রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জন্মের পরই দেওয়া হবে এনআইডি

ইসি থেকে এনআইডি যাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সরকারিভাবে পণ্য আনতে আগেই ভ্যাট-ট্যাক্স পরিশোধের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর মিথেন গ্যাস কমাতে বৈশ্বিক অঙ্গীকারে যাচ্ছে বাংলাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

জন্মের পরই জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়ার বিধান রেখে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন, ২০২২’র খসড়া শর্ত সাপেক্ষে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। একই সঙ্গে এ আইন অনুযায়ী এনআইডি সেবা নির্বাচন কমিশন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের কাছে দেয়া হচ্ছে। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ আইন অনুমোদন দেয়া হয়। ক্ষতি এড়াতে সরকারিভাবে কোনো পণ্য বিদেশ থেকে আনার আগেই ভ্যাট ও ট্যাক্স পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে জানান তিনি।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আগের আইনটি (জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন, ২০১০) ২০১০ সালের। সেই অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের কাছে ছিল। নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে এটা সরকারের কাছে নিতে চাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের কাজ ভোটার আইডি নিয়ে শুরু হয়েছিল, পরবর্তী সময়ে এটা এনআইডি হিসেবে রূপান্তর করা হয়। তখন বেসিক কনসেপ্ট ছিল নির্বাচন সংক্রান্ত। কিন্তু পরবর্তী সময়ে যখন এনআইডিকে রূপান্তর হলো তখন এটার সঙ্গে অন্যান্য কর্মসূচি যোগ করে দেওয়া হলো। দেখা যাচ্ছে এ জন্য এটা (এনআইডি) নির্বাচন কমিশনের চেয়ে বেশি প্রয়োজন হলো সরকারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে থাকা। কারণ নির্বাচন কমিশন সবক্ষেত্রে সরকারের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত নয়। সেজন্য সিদ্ধান্ত অনুযায়ী (এনআইডি সেবা) সুরক্ষা সেবা বিভাগে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যারা পাসপোর্টটা হ্যান্ডেল করে। তিনি বলেন, এখন আলটিমেটলি একটা ইউনিক আইডিতে চলে যাচ্ছে। মন্ত্রিসভা বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে। আমি ওই জাতীয় একটা কমিটির সভাপতি, সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে। জন্মের সাথে সাথে যে রেজিষ্ট্রেশনটা হবে, আলটিমেটলি আজ থেকে ৫/৬ বছর পর ওই নম্বরটাই সব জায়গায় যাবে। সেজন্য পাসপোর্টের সঙ্গে একটু সিনক্রোনাইজ করে জন্মের সময় নম্বরটা দিয়ে দেওয়া হবে। আমাদের (বয়স্কদের) ক্ষেত্রে এটা পারা যাবে না, আমরা আমরা তো ইতোমধ্যে জন্মগ্রহণ করেছি। আগামী হয়তো তিন-চার বছর পর জন্মের সাথে সাথে তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট, চোখের দৃষ্টি, মুখচ্ছবি সবাই দিয়ে দেওয়া হবে এবং মডিফিকেশন হবে। আমরা বয়স্ক আমাদের মডিফিকেশন লাগবে না, আমাদের একবার দিলেই হবে। এ জন্য এটা সুরক্ষা সেবা বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে। মন্ত্রিসভা খসড়া আইনটি পর্যালোচনা করা দরকার মনে করে।
খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, কারণ আগের আইনে ৩২টি ধারা ছিল, সেটা থেকে কমিয়ে ১৫ করা হয়েছে, অনেকগুলো ধারা বাদ দেওয়া হয়েছে। সেগুলোতে মন্ত্রিসভা সম্মত হয়নি। এটাকে রিভিউ করার জন্য। একটা উদাহরণ দিই- ৬ বা ৭টি অপরাধের জন্য আলাদা আলাদা দণ্ড ছিল, এ আইনে সবগুলো একসাথে করে সাজা সাত বছর কারাদণ্ড করা হয়েছে। ছোট অপরাধের জন্য তো সাত বছরের কারাদণ্ড হবে না। সেজন্য এগুলোকে আলাদা করে রেখে দিতে হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আরও কিছু বিষয় ছিল। যেমন Ñঅন্যান্য কাজেও এনআইডি ব্যবহার করা যাবে। এ ধারাগুলো নতুন খসড়ায় বাদ দেওয়া হয়েছে। সেজন্য মন্ত্রিসভা বলেছে, এগুলোকে পর্যালোচনা করে আগের যে ৩২টি ধারা সেই অনুযায়ী করে, যদি দরকার হয় দু-একটি ধারা বাদ বা যোগ করার দরকার হয় সেটা হয়, সেটা ভিন্ন বিষয়। এটা নিয়ে লেজিসলেটিভ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ডেকে আমাদের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সঙ্গেও কথা বলে এটাকে যথাসম্ভব ওই ৩২টি ধারার মতো আইন করতে বলা হয়েছে।
সরকারিভাবে পণ্য আনতে আগেই ভ্যাট-ট্যাক্স পরিশোধের নির্দেশ
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ট্যাক্সসহ বিভিন্ন বিষয়ে আমরা অনেকেই সচেতন থাকি না। সরকারি বিভিন্ন দফতর মালামাল আনার সময় ইনকাম ট্যাক্স বা সিটি ভ্যাট পরিশোধ করে না। সেক্ষেত্রে মালামাল শিপিংয়ে আনলোড করা যায় না। আবার অনেক সময় আনলোড করলেও পোর্টে পড়ে থাকে। বিশেষ করে শিপ থেকে যদি আনলোড না করা যায় কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স না দিলে তো পোর্ট ডিক্লিয়ার করবে না। তখন প্রতিটা শিপকে ২০ থেকে ৩০ হাজার ডলার ডেমারেজ (ক্ষতিপূরণ) দিতে হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, এ বিষয়টি নিয়ে কেবিনেট সচিব সবাইকে নিয়ে বসে বিষয়টি ক্লিয়ার করবেন। যাতে ইনকাম ট্যাক্স বা ভ্যাট যতটা দেওয়ার, তা যেন পণ্য অর্ডার দেওয়ার আগেই সম্পন্ন থাকে। আর কোনো ক্ষেত্রে জরুরি প্রয়োজন হলে, আমরা অনেক ক্ষেত্রে জরুরি জিনিস নিয়ে আসছি যেমন, পদ্মার ক্ষেত্রে জরুরি জিনিস নিয়ে আসছি। হয়তো জুলাই মাসের ৫ তারিখে। তখন নতুন বছরের অ্যালোকেশন পাওয়া যায় না। আমরা কিন্তু আগেই চিঠিতে একটা আন্ডারটেকিং দিয়ে দিয়েছি যে ১০০ কোটি টাকার মালামাল আসবে, এখানে ২০ কোটি টাকার সিটিভ্যাট রয়েছে। সেখানে আন্ডারটেকিং দিচ্ছি যে সিটিভ্যাট আমরা অ্যালোকেশন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দেবো। তখন কিন্তু ছেড়ে দেয়। কখনো আটকা পড়েনি।
তিনি বলেন, এ বিষয়টি ভালোভাবে দেখতে বলা হয়েছে, অবশ্যই যেন সব ক্ষেত্রে সিটিভ্যাট দেওয়া হয়। আর তাৎক্ষণিকভাবে জরুরি অনেক সময় কোনো প্রকিউরমেন্ট থাকে, সেক্ষেত্রে কোনো ডেমারেজ যেন দিতে না হয় এবং পোর্টে পড়ে না থেকে এ বিষয়গুলো ক্লিয়ার করে রাখতে হবে। এ সময় মন্ত্রী, সচিবসহ সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যদি কেউ জিওবি বা নিজস্ব টাকাতে বিদেশ যায়, সেক্ষেত্রে পিএমও থেকে পারমিশন নিতে হবে। এছাড়া কিন্তু বিল পাস করবে না অ্যাকাউন্টস। কিন্তু ফরেন এইডের আন্ডারে যদি যায় বা প্রকিউরমেন্টের বিষয়ে যদি কেউ যায়, যেমন ধরেন আপনি বড় ধরনের একটি মেশিনারি কিনবেন, তখন সেটা চালানোর জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়। সেটা প্রকিউরমেন্টের সঙ্গে খরচ ধরা থাকে। ওই ক্ষেত্রে অনুমতি দেওয়া আছে, সেটা আলাদা বিষয়।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ক্ষতিকর মিথেন গ্যাস নিঃসরণ কমাতে বৈশ্বিক অঙ্গীকারে যাচ্ছে বাংলাদেশও। এ জন্য বৈশ্বিক মিথেন অঙ্গীকার এ বাংলাদেশের যোগদানের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এখন সারাবিশ্ব থেকে পরিবেশবিদরা একটা মুভ (আন্দোলন) করছেন, বিশ্বের তাপমাত্রা যেভাবে বেড়ে যাচ্ছে, এভাবে বেড়ে গেলে বিশ্বকে ধ্বংসের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে। তিনটা সিনারিও তারা চিন্তা করছেন। একটা হল ৬ ডিগ্রি যদি বাড়ে, তাহলে তো কিছুই করার থাকবে না। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ইভেন ৪ ডিগ্রিও যদি বাড়ে, সেক্ষেত্রেও প্রায় ৮০ শতাংশ এরিয়া চলে যাবে। আরেকটা সিনারিও তারা বলছে, ২ ডিগ্রি ইনক্রিজ হওয়ার সম্ভাবনা। ২ ডিগ্রি ইনক্রিজ হলেও লো লাইন এরিয়াগুলো সমুদ্রের নিচে চলে যাবে এবং ব্যাপক ন্যাচরাল ডিজাস্টার হবে।
গুরুত্ব দিয়ে বিমা দিবস পালন করবে
তিনি বলেন, সরকার আরও গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় বিমা দিবস পালন করবে। এজন্য জাতীয় বিমা দিবসকে ‘খ’ শ্রেণি থেকে ক শ্রেণির দিবস হিসাবে ঘোষণা ও দিবসটি উদযাপনের লক্ষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক জারি করা পরিপত্রের ক ক্রমিকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমাদের জাতীয় বিমা দিবস পালন করা হয় ১ মার্চ। সেটা ‘খ’ তালিকার মধ্যে ছিল। মন্ত্রণালয় বলছে এটার অনেক গুরুত্ব রয়েছে এটাকে ‘ক’ তালিকায় নিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, সভায় ‘জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (২০২৩-২০৫০)’ এর খসড়া অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করেছিল পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। তবে এটিকে যুগোপযোগী করতে ফেরত পাঠিয়েছে মন্ত্রিসভা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন