দেশে যুগপৎ আন্দোলনের সূচনা হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, এই আন্দোলনের লক্ষ্য একটাই, শেখ হাসিনা সরকারের পতন। তিনি বলেন, যুগপৎ আন্দোলন শুধু বিএনপির নয়, এই আন্দোলন দেশের প্রতিটি মানুষের। এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নেবে, তারা বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে। আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, যারা জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে, তারা আওয়ামী সন্ত্রাসী হোক, অথবা অতি উৎসাহী সরকারি কর্মকর্তা হোক অথবা যেই হোক, সবাইকে দেশের জনগণ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর পল্লবীতে কালশি বালুর মাঠে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, লোডশেডিং, গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে দলীয় নেতা নুরে আলম, আব্দুর রহিম, শাওন প্রধানের হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা মহানগরীর ১৬টি স্পটে ধারাবাহিক সমাবেশের অংশ হিসেবে মহানগর উত্তর বিএনপির পল্লবী জোনের আয়োজনে এই প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
আমির খসরু বলেন, যুগপৎ আন্দোলনে দেশের প্রায় সব দল একটি লক্ষ্য ঠিক করেছে। সেটা হলো ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন। আর একটি লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ তাদের প্রতিনিধি, সংসদ, সরকার নির্বাচন করবে। যে সরকার বাংলাদেশের মানুষের কাছে জবাবদিহি থাকবে।
তিনি বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি যারা দেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে তার মধ্যে প্রধান ব্যক্তি হচ্ছেন শেখ হাসিনা এবং তার কিছু দোসর। আমি এটাকে সরকার বলি না, এটা একটা রেজিম। রেজিমের অর্থ হলো একটি অনির্বাচিত লোক যখন দেশের জনগণকে বাইরে রেখে ক্ষমতা দখল করে অব্যাহতভাবে ক্ষমতা চালাতে চায় তার সঙ্গে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ যোগ দেয়, কিছু অসাধু সরকারি কর্মকর্তা যোগ দেয়, কিছু অসাধু সুশীল সমাজ যোগ দেয়। এদেরকে আমি বলি উচ্ছিষ্ঠভোগী। সরকারের চুরির উচ্ছিষ্ঠ খাওয়ার জন্য এরা ঘুর ঘুর করছে। এদের ওপর আমাদের চোখ রাখতে হবে, চিহ্নিত করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের কথা বলছেন, অনেকে ইভিএমের কথা বলছেন, ভোটে যাওয়া-না যাওয়ার কথা বলছেন। ওনারা কিন্তু দুঃস্বপ্ন দেখছেন। ওনারা ভাবছেন এসব বলতে বলতে বোধহয় নির্বাচনের দিন পার হয়ে যাবে। না, ওই গান এবার আর চলবে না।
২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিগত দিনে আমাদেরও দোষ ছিল। এরকম একটা নির্বাচন করার সুযোগ আমরাই তাদের দিয়েছিলাম। এতে আমাদের নেতাকর্মীরা কষ্ট পেয়েছেন, প্রাণ দিয়েছেন, জেলে গেছেন। দুর্বৃত্তায়ন করে আরেকটা নির্বাচনের সুযোগ দেওয়া হবে না। এবার যারা সেই স্বপ্ন দেখছেন, তা বৃথা স্বপ্ন। এই স্বপ্ন পূরণ হওয়ার মতো নয়।
ইভিএম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি প্রথমে একটি সাবধানতা উল্লেখ করতে চাই তাদের প্রতি (নির্বাচন কমিশন)। বাংলাদেশের ৪০ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে চলে গেছে। আজকে দুই বেলা খেতে পারছেন না। বিদ্যুতের বিল দিতে পারছেন না, গ্যাসের বিল দিতে পারছেন না, খাদ্যপণ্য কিনতে পারছেন না।
আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা রাস্তায় নেমে গেছে। আমাদের আস্থা জনগণের ওপর। এ লাখো জনতার সামনে যারা দাঁড়াবেন, তারা ভেসে যাবেন। জনগণের জোয়ারে তারা ভেসে যাবেন। আমার শেষ কথা- রাস্তায় নেমেছি, বাড়ি ফিরে যাবো না। যেদিন বাড়ি ফিরবো, সেদিন স্বাধীন বাংলাদেশ করে বাড়ি ফিরে যাবো। তার জন্য যত প্রাণ দিতে হয় দেবো। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে জাতীয় সরকার গঠন করে ‘রাষ্ট্র সংস্কার’ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। সঞ্চালনা করেন সদস্যসচিব আমিনুল হক।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সাইফুল আলম নিরব, মহানগর দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের ইয়াসীন আলী, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমুখ।###
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন