কোনো একদিন, এতে কারো দ্বিমত নেই। তবে বারই রবিউল আউয়াল তারিখের বর্ণনাই অধিক মশহুর।

আদি ও প্রাচীনকালে সাল গণনার বিভিন্ন প্রদ্ধতি চালু ছিল। হযরত আদম (আ:) এর পৃথিবীতে অবতরণের পর ‘লুবুতি সন’ এবং হযরত মূসা (আ:)-এর আমলে ‘ইসরাইলী’-সন ও হযরত ঈসা (আ:)-এর আমলে ‘ঈসাই’ সন গণনার প্রবর্তন ঘটেছিল। এগুলোর উৎস অবলম্বন করার মধ্যে কিছু বেশকম ও তারতম্য লক্ষ করা যায়। এ কারণেই রাসূলে পাক (সা:)-এর জন্ম তারিখটি নিয়ে সামান্য মতপার্থক্য লক্ষ করা গেলেও বার তারিখটিকে প্রাধান্য দেয়া হয়। কারণ, ‘নূরে মোহাম্মদ (সা:)’ আল্লাহ পাকের প্রথম সৃষ্টি। এই নূর আত্মপ্রকাশ করে সর্বপ্রথম বাণী উচ্চারণ করেছিলেন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। এই বাণীর অক্ষর সংখ্যা বার। এ বাণী রাসূলে পাক (সা:)-এর বনী আদম হিসেবে পৃথিবীতে আগমন করার তারিখটিও বার সংখ্যার স্মৃতিধন্য হয়ে রয়েছে।

শায়খ তকীউদ্দিন খুবকী (রহ:) তাঁর রচিত তকমীর গ্রন্থে আল কোরআনের ৩ নং সূরা আলে ইমরানের ৮১ নং আয়াত ‘লাতুমিনু ন্না বিহি ওয়ালাতান্ছুরা ন্নাহু’ (অর্থাৎ তোমরা অবশ্যই তাঁর (মোহাম্মদ সা:) ওপর ঈমান আনয়ন করবে এবং তাঁর সাহায্য করবে) অংশটুকুর ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, এখানে রাসূলে পাক (সা:)-এর মহান মাহাত্ম্যের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে এবং ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, যদি রাসূলে পাক (সা:) পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের যমানায় আবির্ভূত হতেন তাহলে তিনি সেই নবী-রাসূলদেরও নবী হতেন। কেননা, তার নবুয়ত ও রিসালত সমগ্র জগৎ ও যুগব্যাপী পরিব্যাপ্ত। এ জন্যই তিনি ঘোষণা করেছেন যে, আমি কূল মাললুকাতের জন্য নবীরূপে আবির্ভূত হয়েছি। এই কূল মাখলুকাত বা সমগ্র সৃষ্টি বলতে শুধু ভবিষ্যৎ সৃষ্টিই নয়, বরং এতে পূর্ববর্তী সৃষ্টিও অন্তর্ভুক্ত এবং এ কারণেই তিনি এরশাদ করেছেন যে, আমি সে সময়ও নবীরূপে বিরাজমান ছিলাম যখন হযরত আদম (আ:)-এর মাটির তৈরি দেহটি রূহ বা আত্মামুক্ত অবস্থায় ছিল।

কিছু সংখ্যক জ্ঞানী ব্যক্তি এই হাদিসটির ব্যাখ্যা এভাবে করেছেন যে, রাসূলে পাক (সা:) আল্লাহ পাকের অত্যন্ত জ্ঞানের মধ্যে তখনও নবীরূপে বিরাজমান ছিলেন। কিন্তু আমাদের মতে এই ব্যাখ্যা যথার্থ নয়। কেননা, আল্লাহ পাকের অনন্ত জ্ঞান তো যাবতীয় বস্তু ও ঘটনাকেই পরিবেষ্টন করে রেখেছে। হযরত আদম (আ:)-এর সৃষ্টির সময়ে রাসূলে পাক (সা:)-এর নবুয়তের বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করা শুধু আল্লাহ পাকের জ্ঞানের পরিধি বর্ণনা করার জন্য নয়, বরং এরূপ বলার উদ্দেশ্য হলো এই যে, রাসূলে পাক (সা:)-এর নবুয়ত সেই সময়েই বরকতপ্রাপ্ত ছিলেন। আর এ জন্যই হযরত আদম (আ:) তাঁর চক্ষু যুগল উন্মিলন করেই আরশে মুয়াল্লায় ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ কালামটি লিপিবদ্ধ দেখতে পেয়েছিলেন। এর দ্বারা বোঝা যায় যে, শুধু রাসূলে পাক (সা:)-এরই একক বৈশিষ্ট্য ছিল যে, সকল নবীর অগ্রে তাঁকে নবুয়তের মর্যাদায় ভূষিত করা হয়েছিল। তারপর বিশেষ গুরুত্বের সাথে এই মাহান বৈশিষ্ট্য ঘোষণা করা হয়েছে। যাতে তাঁর উম্মতগণ তাঁর শ্রেষ্ঠতম মর্যাদার পরিচয় লাভ করতে পারে, যা তাদের জন্য বরকত ও কল্যাণের হয়। তাইতো জনৈক দরদী কবি গেয়েছেন:

“জালওয়া গার হো ইয়া ইমামাল মুরসালীন,
জালওয়া গার হো রাহমাতাল্লিল্ আলামীন।
জালওয়া গার হো আম্বিয়া কে মুকতাদা,
জালওয়া গার হো আওলিয়াকে পেশোয়া।
জালওয়া গার হো সাইয়্যেদে খায়রুল বাশার,
জালওয়া গার হো আয় মেরে নূরে নাজার।
জালওয়া গার হো গমযাঁদুকে দস্তেগীর,
জলওয়া গার হো হাদীয়ে রওশন জমীর।”

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন